কিভাবে হাঁটার অভ্যাস করবেন বা বাড়াবেন

হাঁটা শরীরের জন্য ভালো, এটা জেনেও আমরা অনেকে হাঁটা শুরু করতে পারছি না। হয়তো ভাবছি, কাল/পরশু কিংবা পরের সপ্তাহ/মাস থেকেই হাঁটা শুরু করবো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাঁটা আর শুরু করাই হয়ে উঠে না। আমি তাদের বলবো না, হাটতেই হবে বা জোর করে হাঁটুন। বরং তারা কিভাবে হাঁটার অভ্যাস শুরু করবেন, তা নিয়ে কিছু টিপস দিবো

১। যারা একেবারেই হাঁটতে সময় পান না, তাদের ক্ষেত্রে যখনই সুযোগ হয় তখনই অল্প হলেও হাঁটা উচিত এবং এর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে দৈহিক উপকার অর্জিত হয়।

প্ল্যান করে হাঁটার চিন্তা বাদ দিন। যখন যেখানে যে অবস্থায় আছেন হাঁটুন। এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যান, এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করে ঘরের কাজগুলো সেরে ফেলুন। পরে ১ ঘণ্টা হেঁটে নিব, এই আশা কখনই করবেন না। কারণ, অবচেতন মনের এটা একটা বাহানা। নিজের ঘরে প্রথমে চলাফেরা বাড়ান, আস্তে আস্তে সময় নিয়ে হাঁটা শুরু করুন।

 দৈনিক তিরিশ মিনিট একটানা হাঁটা হাঁটতে না পারলে  হাঁটার সময়কে ভাগ করে নিতে পাড়েন। প্রতিবারে দশমিনিট হেঁটে সারাদিনে এভাবে তিনবার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। সকালে দশ মিনিট, বিকেলে দশ মিনিট এবং সন্ধ্যায় দশ মিনিট হাঁটলেই শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে দরকারী উপকার লাভ করা যেতে পারে।

২। অফিস হতে বাসায় আসার সময় এক স্টপেজ আগে গাড়ি হতে নামুন এবং বাকি পথ হেঁটে আসুন। অফিসে যেতে হলে একটু হেঁটে সামনে গিয়ে তারপর গাড়িতে উঠুন।

 বাসায় উঠার সময় লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। অতি উঁচু তলায় বাসা হলে কিছুটা লিফটে উঠে বাকিটা সিঁড়ি দিয়ে উঠুন।

৩। যারা সারা সপ্তাহ বসে বসে কাজ করেন বা যারা মোটেও দৈহিক পরিশ্রম করেন না তাদের ক্ষেত্রে দৈনিক ত্রিশ মিনিট হাঁটা জরুরি।

 যারা দৈনিক হাঁটতে পারেন না, তারা সপ্তাহে অন্তত পঁচাত্তর মিনিট গড়ে হাঁটা দরকার।

 যারা একেবারেই হাঁটতে সময় পান না, তাদের ক্ষেত্রে যখনই সুযোগ হয় তখনই অল্প হলেও হাঁটা উচিত।

একটানা কুড়ি পদক্ষেপ হাঁটলে এক কিলোক্যালরি শক্তি ব্যবহৃত হয়। দৈনিক দশ হাজার পদক্ষেপ হাঁটলে পাঁচশ কিলোক্যালরি শক্তি পোড়ানো যায়। দৈনিক দশ হাজার পদক্ষেপ হাঁটাতে পারাটা খুবই ভালো।

 ৪। একা একা হাঁটতে বিরক্ত লাগলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাঁটুন।

হাঁটার গ্রুপ করে দলে দলে হাঁটলে একঘেঁয়েমি লাগে না এবং তাতে অনীহা তৈরি হয় না।

৫। কতটুকু হাঁটলেন তা পরিমাপের জন্যে প্রয়োজনে পেডোমিটার নামে ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ গণনাযন্ত্র কোমরের সাথে আটকে রাখুন বা মোবাইলে পেডোমিটার অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন। দিন শেষে হাঁটার পরিমান দেখে আপনি নিজেই খুশি হবেন। এই অ্যাপ টি আপনি আপনার বন্ধু বা পরিচিতজনের সাথে শেয়ার করুন এবং দিন শেষে সবাই মিলিয়ে দেখুন কে কতটুকু হেঁটেছেন। চাইলে প্রতিদিনকার বিজয়ীও ঘোষণা করতে পারেন। এতে আপনার হাঁটার আগ্রহ বাড়বে।

৬। হেড ফোনে পছন্দের গানগুলো ডাউনলোড করে নিন এবং হাঁটতে হাঁটতে শুনুন।

৭। বাসায় ট্রেড মিলে হাঁটার সময় টিভিতে পছন্দের কিছু দেখতে দেখতে হাঁটুন।

৮। অনেকসময় আমরা জানতে চাই, ঘরে হাঁটবো না বাইরে হাঁটবো, ট্রেড মিলে হাঁটবো না পায়ে হাঁটবো…। আপনি যেভাবেই হাঁটুন না কেন, আপনার শরীর শুধু আপনার হাঁটাই চায়। আপনি হাঁটলেই আপনার শরীর মহা খুশী হয়। হাঁটা নিয়ে এজাতীয় প্রশ্নগুলো শুধুই, অবচেতন মনের না হাঁটার বাহানা ছাড়া আর কিছুই নয়।

৯। অনেক সময় আপনি হয়তো হতাশ হয়ে হাঁটা ছেড়ে দেন আর ভাবেন, “আমার হাঁটা কোন কাজে আসবে না, আমি একদিন হাঁটি তো অন্যদিন হাঁটি না, এভাবে কোন লাভ নেই, তাই আর এখন হাঁটি না, যা হবার হোক…।” ধারণাটা পুরোটাই ভুল। খাবার তো আপনি প্রতিদিনই খান, দু-এক বেলা বাদ পড়লে তো আর খাওয়া ছেড়ে দেন না, হাঁটার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তাই। বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের কোন বিকল্প নেই, ঠিক তেমনি শরিরকে চালু রাখতে হাঁটার কোন বিকল্প নেই। মানে, নগদে যা আসবে তা হাত পেতে নিন, বাকীর খাতা শূন্য থাক।

ডাঃ তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com

(Weight Reduction and Life-Style medicine)

Leave a comment