স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যতালিকা বা সঠিক ডায়েট চার্ট

সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনার শরীর কখনই লেবু পানি বা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার চায় না, চায় স্বাভাবিক খাবার যা সৃষ্টিকর্তা তার জন্য বরাদ্দ করে রেখেছেন। তাই আপনারও উচিৎ হবে প্রকৃতির দেয়া স্বাভাবিক খাদ্যতালিকা দিয়ে আপনার শরিরকে চালু রাখা।

মনে রাখতে  হবে ডায়েট মানে না খেয়ে থাকা নয়। ডায়েট মানে পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার গ্রহণ করা। ডায়েটে পুষ্টিকর খাবার সঠিক পরিমাণে গ্রহণ না করলে কিংবা শুধু কম খেয়ে থাকলে শরীরের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ওজন কমানোর প্রয়োজন থাকলে কিংবা নির্দিষ্ট ওজন ধরে রাখতে চাইলে অবশ্যই বয়স, বর্তমান ওজন, উচ্চতা এবং কতটুকু ওজন কমাতে চাই সেই অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে।

ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্য সম্মত ডায়েট এর পাশাপাশি দৈনিক কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমানো এবং দৈনিক ৪০/৪৫ মিনিট  হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা দরকার।

মূলনীতিঃ

প্রতিদিন সকালে আপনি পেট ভরে (অতিরিক্ত না) রাজার হালে খাবেন, দুপুরে খাবেন প্রজার মতো আর রাতে খাবেন অভাবীদের মতো। মানে হোল, সকালের খাবারকে যদি ১ ভাগ ধরেন, সেক্ষেত্রে দুপুরের খাবার হবে সকালের খাবারের পরিমানের প্রায় আধা ভাগ আর রাতের খাবার হবে সকালের খাবারের তিনভাগের এক ভাগ। আর মধ্যদুপুর/ বিকালের খাবার কে আমরা নাস্তা বা স্ন্যাক্স বলবো, যা হবে সকালের খাবারের প্রায় ছয়ভাগের এক ভাগ।

আজ আমি মোটামোটি ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত একটি খাদ্যতালিকা কি ধরনের হতে পারে, তা নিয়ে কথা বলবো, কারো উচ্চতা বা ওজন ছাড়া, যেমন,

সকাল:

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে  কমপক্ষে ২ গ্লাস কুসুম গরম পানি বা সম্ভব হলে কুসুম গরম লেবু পানি পান করে নিবেন। খালিপেটে পানি পান করার ফলে আপনার ঘুমিয়ে থাকা খাদ্যনালী তার কাজ করা শুরু করবে। এতে হজম প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হতে থাকবে। এছাড়া লেবু পানি আপনার ঘুম ঘুম ভাব কাটিয়ে একটা তরতাজা ভাব নিয়ে আসবে। পানি খাওয়ার ৩০/৪০ মিনিট পর সকালের নাস্তা খাবেন। এই ৩০/৪০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি, সকালের প্রার্থনা, সংসারের নানা কাজ করে নিবেন।

সকালের নাস্তাঃ

যারা দেশে থাকেন বা দেশীয় নাস্তা খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যঃ

. দুটো পাতলা আটার রুটি।

. এক বাটি রান্না সবজি বা ভাঁজি বা এক বাটি ঘন ডাল।

. একটি ডিম (যেভাবে ইচ্ছা, চাইলে কুসুম নাও খেতে পারেন)।

. কম দুধ/ কম চিনি/ বিনা চিনি দিয়ে বানানো চা /কফি অথবা রং চা/ গ্রিন টি।

যারা দেশের বাইরে থাকেন বা দেশীয় নাস্তা খান না, তাদের জন্য,

১. Cereals(দুই মুঠ), লো ফ্যাট দুধ (আকাশি বা হালকা নিল ক্যাপ), লো ফ্যাট চিনি ছাড়া দই বা Yoghurt, কলা বা যে ফল আপনি পছন্দ করেন।

২. Oatmeal(দুই মুঠ), লো ফ্যাট দুধ(আকাশি বা হালকা নিল ক্যাপ), লো ফ্যাট চিনি ছাড়া দই বা Yoghurt, কলা বা যে ফল আপনি পছন্দ করেন।

৩. ২ টি টোস্ট, মারজারিন, এভোকাডো পিনাট বাটার, ডিম পোঁচ

তবে উপরের সব খাবারগুলো যে একসাথে খেতে হবে তা নয়, উপরের খাবার উপাদানগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি ভাগ খেতে হবে।

. কম দুধ/ কম চিনি/ বিনা চিনি দিয়ে বানানো চা /কফি অথবা রং চা/ গ্রিন টি।

সকালের নাস্তা খেতে হয় ভালো পরিমান, যা সারাদিন আপনাকে সচল রাখবে। তবে অতিরিক্ত পেট ভরে খাবেন না, পেটের কিছু অংশ যেন খালি থাকে।

