অন্যরকম ভালবাসা, ১ম পর্ব

নতুন একটা বিষয়ে পড়ছে কনা। না পরীক্ষার জন্য নয়, নিজেকে জানার জন্য।দুই সন্তানের জননী কনা ইদানিং প্রায়ই পড়ে নিজেকে জানার জন্য। পড়তে গিয়ে এবার জেনেছে সে একজন সেপিওসেক্সুয়াল (Sapiosexual)মানুষ। সেপিওসেক্সুয়াল হল সেই ব্যাক্তি, যে অন্যের মেধা-প্রকৃতি দেখে আকৃষ্ট হয়, বাহ্যিক চেহারা দেখে নয়। ব্যাপারটা একটু অন্যরকম, তাইনা ? সাধারনত বাঙালি সমাজে আগে দর্শনদারী, পরে গুনবিচারী হয়ে থাকে। বেপারটা কিন্তু কনার বেলাতে একেবারেই উল্টা।

কনা দেখতে-শুনতে ভালো। শুধু ভালো বললে কম বলা হবে। রাজ্যসহ রাজকন্যা। বাবা-মার একমাত্র সন্তান আর দাদা জমিদার। স্বভাবতই পরিবারের চাওয়া ছিল, তার বর হবে রাজপুত্র, রূপে এবং অর্থে।

কনার কেন যেন সুন্দর কিম্বা ধনী ছেলেদের সতিকারের পুরুষালী মনে হত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ছাত্রী কনা খুব পোশাক সচেতন ও স্টাইলিশ ছিল, প্রায় পাংকু। ইউনিতে সিনিয়ারদের ফাঁদ পাতা শুরু হয়ে যায় একেবারে প্রথম থেকেই, তার সাথে ক্লাসমেটদের। লাভ হয়নি। ক্রিকেটের ভাষায়, প্রতি বলেই কনা  চার, ছয়, নো বল, ওয়াইড কিম্বা এক্সট্রা রান নিয়েছে, উইকেট পড়েনি। ঠিক তখন কনার ঘনিষ্ঠ ছিল রুমা, যে ছিল ইমনের ছাত্রী। ইমনকে দেখলেই রুমা চুপ হয়ে যেত আর বলত, ইমন ভাই মহাপুরুষ, অন্যরকম, উনি সামনে আসলে চুপ আর শান্ত থাকবি। খুব খেয়াল করল ছেলেটাকে কনা। তেমন রূপবান মনে হল না, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, লম্বা চিপ, তামাটে গায়ের রং আর এলোমেলো পোশাক। ভাবলো, সব ছেলেই এক। কিন্তু না, পরে দেখলো ইমন তার দিকে একবারও তাকায় না। রুমার সাথে কথা বলে ঠিকই কিন্তু কনাকে খেয়াল করে না। আর এটাই ছিল ইমনের বিরাট ভিন্ন দিক, অন্তত কনার চোখে। জীবনে কেউ একজন পেল কনা যে তার দিকে তাকাতে আগ্রহী না, এটা মানতে তার খুব কষ্টও হচ্ছিল। এদিকে রুমা সারাক্ষণ ইমনের সশ্রদ্ধ সুনাম করত, সম্ভবত তারও কিছুটা দুর্বলতা ছিল ইমনের প্রতি। পড়ালেখাতে ইমন বেশ তুখোড় ছিল। বেশ কিছু মেয়েদের দেখা যেত তার কাছে পড়াশোনা নিয়ে যেতে, কিন্তু ইমন ফিরিয়ে দিত নানা অসিলায়, কনার ভালোই লাগত।

কনা ইমনকে দিনে দিনে ভালোবেসে ফেলে তার মেধা, বুদ্ধি, প্রতিভা দেখে এবং এখনও প্রতিনিয়তই তা বাড়ছে। সে প্রথম ইমনের স্বভাব আর মেধাকে ভালবেসেছে, সেখান থেকে প্রেম ও বিয়ে। বলতে গেলে প্রেমের প্রথম ২/৩ বছর কনা ছেলেটিকে নাটক সিনেমার মত করে ভালবাসতেই পারনি, চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। কিন্তু তার পর ধীরে ধীরে ছেলেটাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছে কনা, কোন রকম চেষ্টা ছাড়াই।

দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেল কনা। ইমন অফিস থেকে ফিরেছে। এক্ষণই খাবার চাইবে, দেরি হলে রাগ। আর দেরি করলনা কনা। দরজার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো হাসি মুখে।

……………………..তিনা শুভ্র

Leave a comment