ভয়

ভয়

আমরা আমাদের নানা অনুভুতি নিয়ে কবি সাহিত্যিকদের কাছ থেকে প্রতিদিনই নতুন নতুন সাহিত্য পাই। প্রেম, ভালবাসা, এমনকি ঈর্ষা। অথচ মানুষের জীবন জুড়ে ভালবাসার পরপরই যার রাজত্ব তা হল ভয়। এমনকি কোন কোন সময় যখন ভালবাসা অনুভূত হবার সুযোগ থাকে না, ভয় কিন্তু ঠিকই থাকে। কি এই ভয়, তার ব্যাখা না হয় মনোবিজ্ঞানীরাই দেবেন। কিন্তু কেমন এই ভয় তা নিয়ে আমরা কিছু আলচনা করতে পারি।

ভাবলে প্রথম যে ভয়টার কথা মাথায় আসে তা হল, সতর্কতার ভয়। যেমন, আমাদের ভয় থাকা ভাল যে, নিয়ম মেনে পথ না চললে দুর্ঘটনা হতে পারে। এ রকম ভয় বিশেষ করে তাদের জন্য দরকার যাদের নিয়মনীতির প্রতি ভালবাসা বা শ্রদ্ধা কম। তাই ভালবাসার অভাবে ভয়ের শক্তি বেশি, এটা মনে রাখা দরকার। যাহোক, ভয় নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলদের জন্যও কাজে লাগতে পারে, কিন্তু তখন যখন তারা অন্য কোন অনুভূতিতে ভারাক্রান্ত, যেমন অন্য কোন ভয়। যাহোক, এ প্রকারের ভয়ের মূল অর্থ হল – সতর্ক থাকাকে সর্বাধিক নিশ্চিত করা। কিন্তু যদি কেউ সতর্ক থাকার পরও ভয়ের শিকার হয়, তাহলে কি করতে হবে? অবশ্যই সেটা ক্ষতিকর ভয় এবং এটা নিয়েই মূলত আমরা আজ আলোচনা করব।

মানুষের ক্ষমতা যতই হোক না কেন, সীমিত। এটা যাদের মানতে সমস্যা হয় তাদের প্রয়োজন এ আলোচনা বাদ দিয়ে মানুষের সীমাবদ্ধতার দিকে আগে মনোযোগ দেয়া। তবে যদি তা না হয়, অর্থাৎ ভয়ে ভীত যদি মানুষকে সীমাবদ্ধ হিসেবেই মানেন, তাহলে এর পর লক্ষ্য করুন। যখন এই বাড়াবাড়ি বা ক্ষতিকর ভয় অনুভব করবেন, নিজেকে প্রশ্ন করুন, স্বাভাবিকভাবে যা যা করা উচিত ছিল তা করেছেন কিনা। উত্তর হ্যাঁ হলে ভাল, নাহলে কর্তব্য করে ফেলুন। এর পরও ভয় থাকলে প্রশ্ন করুন, স্বাভাবিক এর সীমার বাইরে কিছু করা কি স্বাভাবিক ছিল? থাকলে, তাও করে ফেলুন, যদি জানা থাকে সেটা কি। তারপরও ভয়? তাহলে মূল আলোচনায় আসি।

আমরা আমাদের ক্ষমতায় যা কুলায়, স্বাভাবিকভাবে তাই করতে পারি তার বেশি নয়। এরপরও ভয় থাকার সাধারণ অর্থ, আপনি আপনার কর্তৃপক্ষের ওপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না। ভাবুন, আপনি কি কাউকে আপনার জীবনের কর্তৃপক্ষ মানেন, না মানলে এ আলোচনা আর আপনার জন্য নয়। আর মানলে, প্রথম জানুন, যদি এটা কোন মানসিক ব্যাধির কারণে হয় তাহলে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। আর না হলে, নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার জীবনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ কে। সে যেই হোক না কেন, নির্ভরযোগ্য না হলে তা ভয়ংকর চিন্তার বিষয়। হতে পারে আপনি তাকে ভুল বুঝছেন, অথবা সে কর্তৃপক্ষ হবার যোগ্য নয়।

সমস্যা দ্বিতীয়টা হলে নতুন করে ভাবুন, আপনার দায়িত্ব সত্যিকার অর্থে কার ওপর, খুঁজে বের করুন তাঁকে। সত্যিকার দায়িত্বশীল কেউ আপনার কর্তৃপক্ষ না হলে এক মিনিটও টিকে থাকার কথা না আপনার এই বিচিত্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। আর যদি মনে করেন, আপনার কর্তৃপক্ষের কোন সমস্যা নেই, সমস্যা আপনার ভেতর, তাহলে কাজ শুরু করে দিন নিজের সাথে। সাথে নিন আপনার কর্তৃপক্ষকেও। বুঝিয়ে বলুন আপনার মনের অবস্থা, দেখবেন সব ঠিক, আর না হলে মধ্যবর্তী চিকিৎসাকেও সাথে রাখুন। মনে রাখবেন চিকিৎসক সব সময়ই আপনার জন্য মাঝামাঝি পর্যায়ের দায়িত্বশীল, তাকে এড়িয়ে যাওয়া হবে বোকামি।

সুখে থাকুন, ভাল থাকুন, ভয় মুক্ত থাকুন।

লিখেছেনঃ মো সামির হোসেন,

ব্যাক্তিগত ওয়েব সাইটঃ https://masterdeathanddying.com/

Leave a comment