
১৯৮১ সালে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হলাম আইডিয়াল হাই স্কুল এ। ভর্তির মৌখিক পরিক্ষায় ‘য়’ কে ‘ক’ বলেও খুব সমস্যা হলনা। সুস্বাস্থ্য থাকা এক বন্ধু ক্লাস চলাকালীন বেঞ্চে বসেই প্রকৃতির বড় ডাকে সাড়া দিল – এ ছিল স্কুলের প্রথম স্মরণীয় ঘটনা। তারপর অনেক স্মৃতি। আমরা কয়েকজন কবিতার মত করে বার্ষিকে রেজাল্ট করতাম। ১, ২, ৩, ৪, ৫ ইত্যাদি ছিলাম আমরা আমরাই – হয়ত এ বছর কেউ আগে, কেউ ও বছর। স্কুলের নিয়ম মেনে ক্লাসে রোল অনুসারে বসতে হত। ফলে কম পক্ষে স্কুলের প্রথম ছয় বা সাত বছর একই কাঁদির কলা হিসাবে কাটিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। তারপর যে যার মত হতে শুরু করি। মাইনুল হোসেন খান আমার জন্য ছিল সুমন; আর সৈয়দ মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন ছিল কল্লোল। ছেলে বেলায় সুমন চশমা চোখে চুলে ঝাঁকি মেরে বল নিয়ে ছুটত। আর আমি আর কল্লোল অবসর কাটাতাম পাশ্চাত্যের গানের ঝাপিতে গড়াগড়ি করে। কল্লোলকে মাঝে মাঝে দেখা যেত জিন্স প্যান্টের ওপর বলপেনে ইংরেজি রক ব্যান্ডের নাম লেখে স্কুলে ঘোরাঘুরি করতে। আমিও একই চেষ্টা করেছি কল্লোলের মত, তবে প্রিয় টিভি সিরিজের নাম গেঞ্জির ওপর লিখে। কপাল খারাপ, ইংরেজি বানান বিভ্রাটের জন্য “ফল গাই” হয়ে গেলো “ফুল গু”। তাই আমি আর বেশি দূর আগাতে পারিনি। ম্যাট্রিক পাশের পর তিন জনই ঢাকা কলেজে পড়েছি। কিন্তু তিন জন দুই রকমের পথে। কল্লোল বেছে নিল বানিজ্য শাখা, আমি আর সুমন বিজ্ঞান। কল্লোলের সাথে আমাদের প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টার যোগাযোগটা বোধ হয় ক্লাস এইট থেকেই একটু কমে গিয়েছিল স্কুল ভিত্তিক নানা কারণে। যখন আমরা ঢাকা কলেজে পড়ি, কল্লোল তখন গান লেখে, গায় আর বড় চুল রাখে। সুমনেরও বাবড়ি চুলের সখ ছিল, তবে ম্যাট্রিকের পরপরই। আর আমার চুলে বরাবরি টাকের ভাব, তাই ওসব আমার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমরা আরও ছড়িয়ে পড়লাম। মজার ব্যাপার, ক্লাস টু’র পর সুমনের সাথে সব সময়ই যোগাযোগ ছিল, কিন্তু কল্লোল কে স্কুলের পর আর খুব একটা সামনা সামনি দেখতাম না। প্রায়ই মনে মনে খুঁজেছি সেই ১৯৯১ সালের পর থেকে।
সংসার জীবনে ঢুকে তিনজন আরও ছড়িয়ে পড়লাম। তিন জনই প্রবাসে, তিন ভিন্ন দেশে। কল্লোলকে ১৯৯১ এর পর আসলে আমি খুঁজে পাই ২০২০ সালে। এক অলস দুপুরে কল্লোল কে স্বপ্নে দেখে ছেলেবেলার কথা খুব মনে পড়ল আমার। শেষ বারের মত কল্লোলকে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত এলো ফেস বুক দিয়ে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কল্লোল কে খুঁজে পেলাম, ৩ দিনের মধ্যে ফেস বুক ফ্রেন্ড। সাথে সাথে সুমনকে জানালাম। কল্লোলও সুমনের সাথে যোগাযোগ করল। ভাইবার এ গ্রুপ বানালাম তিনজন। কল্লোলের সৈয়দ, আমার সামির আর সুমনের খান মিলিয়ে গ্রুপ এর নাম হল সৈয়দ সামির খান। আর পায় কে। খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত হল বাংলা লেখার ব্লগ পেইজ করব। নাম ঠিক হল ত্রিভুজ। আমার বউ নাম শুনে বলল, মনে পড়ে যায় ত্রিভুজ প্রেমের কথা! কোন রকম অপমান হজম করে লেখায় ঝাপিয়ে পড়লাম!! তারপর আর থামায় কে, রাখে আল্লাহ মারে কে!!