 মধ্যদুপুরঃ

 ১. একটি ডিম (সিদ্ধ হলে ভালো হয়), যদি নাস্তায় ডিম না খেয়ে থাকেন, তাহলে খাবেন।

 ২. এক গ্লাস লো ফ্যাট দুধ (আকাশি নিল ক্যাপ)

 ৩. টক জাতীয় বা যেকোনো দেশি ফল ১ টা(অবশ্যই টক হতে হবে)

  (শশা, টমেটো, গাজর, লেটুস, আপেল বা যে যে ফল আপনি পছন্দ করেন, সেগুলো টুকরা টুকরা করে কেটে, বিট লবন, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, গোল মরিচের গুড়া ও চাঁট মশলা দিয়ে মাখিয়ে খেতে পারেন, যতটুকু ইচ্ছা)

৪. কম দুধ/ কম চিনি দিয়ে বানানো চা /কফি অথবা রং চা/ গ্রিন টি, কম মিষ্টি বা মিষ্টি ছাড়া বিস্কুট।

তবে উপরের সব খাবারগুলো যে একসাথে খেতে হবে তা নয়, উপরের খাবার উপাদানগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি ভাগের খাবার বেছে নিতে হবে।

 দুপুর :

. খাওয়া শুরুর পূর্বে এক গ্লাস পানি পান করে তারপর খেতে বসবেন।

. ৫০-৭০ গ্রাম চালের ভাত।

. মাছ বা মুরগি (মাছ হলে বেশি ভালো অথবা চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস) এক টুকরা।

. এক বাটি সবজি ও শাক (পছন্দমতো) (ছোট বাটি), চাইলে বাড়তি শাক সবজিও খেতে পারবেন।

. সালাদ, লেবু, আচার

. এক বাটি ডাল (ঘন/ পাতলা)(ছোট বাটি)

. ২৫০ গ্রাম টক দই বা লো ফ্যাট এবং চিনি ছাড়া Yoghurt

. খাওয়ার ৪০/৪৫ মিনিট পর কম দুধ/ কম চিনি/ বিনা চিনি দিয়ে বানানো চা /কফি অথবা রং চা/ গ্রিন টি বা শুধু কুসুম গরম পানি পান করা ভালো, এতে হজমের গতি বাড়ে।

বিকাল :

 . কম দুধ/ কম চিনি/ বিনা চিনি দিয়ে বানানো চা /কফি অথবা রং চা/ গ্রিন টি।

 ১. মুড়ি বা কম মিষ্টি বিস্কুট

 ২. ছোলা-মুড়ি মাখানো (বাসায় রান্না ছোলা)

 ৩. চটপটি (বাসায় বানানো)

 ৪. চিড়া-বাদাম মাখানো

 ৫. চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাজুবাদাম

 ৬. বুট ভাঁজা, ডাল ভাজা (তেল ছাড়া এবং বাসায় ভাজা)

 ৭. সবজি নুডুলস বা ম্যাকারনি এক বাটি(নুডুলস বা ম্যাকারনির পরিমান কম ও তেল খুব কম, কিন্তু সবজি বেশি)

তবে উপরের সব খাবারগুলো যে একসাথে খেতে হবে তা নয়, উপরের খাবার উপাদানগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি ভাগ খেতে হবে।

 রাত :

রাতের খাবার খাওয়ার আগে ১ গ্লাস পানি পান করে খেতে যাবেন।

. আটার পাতলা রুটি দুটা। কেউ চাইলে ছোট বাটির এক বাটি ভাত খেতে পারেন। তবে আমি বলবো যে, রাতে যত হালকা খাওয়া যায় ততই মঙ্গলজনক। রাতে অল্প খেতে প্রথম প্রথম কষ্ট হবে। তবে অভ্যাস হয়ে গেলে আপনি নিজেই এর সুফল বুঝতে পারবেন।

. এক বাটি সবজি (ছোট বাটি)

. এক বাটি ডাল (ছোট বাটি)

. সালাদ (টকদই দিয়ে ছোট এক বাটি সালাদ), লেবু

 তবে উপরের সব খাবারগুলো যে একসাথে খেতে হবে তা নয়, উপরের খাবার উপাদানগুলোর মধ্যে যেগুলো আপনি খেতে চান সেগুলোই খাবেন।

চেষ্টা করবেন, রাতের খাবার যেন অবশ্যই ঘুমানোর দুই/আড়াই ঘণ্টা আগে শেষ হয়। রাতে চা/কফি পান করার দরকার নেই। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘঠতে পারে। সেক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে।

সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

কোন সমস্যা বা রোগের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী।

……ডাঃ তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com

(Weight Reduction and Life-Style Medicine)

Leave a comment