
প্রথম পর্বে, গল্পের শেষটা যতটা সহজভাবে হয়েছে, আসলে কিন্তু সেটা করতে কনাকে অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে।
যাই হোক কনা, রুমা, ইমন সবার জীবন ভালোই চলছিল। ইউনিতে মাঝে মাঝে কনা আড়চোখে ইমনকে খেয়াল করত, কিন্তু চোখাচোখি হয়নি কখনো।
এদিকে, কনার যে বান্ধবীদের গ্রুপটা ছিল, সেটা ছিল ইউনির সবচেয়ে বেয়াদব আর উশৃঙ্খল গ্রুপ। আমাদের দেশের অতি সুন্দরী ধনী মেয়েদের যা হয় আরকি। কনাও ধিরে ধিরে খারাপ মেয়েদের সাথে আরও গভীরভাবে মিশতে লাগলো। লেখাপড়া উচ্ছনে গেল কনার। সারাদিন দুষ্টামি আর বাঁদরামি। এদিকে ১ম সেমিস্টারেও ফেল করল কনা। কিন্তু তাতেও কিছুই যায় আসে না কনার, সে চলছিল বেশ বেপরোয়া ভাবেই।
ওদিকে ইমন বড় হয়েছে তার নানীর কাছে। অসম্ভব বুদ্ধিমতী ও সুশীল রমনি ছিলেন তিনি। যেমন আদর, তেমন শাসন, এককথায় তিনি ছিলেন মহীয়সী নারী। সেই নানী যখন চলে গেলেন পরোপারে, ইমন ডুবে গিয়েছিল তখন বিষণ্ণতায়। বেশ কিছুদিন ধরে বিষণ্ণতার চিকিৎসাও করাচ্ছিল সে। একদিন সকালে ক্যান্টিনে চা খেতে যেয়ে ইমন দেখল, দুরের এক টেবিলে কে যেন বসে চা খাচ্ছে, দেখতে অবিকল তার নানীর মতো। বুকটা ধক করে উঠল তার। আড়াল থেকে দেখল, একটা বয়কাট চুলের দুষ্টু মিষ্টি মেয়ে। কি আশ্চর্য, নানীর সাথে হুবহু মিল। যেন কোন জন্মে এই মেয়েটি নানীর কেউ ছিল। ইমন তখন তার বন্ধু শাকিলকে বলল, মেয়েটির খোঁজ নিতে, কোনোভাবেই একে হাতছাড়া করা যাবে না, বাঁচাতে হলে ওকে লাগবে, অন্তত মেয়েটির সেই চিবুকটা, যা দেখলে নানীর মুখ ভেসে উঠে। কিন্তু ইমনের বন্ধুরা কেউ রাজি হল না। কারন, ইমনের সাথে কনার কোন মিলই নেই, দুইজন যেন দুই জগতের।
ওদিকে কনা বুঝতে পারছিল যে, বন্ধু বান্ধবের সুবাদে সে ধীরে ধীরে বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আবার থামতেও পারছে না। কনা তার বাবা মার কথা মনে করে আঁতকে আঁতকে উঠত, কি জবাব দেবে তাদের। ঠিক তখনই রুমা এবং শাকিল উভয়ই ইমনের পছন্দের কথা কনাকে জানালো। কনা তখন মোটেও রাজি হচ্ছিল না। ইমন কে শ্রদ্ধা করা যায় কিন্তু প্রেম সম্ভব না। কোন ভালো লাগাই যে নেই সেখানে।
অবশেষে, নিজের বিপদ থেকে বাঁচার আর কোন উপায় না পেয়ে ইমনের প্রস্তাবে রাজি হল কনা কিন্তু পুরোটাই জোর খাটিয়ে। ছিল না কোন আবেগ, ভালোলাগা বা নেশা, শুধুই জীবন বাঁচানোর জন্য প্রেম।
ইমনের বান্ধবি হবার পর ইউনিতে কনার সম্মান বেড়ে যেতে থাকল, সবাই অন্যভাবে চিনতে শুরু করল কনাকে। ইমনের সহযোগিতায় লেখাপড়া আবার শুরু করল কনা।
ভয়ঙ্কর ব্যাপার বা দুর্ঘটনা, যেটা ঘটতে পারত কনার জীবনে, তা হল, যে গ্রুপের মেয়েদের সাথে মিশেছিল তাদের কেউ কেউ এখন দুর্দশাগ্রস্থ। সৃষ্টিকর্তার কাছে কনা কৃতজ্ঞ। হয়তো কনার বাবা মা এমন কোন পুন্য করেছিলেন তাদের জীবনে, যে কারণে কনা অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিল সস্তা ধরণের জীবন থেকে, আর আজও বেঁচে আছে ইমনের সম্মানে সম্মানিত হয়ে…
…………তিনা শুভ্র
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Life Style Medicine)
