ভাগের জীবন এবং জীবনের ভাগ/ কিছু অন্ধকার এসে আলোয় থাক!

জনাব উল্লাহ ছিলেন শান্তিপুর, নদীয়া‘র বাঘমারা বংশের সন্তান। ছোট বেলায় তার মায়ের মৃত্যুর পর তার পিতা শিশু উল্লাহ‘র কারণেই হোক আর যেই জন্যই হোক বিয়ে করলেন। শিশু উল্লাহ‘র আর কোনো ভাই-বোন হয়নি। শুনেছি মা তাকে নিজপুত্রবৎ স্নেহ করতেন। বাঘ মারা‘র জন্য অতোটা ডাক না পাওয়ায় তার পিতা যাত্রা-পালায় নারীর চরিত্রে অভিনয়ও করতেন। ছিলো সুমিষ্ট কন্ঠ। তো এই করে ছেলেকে কলকাতার নামী মাদ্রাসায় পড়ালেন। দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করলেন বলা যায়। গ্রাজুয়েট হলেন জনাব উল্লাহ। ট্রেনে করে আসা-যাওয়া করেন কলকাতা,ডেইলী প্যাসেন্জারি। পরে মেসেও থেকেছেন। বিয়ে করানো হলো। দেশ ভাগে জনাব উল্লাহ ওপার থেকে বাংলাদেশে আসলেন। সেই সময়ে এক বছরের ছোট মেয়ে নিয়ে। ভাড়া থাকতে শুরু করলেন সদরঘাটে নৃত্যশিল্পী গুরুমা রাহিজা খানম ঝুনু‘র বাবার বাড়ীতে। সেই এলাকায় পূর্ব বাংলার কেন্দ্রীয় ফাইনান্স রিলেটেড প্রতিষ্ঠানে ক্যাশিয়ার হিসেবে চাকরী করতেন। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাসা বরাদ্দ পেলেন। কথিত আছে যে শান্তিপুর,নদীয়া থেকে তার পিতা-মাতা ভিটা বেঁচে ২৫,০০০/-রুপী নিয়ে চলে এসেছিলেন ছেলের সাথে থাকবেন। শোনা যায় যে, তাদের কাছ থেকে টাকা রেখে তাদেরকে চলে যেতে বলা হয়েছিলো। পরবর্তীতে আর যোগাযোগ রাখেননি। বৃদ্ধ পিতা-মাতা এক আত্মীয়‘র বাড়ীতে উঠানে ঘর করে থাকতেন। জানা যায়নি সেই ২৫,০০০/- টাকা দিয়ে উল্লাহ সাহেব কি কিছু জমি-জিরেত কিনেছিলেন কিনা, নাকি টাকাটি নেননি, নাকি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে উল্লাহ সাহেব ধর্ম-কর্ম করে,আল-কুরআনুল করীমের অনেক সূরা আমল,মুখস্ত এবং হাদীসে বু্ৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। আত্মীয়কূলে পরহেজগার হিসেবে নাম কুঁড়িয়েছিলেন। মাঝে মধ্যে স্মৃতি তাড়িত তাকে যদি বৃদ্ধ বয়সে কেউ ঘটনা না জেনে জিজ্ঞাসা করতো যে তার বাড়ীর কি হয়েছে? তখন অত্যন্ত পরহেজগারী স্টাইলে বলতেন যে, দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা দখল করে থাকে এবং উনি সেটি ফেরত নিতে যাননি। যেটি সত্যের অপলাপ বলে পরে বুঝেছি। সেই ধারনা থেকেই সম্ভবতঃ তার সন্তানদের কেউই (এবং এনারা সকলেই মায়ের স্টাইলে নিজ নিজ সংসার পরিচালনা করেছেন এবং করেন) নিজেদের নিরাপত্তা ছাড়া সন্তানদের কল্যাণে উদারভাবে জীবন গঠনে কিছু করতে চাননি এবং পারেননি। এভাবে নিজেদের সম্ভাবনাও নষ্ট করেছেন। সন্তানদেরও। এরা কেবল হাতের পুতুল তৈরী করতে চেয়েছিলেন। সবাই কি আর পুতুল হবার জন্য জন্মে?… …. (চলবে)

One thought on “ভাগের জীবন এবং জীবনের ভাগ/ কিছু অন্ধকার এসে আলোয় থাক!

Leave a comment