###পথের খোঁজে##০২#

##০২##16453809171_b29f4d24b6_o

নাজমা আপা খুব আস্তে করে সালামের জবাব দিলেন। তারপর একদম চুপ। মিশার বুঝতে দেরী হোলনা নাজমা আপার মন অথবা মেজাজ  ভালো নেই। কিছু মানুষ থাকে যাদের দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়- সেরকম মানুষ নাজমা আপা। কিন্তু তার মন  খারাপ দেখে ঠিক কী করা উচিৎ সেটা যখন ভাবছিল মিশা, ঠিক তখনই বাবা – মা সামনের চেয়ারে এসে বসলেন। মায়ের অনুরোধে মিশা চা নাস্তা বানাতে চলে গেল।

মিশার বাবা মা আর নাজমা আপা কথা বলছেন। প্রথমে কেমন আছেন- ভালো আছি টাইপের কথা দিয়ে শুরু হবার পর এক পর্যায়ে নাজমা আপার মন খারাপের কারন টা বের হোল।  এরই মধ্যে মিশা চা আর ইন্সট্যান্ট ন্যূডলজ বানিয়ে নিয়ে এসেছে। সব সময়ের মতো সে নিজেও বসেছে একটা মোড়া নিয়ে।

নবম শ্রেনীর এক ছাত্রী নাজমা আপাকে এমন এক প্রশ্ন করেছে  যার সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি। এ জন্যই তার মেজাজ একটু খারাপ; এখন অবশ্য সেটা মন খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে; কেমন অসহায় মনে  হচ্ছে  নিজেকে। ছাত্রী জিজ্ঞেস করেছে –

ছাত্রীঃ আপা, ইসলামে তো ব্যভীচার করা  নিষেধ ; আমার এক খালাতো ভাই বিদেশে থাকে, সে বলছে- ঊভয় পক্ষ সম্মতি দিলে সমস্যা কী?

নাজমা আপাঃ ঊভয় পক্ষ সম্মতি দিলেও সেটা হারাম- নিসিদ্ধ। এইটা কবীরা গুনাহ- এর মানে হইলো এমন গুনাহ যার শস্তি ভীষণ কঠিন। ইসলাম আসার আগে এর শাস্তি ছিল ম্ত্যু দন্ড ! আর তোমার  ওই ভাইকে বইলো – এই জিনিস খালি ইসলামেই মহাপাপ না – বাইবেল এবং  তারও আগে তাওরাতেও এইটা কঠিন পাপ বলা হইছে। মা, তোমারে একটা  কাহিনী   বলি, তাইলে বুঝবা। ঈসা নবী , যাকে খ্রীস্টানরা বলে যীশু – ঊনি একদিন তার সাথীদের নিয়ে বসেছিলেন। এক জন তাকে জিজ্ঞেস করলো- “হে যীশু আমরা যে লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে মহিলাদের দিকে তাকাই, সেটার কী হবে?” ঊত্তরে তিনি বললেন -” যে এমন কাজ করবে, তার উচিৎ হবে নিজ হাতে নিজের সেই দুই চোখ উপড়িয়ে ফেলা… সেইটা তার যে আজাব হবে- তার চেয়েও অনেক আরামের..” বুঝতে পারছো তাইলে ব্যভীচার কী ভয়ঙ্কর জিনিস! 

ছাত্রীঃ আপা,আপনি তো খালি শাস্তির ভয় দেখাইলেন। কিন্তু, যে ধর্ম মানে না – তার তো এইসব  শাস্তির ভয় নাই।। তাইলে তাকে ফিরাবেন কী বলে? আমার ওই ভাই- বিদেশ যাবার পর থেইকা মনে হয় না ধর্ম খুব একটা মানে। কিন্তু আমি তার সাথে যুক্তিতে পারতেছিও না। তাই আপনার কাছে আসলাম।  ধর্মীয় কিতাব গুলা খালি শাস্তির কথা বলে, কিন্তু খারাপ কাজ খারাপ কেন সেইটা তো বলে না! আমার ওই ভাই ধর্ম নিয়ে খালি হাসি তামাসা করে।। খালি ইসলাম না- সব ধর্ম নিয়েই।

নাজমা আপা ছাত্রীকে বলেছেন তার ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে -আল্লাহ যেন তাকে হেদায়েত দান করেন। কিন্তু নাজমা আপা মন থেকে প্রশ্ন গুলো সরাতেও পারছেন না। ক্লাশে ওই ছাত্রীকে দেখলেই তার আস্বস্থি লাগে; মেয়েটাকে সাহায্য করতে পারেন নি বলে -কিছুটা বেকায়দার মধ্যে পড়ে আছেন নাজমা আপা। মিশার বাবা-মা এর কাছে এসেছেন যদি কোনও উত্তর পাওয়া যায়… বিশেষ করে ওর বাবার কাছে। কিন্তু কাজ হয় নি!

এদিকে নাজমা আপার সমস্যার বর্ণনা শুনে মিশা নিজেও একটু ধাক্কা খেল – বিষয়গুলো নিয়ে সে কখনো ভাবে নি, অথচ ভাব্বার দরকার। কিন্তু সে আবার ভাবছে -এগুলো নিয়ে ভাবার জন্য তো তেতুল হুজুররা আছেন – ওয়াজগুলোতে খালি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র -ব্রিটেন- ইসরাইল -ভারত এবং নারী বিদ্বেষ ছড়ানো  ছাড়া   তারা আর কী করছেন??

প্রিয় নাজমা আপাকে সাহায্য করতে পারলে খুবই ভালো লাগতো তার।  নাজমা আপা চলে যাবার পর সে তার ঘরে গিয়ে আবারো জন স্টুয়ারট মীলের বই পড়তে শুরু করলো। কোনও বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তা করলে ঘুম এসে যায় তার। সে মীল সাহেবের বই পড়ছে- কিন্তু  ঠিক মনোযোগ আসছে না। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যভীচার  করা কেনো অনৈতিক কাজ ? এর ফীলসফিকাল কারন কী হতে পারে ??  ভাবতে ভাবতে তার মাথাটা  কেমন ভারী হয়ে আসছে ।। হয়তো ঘুমিয়ে পড়বে সে ….

চলবে…।

(পরের পর্ব প্রকাশিত হবেঃ ১৬/০৮/২০২০)

One thought on “###পথের খোঁজে##০২#

Leave a comment