(অণু গল্প)
মসজিদে এলে জালাল সাহেবের এজন্যই ভালো লাগে। বিশেষ করে এই নতুন মৌলানাটা তো তুখোড়। বয়স কম হলে কি হবে, কোরানের গল্প দিয়ে কি সুন্দর করেই না বাস্তব সব সমস্যাকে তুলে ধরে !
এই যেমন আজ জুমার বয়ানে নমরুদ আর ফেরাউনের গল্প বললো, তারা কিরকম অত্যাচারী ছিল – এসব। নমরুদ জীবন্ত মানুষকে আগুনে ফেলে মারতো, আর ফেরাউন মায়ের সামনে শিশুকে হত্যা করতো কোনো বিকার ছাড়া। এসব শুনে ভালো লাগার অন্যতম কারণ হলো এই উপলদ্ধিটা যে – আমরা এদের তুলনায় কত ভালো।
জালাল সাহেব অনেক ভেবে বের করেছেন – আসলে ফেরাউন হত-দরিদ্র বনি ইস্রাঈলদের মানুষই মনে করতো না, সেজন্যই এভাবে অত্যাচার করতে পারত। কিয়ামতের দিন এসব অত্যাচারী রাজা-রাজড়াদেরকে বলা হবে ‘আজকে কোথায় সেসব শক্তিমান’ আর টেনে-হিচড়ে দোজখে নিয়ে যাওয়া হবে, সেদিন তারা মজাটা বুঝবে।
মনের এই ভাবালুতা জালাল সাহেবের অবশ্য বেশিক্ষন থাকলো না – প্রচন্ড গরম, সম্মিলিত ঘামের গন্ধ, মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় মানুষের চাপাচাপি আর জুতা খোঁজার পেরেশানি তাকে খুব দ্রুতই বাস্তবতায় নামিয়ে আনলো। এর মধ্যে এক ফকির যখন গায়ের ওপর এসে পড়লো, তখন আর মেজাজ সামলাতে পারলেন না, ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন তার গালে। সেই বেচারা মনে হয় এরকম মার খেয়ে অভ্যস্ত, ‘স্যার মাফ কইরা দেন, দেখি নাই’ বলে কোনো রকম পালিয়ে যেতে চাইলো।
কিছুটা খারাপ লাগলো বলেই হয়তো মুরুব্বি তখন লোকটার হাতে দশটা টাকা ধরিয়ে দিলেন। ফকিরও খুশি, জালাল সাহেবও অপরাধবোধ থেকে মুক্ত। আসলে এরা তো সব মূর্খ লোকজন, আদব-লেহাজ কিছুই জানেনা। যেহেতু সাধারণ জ্ঞানটুকুও তাদের নেই সেহেতু তাদেরকে এভাবেই আচার-ব্যবহার শিক্ষা দিতে হবে।
মসজিদ থেকে বের হয়ে মুসল্লিরা যে যার পথ ধরলো। ছোট-খাটো ব্যাপার কেউ মনে রাখে না, সবার জীবনেই গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ পড়ে আছে।
মসজিদের বাইরে কিন্তু তখন গরম বাড়তে শুরু করেছে।
(মায়িন খান, সেপ্টেম্বর ২০২০)
