জ্যামের মধ্যে বসে থেকে থেকে নয়ন বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো। ছোট গলিতে জ্যাম লাগলে এই এক সমস্যা, কখন ছুটবে তা জানার কোনো উপায় নেই। পাশে খোলা ড্রেন থেকে কালো পানি উপচে পড়ছে, ফলে রিকশা থেকে নেমে হেটে চলে যাওয়ারও সুযোগ নেই। হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটা পত্রিকা বের করে পড়তে শুরু করলো সে।
পত্রিকা খুলতেই একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়লো। ইদানিং দেশে ধর্ষণের প্রবণতা মনে হয় বেড়ে গেছে, সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নারী নির্যাতনের অসংখ্য নিউজ। নয়ন অবশ্য খুব আগ্রহ নিয়ে এই খবরগুলো পড়ে। যত বেশি বর্ণনা থাকে, ততই ভালো – মেয়েটা কত অসহায় ছিল, লোকগুলো কতটা নিচে নেমেছিল, এগুলো জানা যায় – ফলে লোকগুলোকে ঘৃণা করতে আর মেয়েটার পরিস্থিতি নির্ভুলভাবে বুঝতে তার সুবিধা হয়।
সত্যি কথা বলতে, নারী নির্যাতনের প্রতিটা খবরই নয়ন মন দিয়ে পড়ে। তবে সব পত্রিকায় পুরো বর্ণনা পাওয়া যায় না, ফলে বুঝতে অসুবিধা হয়। এই যেমন সেদিন একটা প্রথম সারির পত্রিকায় এরকম একটা নিউজ দিলো, কিন্তু মেয়েটার বয়স লিখতে তারা ভুলে গেলো – বয়স না জানলে ঘটনাটা কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। সামাজিক অবস্থাটাও জানা জরুরি – নয়ন লক্ষ্য করেছে, অবস্থাপন্ন পরিবারের কোনো কমবয়সী তরুণীর নির্যাতনের খবর যখন সে পড়ে তখন তার নিজের মধ্যে মেয়েটার প্রতি সমবেদনা জাগানো সহজ হয়। কিন্তু সেই একই কথা, বর্ণনা বেশি হওয়া খুব প্রয়োজন। এসব কারণেই নামী পত্রিকা বাদ দিয়ে ইদানিং নয়ন ট্যাবলয়েড ধরণের পত্রিকা কেনা শুরু করেছে।
এসব মেয়েদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করার জন্য নয়নের মন মাঝে-মধ্যেই আনচান করে। অদূর ভবিষ্যতে নিজেদের উপজেলায় একটা এনজিও খোলার পরিকল্পনা তার আছে। নয়ন শুনেছে যে এনজিও করে বিদেশ থেকে অনেক টাকা-পয়সা সাহায্য আনা যায়। একবার এরকম একটা প্রকল্প দাঁড়িয়ে গেলে তাকে আর পায় কে ! তখন আর কষ্ট করে এই বদ বসের সাথে কাজ করতে হবে না।
বস আজ তাকে বেশ ঝামেলায়ই ফেলে ছিল। ওর ভুলের কারণে কোম্পানির একটা ব্যবসা হাতছাড়া হয়েছে, কিন্তু তাই বলে সবার সামনে এভাবে বকা-ঝকা করা! একবার মনে হয়েছিল বসের চোখ দুটা উপড়ে ফেলে, কিন্তু সে জানে তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
ধর্ষণের খবরটা পড়তে পড়তে হঠাৎই নয়নের মাথায় একটা চিন্তা খেলে যায়। এসব খবরের জন্য পত্রিকা কিনে পয়সা নষ্ট করার দরকার কি! ও শুনেছে যে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করলেই এগুলোর ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
নয়নের মনটাই ভালো হয়ে গেলো, বসের দুর্ব্যবহারের যাতনা মুহূর্তে মন থেকে উধাও হয়ে গেলো। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে জ্যামের মধ্যেই সে রিক্সা নেমে গেলো, তারপর উপচে পড়া ড্রেনের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে পা ফেলে দ্রুত সামনে হেটে চললো।
(অনু গল্প / মায়িন খান, অক্টোবর ২০২০)
