
আমরা বাঙালি, আর যাই করি, ভাতের মায়া ছাড়তে পারিনা। অথচ, ওজন কমানো বা ডায়াবেটিস এর কারণে আমাদের অনেক সময়ই ভাত খাওয়া কমাতে হয়, যা অবর্ণনীয় একটা দুঃখ। আজ আমি ভাত নিয়ে কিছু বলব, যা শুনলে বাঙালির হয়ত ভালো লাগবে।
মনের ওপর জোর করে খাদ্যাভাস বদলালে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, কিছু দিন করার পর সেটা বিরক্তিকর আর অসহ্য লাগে। তাই খাদ্যাভাস নিজের পছন্দের খাবার দিয়ে করা উচিত, যাতে মনে ফুর্তি থাকবে আবার তা দীর্ঘস্তায়ীও হবে। এক্ষেত্রে ভাত খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়া জরুরী নয়।
আমরা যারা ভাত প্রধান দেশের মানুষ, তাদের একটা বৈশিষ্ট্য হল, আমাদের শরীর ছোটবেলা থেকেই ভাতের সাথে অভ্যস্ত। আর শরীর সবসময় স্বাভাবিক নিয়মই পছন্দ করে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, পশ্চিমারা ভাত খায় খুবই কম কিন্তু অনেক স্বাস্থ্যবান। আর আমরা তিনবেলা ভাত খেয়েও ওদের চেয়ে অনেক সময় চিকন। কারন, আমাদের শরীর ভাতে অভ্যস্ত।
চাল সাধারণত তিন ধরনের হয়, চিকন ও লম্বা, মাঝারি এবং ব্রাউন বা লাল চাল। চাল হিসেবে আমি চিকন ও লম্বা (Long grain)কেই ভালো বলব, যদিও লাল চাল কে তার নিজ গুণেই আদর্শ ধরা হয়। কিন্ত দেখা যায়, লাল চাল আমরা অনেকেই খেতে পারিনা, বড় দানা, শক্ত ও গন্ধের জন্য। তবে যদি কেউ খেতে পারে, তাহলে তো দারুন ব্যাপার।
ভাতের ব্যাপারে আমাদের প্রধান ভয় হল কার্বোহাইড্রেট নিয়ে, আমাদের ধারণা ভাতে প্রচুর কার্ব থাকে যা ওজন বাড়ায়, বা ব্লাড সুগার বাড়ায়।
চিকন ও লম্বা চাল(Long grain) এ স্টার্চ বা কার্ব কম থাকে। যদিও long grain এ পুষ্টি কম, তবুও স্টার্চ বা কার্ব কম থাকার কারনে আমরা এই চালকে কাজে লাগাতে পারি। আর পুষ্টির জন্য অন্য খাবার তো আছেই। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের ভাত কে ছাড় দিব না। বরং পুষ্টির জন্য অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাবো।
মাঝারি চালে(short grain) স্টার্চ বা কার্ব বেশি থাকে, যা ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, এই চাল আঠালো হয়। চাল যত কম আঠালো, ততো কম স্টার্চ বা কার্ব। সেদিক দিয়ে long grain তেমন আঠালো নয়।
তাই আমাদের চাওয়া হবে, স্টার্চ কমিয়ে কিভাবে চাল রান্না করা যায়। চাল রান্নার আগে এজন্য ভালকরে কচলিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, যেন স্টার্চ অনেকখানি চলে যায়। আর বেশি পানি দিয়ে ভাত ফুটিয়ে, পানি ঝরিয়েও অনেকখানি স্টার্চ কমানো যেতে পারে।
যারা দেশের বাইরে থাকেন, তাদের জন্য বাসমতী চাল বেশ ভালো রকমের long grain চাল।
দিনে দুবেলা ভাত অনাহাসেই খাওয়া যাবে, তবে পরিমানমত। ভাতের সাথে অবশ্যই শাক, সবজি, মাছ, মাংস, ডাল, সালাদ খেতে হবে, নয়তো, ফলাফল হিতে বিপরিত হবে।
কোন বিশেষ সমস্যা বা রোগের জন্য সব সময়ই আগে ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হতে হবে।
……………………………ডাঃ তিনা শুভ্র
