সুখে থাকুন

sukhe

কি চায় মানুষ? অনেক কিছু! কিন্তু সব চাওয়ার মূলে একটাই চাওয়া – সুখ।

ধরুন, দুজন মানুষ। একজন চায় চিকিৎসক হতে, অন্যজন কৃষক – নিজের বা পরের জমিতে। প্রথম জনের সুখের পথ মিলে গেছে চিকিৎসক হবার পথের সাথে। দ্বিতীয় জনের সুখের পথ কৃষি কাজে। যদি প্রশ্ন করি, কে বেশি বুদ্ধিমান? সম্ভবত অনেকেই জবাব দেবেন, প্রথম জন। যদি ঘুরিয়ে প্রশ্ন করি, সুখি হবার পথ খোঁজায় কে বেশি বুদ্ধিমান? আরেকবার ভেবে দেখবেন কি?

চাওয়া মানুষের সহজাত ধর্ম। পাওয়া তার ওপিঠ। বুকে যন্ত্রণা থাকলে পিঠ, বা পিঠে যন্ত্রণা থাকলে বুক সুখে থাকে কি করে! চাওয়াকে ভালবাসুন, তবে এমনভাবে যেন পাওয়াটা ঠিক অতটা ভালো না হলেও সহ্য হয়। তাই, মাঝামাঝি ধরনের চাওয়া সুখি হতে খুবই সহায়ক। কিন্তু তাই বলে কি পরম চাওয়া থাকতে নেই? বোধ হয় না থাকাটাই উত্তম। আর যদি থাকেই, তারও একটা সুন্দর হিসাব থাকতে হবে।

ধরুন আমি খুব ভালো গিটার বাজানো শিখতে চাই। হতে পারে এতে দশ বছর সময় লাগবে। এই দশ বছর গিটার শেখার সব কিছুই আমি উপভগ করবো। শেখার আনন্দে দশ বছর কাটানোর মজাটা হতে পারে বোনাস; অনেকটা এমন যে, জিত বা হার যাই হোক না কেন অংশগ্রহণের একটা পুরষ্কার থাকছেই। এরপর সাধনার ফলাফল আকাংখা মত হলে আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত সুখ, আর না হলে সাধনার আনন্দটাই হবে পাথেয়। কিন্তু কি হবে যদি বিশ্বের এক নম্বর গিটার বাদক হতে চাই? হয়ত সময় সেই একই লাগবে, কিন্তু তা হবে প্রত্তিক্ষা আর আশংকার; আর পরিশেষে ফলাফলটাও ভীষণ ভারী, সব অর্থেই ।

তাই, কেউ সুখি হতে সুদীর্ঘ পথে হাঁটা শুরু করলে তাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে সেই সুদীর্ঘ পথটাও উপভোগ্য হওয়া চাই – শুধু পরিনতিটা নয়। ভাবুন কোন একজন শিল্পীর কথা যে চূড়ান্ত সফল হতে চায়। পথটা হয়ত সে উপভোগ করতেও পারে প্রচণ্ড উত্তেজনা আর আতংক নিয়ে । তারপর যদি সফল হয় তাহলে চরম সুখের আবেশে থাকবে কয়েটা বছর, তারপর ধীরে ধীরে এক ঘেয়ে হয়ে যায় সেই চরম অবস্থান । এরপর পরিবর্তন সহজ ভাষায় নিচে নামা, আর স্থায়ীভাবে পরিবর্তনহীন হলে তো কথাই নেই – জীবন থাকতেই মৃত্যুর মত, আর মৃতের সব অর্জনই প্রায় অন্যের ! তাই, সফলের চেয়ে বিফল হলে তবু কিছু আশা থাকে – হতে পারে আরও ভালো কোন সুখের পথ সে ধরতে পারবে। ভাববেন কি অদ্ভুত কথা। সত্যি, পথটা উপভোগ্য অ্যান্ড দূর থেকে গন্তব্যের রূপ স্বর্গীয় মনে হলেও অনেক সময়ই গন্তব্য কাছে থেকে সেরকম নাও হতে পারে। সাবধান!!

নিজেকে প্রশ্ন করুন, শুধুই সুখী হতে চান, নাকি বিশেষ কিছুর মধ্যে দিয়ে সুখ খুঁজছেন? যদি শুধুই সুখ চাই আপনার, তাহলে সন্তুষ্ট থাকার প্রশিক্ষণ নিন আর নিজের দিকে খেয়াল রাখুন; দেখবেন অনেক কম ঝামেলাতেই আপনি সুখি মানুষ। আর যদি কোন গন্তব্যের মধ্যে দিয়ে সুখি হতে চান, যা অনেকেই চায়, তাহলে ভেবে রাখুন দুটো জিনিসঃ

১) যে পথ পারি দিতে চান, তা ফলাফল ছাড়াই কততুকু উপভগ করতে পারবেন

২) যে পরিণতিতে পৌঁছতে চান, তা কতটুকু স্থায়ী

পথটা যদি ভালো লাগে আর সুখের পরিণতি যদি ক্ষণস্থায়ী না হয় তাহলে নেমে পড়ুন। সফল বা বিফল যাই হউন না কেন, ভালো থাকবেন, আর সফল হলে কাঙ্ক্ষিত সুখটাও পাবেন। তবে সাবধান, উপরের দুটোর যে কোন একটার অনুপস্থিতি আপনাকে অসুখি করে তুলতে পারে, কোন সন্দেহ নেই। আরও মনে রাখতে হবে, সুখ খুবই ব্যাক্তিগত ব্যাপার; তাই নিজে জানুন এবং ভাবুন। অন্য কেউ আপনাকে ভেবে দিলে বিপদ হবার সম্ভবনাই বেশি। না জানলে বা বুঝলে, আরও কিছু অপেক্ষা করুন জানতে বা বুঝতে। এখন বেছে নিন আপনার জীবনের পথ, আর সুখে থাকুন।

Leave a comment