কি করছেন এখন? অপেক্ষা করছেন পরবর্তী কাজটার জন্য? হয়তো কাজটা জীবিকা নির্বাহের, কিম্বা সমাজে সম্মানের। হয়তো লিখছেন এখন, আমার মত। সবাইকে পড়তে দেবেন চমৎকার সব চিন্তা ভাবনার কথা। সেখান থেকে হবে আরও কিছু; তার পর আরও কিছু। বড়ই ব্যস্ত আপনি সব মিলিয়ে। আরামের সময়ও কখনো কখনো ঠিক মত হয় না। আবার হয়তো সপ্তাহ শেষে যখন একটু অবসর মেলে, ছুটে চলেন আনন্দের পানে যতক্ষণ না ক্লান্তি আসে। তারপর নতুন সপ্তাহে নতুন করে পুরানো সব কাজ আবার শুরু হয়ে যায়। অপেক্ষা থাকে সপ্তাহ শেষের। দেখতে দেখতে তা চলেও আসে। চলে আসে আরেকটা নতুন সপ্তাহ। হয়তো যখন থেকে স্কুলে ভর্তি হয়েছেন, তখন থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহ কাটে সপ্তাহ শেষের অপেক্ষায়, অর্থাৎ প্রকারান্তে নিজেকে তুলে ধরতে চাচ্ছেন এক নতুন সপ্তাহের কাছে। ৫২ সপ্তাহ পেরিয়ে বছর, ১২ বছর পেরিয়ে যুগ, কয়েক যুগ পেরিয়ে নিজের অর্ধ শতের কাছাকাছি। হয়তো আরও অর্ধ শত বছর বাঁচলে ঠিক এই ভাবেই কেটে যাবে তাও। এবার থামুন। গভীর একটা দম নিন, তারপর ধীরে ধীরে দমটা ছাড়ুন। এবার নিচের কথা গুলোয় মনোযোগ দিন।
কি চেয়েছেন এতগুলো বছর? ভালবাসা, অর্থ, সম্মান, আনন্দ, আরাম, অবসর এবং আরও অনেক কিছু। তবে সম্ভবত চক্রাকারে । বার বার ফিরে এসেছেন একই রকম বিষয়ের দিকে, সেটা থেকে আরেকটা, তারপর আরেকটা। এই চক্রে আমরা ঘুরপাক খাই বেঁচে থাকতে, আবার বেঁচে থাকার কারনেও। পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কারোরই অনন্ত নয়; এটা জানার পরও দারুণ গতিতে জীবনের চাকা ঘুরিয়েই চলেছি আমরা। অনেকে বলবেন, চাকা একাই ঘুরছে। তাও মানি। কিন্তু মনের ভেতরের ইচ্ছাটা, তার কি হবে? নিজেকে প্রশ্ন করুন, এরকম দারুণ গতিতে চক্রাকারে ছুটে চলতে চান, নাকি এর চেয়ে ধির গতিতে দেখে চেখে চক্র পূরণ করতে চান? নিজের ইচ্ছাটা জানার পর তাকে মূল্য দিন।
ভাবছেন, আমার জীবনের মালিক আমি নই? ঠিকই। তবে যে তার মালিক সেই কিন্তু আপনাকে ইচ্ছা সহ তৈরি করেছেন। ইচ্ছা করা কোন নিষিদ্ধ কাজ নয়, যদিনা নির্দিষ্ট করে চিনিয়ে দেয়া ক্ষতি গুলোর দিকে এগিয়ে যান। আর যারা ভাবছেন, তাদের জীবনের মালিক তারাই, তাদের তো কথাই নেই। বরং লক্ষ্য করুন, বেশ কিছু অহেতুক দাসত্ব আমরা সেচ্ছায় বরন করে নেই। খ্যাতি, বাড়তি অর্জন, অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকা, আরও কত কি! কারো কারো জীবন তো একজন দাসের চেয়েও করুন, কারণ তাদের একাধিক মালিক – আসল মালিক, নকল মালিক এবং আরও অনেকে। জীবনকে উচু মানের লালন পালন করতে গিয়ে যার পিঠে ‘ছুট! ছুট!’ বলে কষাঘাত করছেন, সে আর কেউ না, আপনি নিজেই!
তাই বলছি, জীবনটাকে ভুল বুঝবেন না। আপনার নিজের পিঠে চাবুক মারা কখনই আপনার জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। হয়তো বলতে পারেন, বৃহত্তর কিছুর জন্য এটা করছেন। সে ক্ষেত্রে নিজকে প্রশ্ন করুন, কতটা বৃহৎ সে উদ্দেশ্য, আপনার জীবনের সমান, নাকি তার চেয়ে ছোট বা বড়। যদি তা এমন হয় যে পৃথিবীতে আপনার মৃত্যুর সাথে সাথে আপনি সে উদ্দেশ্যের সুবিধা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন, তাহলে খুব সাবধানে ভাবুন, এটা আপনার জীবনের মুহূর্ত গুলোকে সাধারণ ভাবে কিসে পরিনত করছে – শান্তি, আরাম, ফুর্তি নাকি অন্য কিছু। কষ্ট করলে শান্তি আসে, সেটা ভেবে কষ্টকে যেন সবসময় বর্তমানের শান্তি ভাববেন না। বর্তমান বড়ই নিষ্ঠুর, সময় থাকতে একে ভালবাসুন। ঠিক এ মুহূর্তে আপনার জীবনটা শেষ হলে বর্তমান ভবিষ্যতের হাত ধরে পালিয়ে যাবে। তারপর ফিরেও তাকাবে না আর আপনার দিকে এই নজরে।
