বাঙ্গালী, তুমি চাঙ্গা হও, ডায়াবেটিস তাড়াও…

বর্তমান সময়ে আমরা প্রায় সবাই যেন এই একটি রোগের জন্য আতংক নিয়ে অপেক্ষা করছি। “আমার বোধহয় ডায়াবেটিস হয়েই গেল” এই আতঙ্ক যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে সবাইকে। আসুন, আতঙ্কিত না হয়ে, কিভাবে এর সাথে মিলে চলতে পারি, সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করি। আমরা বাঙ্গালীরা যেভাবে বেড়ে উঠি, আমাদের জন্য ডায়াবেটিস একটা সাধারণ ব্যাপার। তাই আসুন সময় থাকতে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখি যেন প্রয়োজনে এই রোগকে সাথি করেই জীবন পার করে দিতে পারি। ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসা হিসেবে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও শারিরিক পরিশ্রমের কথা ডাক্তাররা বলে থাকেন। আমাদের উচিৎ হবে সেসব সু অভ্যাসগুলি ডায়াবেটিস ধরা পড়ার আগে থেকেই শুরু করে দেয়া। এতে করে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা কমে যায়, আর যদি ডায়াবেটিস হয়েই যায়, তাহলেও তার সমাধানের ব্যবস্থা আপনি নিজেই করে ফেলেছেন, আপনার জীবন অভ্যাস দিয়ে। ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যা কখনো সারে না। কিন্তু এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব।

তাহলে কি ডায়াবেটিসের জন্য আমরা আমাদের জন্মগত বৈশিষ্ট্যকে দোষ দিবো। আর দিবো নাই বা কেন? কেনই বা ডায়াবেটিস হয়? কোন রোগের জন্য কারো জন্মকে দোষ দেয়া যায় না। জন্ম যেখানেই হোক, কর্ম যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়, তাহলে সেটাই উত্তম। সত্যি বলতে কি, আমাদের খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, শ্রম, জীবনযাপন প্রণালী, যা আমরা আমাদের সমাজ থেকে পেয়েছি, তা অনেকাংশেই সঠিক নয়। আমরা যদি কেবলমাত্র সেই ভুলগুলোই শুধরে নিতে পারি, তাহলে আর এতটা সমস্যা থাকবে না। আমাদের উচিৎ হবে, সঠিক জীবন অভ্যাস জেনে, সেভাবে আমাদের ও আমাদের সন্তানদের গড়ে তোলা। যে ভুল শিক্ষায় আমরা বেড়ে উঠেছি, তা যেন আমাদের সন্তানরা না পায়। ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগ যেন কারো জীবনের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই কি সেই ভুলগুলোঃ

১। নারীরা ঘর সামলাবে আর পুরুষরা বাইরে কাজ করবে।

২। কাজ শেষে পুরুষরা বসে বসে বিশ্রাম নিবে।

আমরা যদি শুধুমাত্র এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে বহুলাংশেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করা যাবে। যেমনঃ

নারী, পুরুষ সবাই যার যার মতো ঘরে ও বাইরে কাজ করবে এবং প্রয়োজন মাফিক উপার্জন করবে। কেবলমাত্র উপার্জনই পারে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে। আর মানুষ সুখি ও সচল থাকা মানেই গ্লুকোজের ব্যবহার বাড়া, ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া।

এর পর আসে খাদ্যাভ্যাস, এটা আমরা চাইলেই অনায়াসে বদলাতে পারি, শুধু দরকার খাদ্য ও পুষ্টি জ্ঞান, সদিচ্ছা, সামাজিক সচেতনতা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্রই হোল সুশৃংখল জীবনযাপন। যে জাতি যত বেশি সুশৃংখল, সে জাতি ঠিক ততোটা সুস্থ। ভাবছেন, একদিন তো মরেই যাব, এতো কেন নিয়ম-শৃঙ্খলা। এটা শৃঙ্খলা নয়, এটি একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-বিধান। সমাজ-সংসারের রীতিনীতি মতো যে জীবন চলতে থাকে বছরের পর বছর, তা যে সবসময় সঠিক হবে, তা কিন্তু নয়। এখন সময় এসেছে চোখ মেলে দেখার, কান দিয়ে শোনার, আর বিদ্যা-বুদ্ধি দিয়ে বুঝার। যা কিছু সঠিক, সত্য ও বিজ্ঞান সম্মত, শুধু তাই গ্রহন করা উচিত। উন্নত দেশগুলোর দিকেই বা তাকাই না কেন, তাহলেও তো সমাধান পাওয়া যাবে। এমনতো নয় যে আমরা উন্নত দেশগুলোর কিছুই গ্রহন করছি না, আমাদের ঐতিহ্য ধরে বসে আছি। পোশাক, নাচ, গান, অভিনয় কোন কিছুই তো বিদেশী অনুকরণ বাদ দিচ্ছি না, তবে জীবন-যাপন কেন বিদেশী অনুকরনে করছিনা। এতে আমরা নিজেদের কেবল ধোঁকাই দিচ্ছি। সারারাত রামায়ন পড়ে, সকালে বলছি সীতা কার বাপ। সারারাত রামায়ন পড়ার দরকার নেই, শুধু মন দিয়ে রামায়নটা পড়ুন, আর পড়ে জেনে নিন যে, সীতা কে। এতে নিজে যেমন লাভবান হবেন, তেমনি অন্যকেও মহাবিপদ থেকে বাঁচাতে পারবেন।

যে কোন রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ডাঃ তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com

(Weight Reduction and life-Style Medicine)

Leave a comment