লাইফ-স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন কমানো…..

ওজন কমানোর কথা মাথায় আসলেই আমরা চিন্তায় পরে যাই যে, কি খাবো আর কি খাবো না… দেখা যায় প্রথমেই আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিয়ে দেই, যেমন, দুধ, ডিম, মাংস, ডাল, ভাত বাদ দিয়ে শুধু সবজি আর সালাদ খেতে থাকি, অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে। যেহেতু মনে একটা অখুশি ভাব নিয়ে এগুলো খাই, তাই কয়েকদিন যেতে না যেতেই এই খাবারগুলকে অসহ্য লাগতে থাকে। তখন সব বাদ দিয়ে আবার যা ইচ্ছা খাওয়া শুরু করে দেই। এতে ফলাফল হিতে বিপরীত হয়। আসলে ইচ্ছা শক্তির বিরুদ্ধে কোন কাজ করলে তা দীর্ঘস্থায়ী কোন সুফল আনতে পারে না। আর এজন্যই আমি ইচ্ছাকে একধরনের শক্তি হিসেবে বলেছি। আপনার ইচ্ছাই হোল আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি, যাকে কাজে লাগিয়ে আপনি যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, আমি বিশ্বাস করি।

আপনি চাইলেই কিন্তু আপনার পছন্দের খাবারগুলো দিয়েই ডায়েটিং করতে পারেন। একে আমি ডায়েটিং বলতে নারাজ। কারন আমি চাইবো এই পছন্দের খাবারগুলো পরিমানমতো সঠিকভাবে সঠিক সময়ে খেয়ে খেয়ে আপনার জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত করে ফেলবেন, যেন আপনি ঐ নিয়মেই খেয়ে আসছেন এবং খেতেও থাকবেন। এতে যেমন সুঅভ্যাস গড়ে উঠবে, ঠিক তেমনি আপনিও পেতে পারেন একটি সুস্থ দীর্ঘায়ু। কেননা আপনি যদি শুধু ওজন কমানোর জন্য গতানুগতিকভাবে ডায়েটিং করেন, তখন ডায়েটিং ছেড়ে দেয়া মাত্রই ওজন আবার বাড়তে থাকবে। কিন্তু অভ্যাস যদি বদলে ফেলতে পারেন তবে তা হবে আপনার আজীবন সঙ্গী। তাই আপনি ডায়েটের অধীনে নয়, ডায়েটকে আপনার অধীনে আনুন। আর ওজনকে বেঁধে ফেলুন কঠিন লোহার শিকলে।

লাইফ স্টাইল মেডিসিন হল এমনই এক চিকিৎসা বিজ্ঞান, যেখানে জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে সুস্বাস্থের সুঅভ্যাস গড়ে তোলা হয়।

আমার মূল লক্ষ্যই হোল জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন কমানো এবং তা স্থায়ীভাবে স্বভাবে পরিনত করা। এতে আপনি যত দিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন একটা সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক, জীবন ভোগ করতে পারেন।

আমি একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিচ্ছি…।

ধরুন, আপনি প্রতিদিন সকালে নাস্তায় ৪টি রুটি আর ভাজি খেয়ে থাকেন। এখন আপনি চাচ্ছেন খাওয়ার পরিমান কমিয়ে ওজন কমাতে। এক্ষেত্রে আপনি সাধারণত রুটির পরিমান কমিয়ে ভাজির পরিমান বাড়িয়ে দিবেন। রুটি কমিয়ে ভাজি দিয়ে পেট ভরাতে চেষ্টা করবেন। তবে আমি এমনটি চাইবো না, আপনার পেট ভরাতে আমি রাজি নই। আমি চাইবো, আপনার পুরো খাবারই যেন কমে যায়, মানে আপনি রুটি খাবেন ৩ টি আবার ভাজিও খাবেন কম। আপনার পেটের একভাগ খালি থাকবে। প্রথম প্রথম কষ্ট হবে, খিধা খিধা ভাব থেকে যাবে। সেটা সহ্য করে নিতে হবে, আর এভাবে চলতে থাকবে। একজন মানুষের যে কোন অভ্যাস স্থায়ী হতে কমপক্ষে ৩ মাস সময় লাগে। আর ৩ মাস পরই দেখবেন, আপনি ঐ অল্প খাওয়াতেই সন্তুষ্ট আর খুশি। তখন কেউ আপনাকে জোর করেও বেশি খাওয়াতে পারবে না। কারণ মানুষ চিরকালই অভ্যাসের দাস। এটি সৃষ্টিকর্তার একটি বিশেষ নিয়ম। স্রস্টার এই নিয়মকে কাজে লাগিয়ে দেখুন না, সুফল আপনি পাবেনই। ঠিক এই নিয়মে যে কোন সুঅভ্যাস আপনি সহজেই গড়ে তুলতে পারেন। তবে তার জন্য চাই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ। এখন বলি কেন সকালের নাস্তায় খাবারের পরিমান কমাবেন, আমাদের পাকস্থলী একটা বেলুনের মতো। ধরুন, এই বেলুনকে খাবার খাইয়ে খাইয়ে বেশ বড় করে ফেলেছেন। এখন আর অল্প খাবারে বেলুনটি সন্তুষ্ট হয় না, বেশি বেশি খেতে চায়। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? আমি কিন্তু পাকস্থলীকে বেলুন বলেছি, আর বেলুনকে আপনি চাইলে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেন, কারণ পাকস্থলী আসলেই বেলুনের মতো, পরিবর্তনশীল, তবে তা হতে হবে নিয়ম মাফিক। এই পাকস্থলীকে চাইলে আপনি খাবার কম দিয়ে দিয়ে অভ্যস্থ করে ফেলতে পারেন। কম খাবার পেয়ে পেয়ে পাকস্থলী আবার পূর্বের আকারে ফিরে আসবে। আর আপনিও পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্খিত ফলাফল। তাই নিজেকে খাবারের অধীনে না নিয়ে বরং খাবারকে আপনার অধীনে আনুন আর প্রমাণ করে দিন, আপনিই সৃষ্টির সেরা, খাবার নয়।

……ডাঃ তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com

(Weight Reduction and Life-Style medicine)

Leave a comment