(অণু গল্প)
শুধু বাঙালি মহিলাদের নিয়ে মাসিক এই হালাকা অর্থাৎ ইসলামিক আলোচনা সভাটি মিলার খুব ভালো লাগে। প্রবাস জীবনে নিজের কৃষ্টি বা কালচারগুলো নিয়ে চর্চা করার সুযোগ বেশ উপভোগ করে মিলা – সে পহেলা বৈশাখের পিঠা উৎসবে যেমন যায়, তেমনি এই হালাকাতেও সুযোগ পেলেই চলে আসে। সত্যি কথা বলতে এখানে যেসব জিনিস নিয়ে আলোচনা হয়, ধর্মের বাইরেও এগুলোর উপযোগিতা রয়েছে বলে সে মনে করে।
যেমন আজকের আলোচনার বিষয় ছিল গীবত বা পরচর্চা। হালাকার আয়োজক আসমা আপা কি সুন্দর করেই না বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলেন ! এইতো আজকেই কেউ একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল – কারো পেছনে তাকে নিয়ে কথা বলাকে ধর্ম কেন এতো বড় ইস্যু বানিয়েছে? এটাতে তো ওই লোকের কোনো ক্ষতি হচ্ছেনা।
আসমা আপা তখন বুঝিয়ে বললেন – প্রথম কথা হলো, অবশ্যই যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে তার ক্ষতি হচ্ছে, মান-সম্মানের ক্ষতি আর্থিক ক্ষতির চেয়ে অনেক বড়। দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা শুধু এক পক্ষের কথা শুনছি, আর উভয় পক্ষের কথা না শুনে কাউকে বিচার করা ধর্ম অনুমোদন করে না। তৃতীয় কথা হচ্ছে, অন্যকে নিচু করে কথা বলার অর্থ হচ্ছে নিজেকে বড় মনে করা, যেটার অন্য নাম অহংকার, আর অহংকারও কিন্তু অনেক বড় পাপ।
আরেকজন আপা বললেন – সুন্দর বলেছেন আপা, আহা আমরা এখানে কত কিছু শিখছি মাশাল্লাহ। আমার আফসোস লাগে ওই আপাদের জন্য, যারা এখানে আসে না, দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিন।
বেশ কয়েকজন আপা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ‘আমিন’ বললেন। মিলা এ হালাকায় নতুন, সে বললো – কিন্তু আসমা আপা, যারা এখানে আসে না তাদের কাউকে কিন্তু আমি খারাপ পাই নি, এমনকি ওদের অনেকে তো পুরোপুরি ধর্ম-কর্ম করে।
আসমা আপা বললেন – আপনি ঠিকই বলেছেন।
কিন্তু রওশন আপা ঠিক মানতে পারলেন না, বললেন – মিলা বোন শোনেন, উনাদের মধ্যে যারা নামাজ পরে পর্দা করে, তাদের আমিও চিনি । তারা দেখবেন আমাদের উপমহাদেশীয় মসজিদে আসে না, তারা যায় আরব মসজিদে। ওরা বোধ হয় ওহাবী, ওদের সাথে মেলা-মেশা না করাই ভালো ।
রুনা আপা সাথে যোগ করলেন – রওশন আপা ঠিকই বলেছে, মনে রাখবেন আপনি যার সাথে মিশবেন তার সাথেই আপনার হাশর হবে।
মিলা ওই অন্য মসজিদেও যায় মাঝে মধ্যে, আরব মহিলারা যথেষ্ট সম্মান আর আপ্যায়নই করে তাকে, আর ওই মহিলারাও ভালো ভালো কথাই বলে। ফলে – কার সাথে হাশর হলে ভালো হবে – এটা নিয়ে সে ভীষণ দ্বন্দে পড়ে গেলো।
হালাকা থেকে বের হবার পর মিলার কেমন যেন লাগতে শুরু করলো। সে রাতে ভীষণ মাথা ব্যথা নিয়ে সে বাসায় ফিরলো।
(মায়িন খান, সেপ্টেম্বর ২০২০)
