হাঁটুন এবং হেঁটে হেঁটে দুশ্চিন্তা, অশান্তি, স্ট্রেস বা মানসিক কষ্ট কমান…

বর্তমান সময়ে মানসিক চাপ যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা বিরাট অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা চাই বা না চাই নানান দুশ্চিন্তা আমাদের মনকে অস্থির করে তোলে। ঘরে বাইরে যে কোন সময় আমাদের অশান্তি, দুশ্চিন্তা, মন বা মেজাজ খারাপ হতে পারে। অতিরিক্ত ‘টেনশন’ বা উদ্বেগে ভোগা একধরনের সমস্যা। একে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ছোটখাটো সমস্যা তারা অনেক বড় করে দেখে এবং যেকোনো বিষয়ের নেতিবাচক দিকটাই তাদের সামনে চলে আসে। এরা ছোটখাটো চাপ মোকাবিলা করতে হিমশিম খায়, যা জীবনের স্বাভাবিক গুণগত মান নানাভাবে কমিয়ে দেয়। তখন উচিৎ হবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

যখন আমরা দুশ্চিন্তায় বা অশান্তিতে বা স্ট্রেসে থাকি, তখন আমাদের শরীরে কোর্টিসোল নামক একধরনের হরমোন বের হয়। এই হরমোন হার্ট রেট,  ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দেয়, ডিপ্রেসোন-অশান্তি বাড়ায়, এমনকি পেটে মেদ সহ  পুরো শরীরের ওজনও বাড়াতে পারে।

আমরা যদি নিয়মিত হাঁটি, তাহলে এই কোর্টিসোল নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। তবে মজার ব্যাপার হোল, আপনি যদি কোন ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটেন, তাহলে আপনার কোর্টিসোল বেড়ে যাবে কিন্তু আপনি যদি নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটেন, তাহলে আপনার কোর্টিসোল কমে যাবে। কারণ, অতিরিক্ত ব্যাস্ত রাস্তা আপনাকে কোন স্বস্তি দিবে না, উল্টা আপনাকে আরও দুশ্চিন্তা গ্রস্ত করে দিবে। তাই, কোথায় হাঁটবেন, সেটাও একটা বিরাট বিষয় এই স্ট্রেস কমানোর জন্য। নিরিবিলি খোলা জায়গায় হাঁটলে তা কোর্টিসোল কমিয়ে এন্ডরফিনগুলো বাড়িয়ে দেয়, এই এন্ডরফিনগুলো ফুর্তির হরমোন বলে পরিচিত। এছাড়া  বিশুদ্ধ বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলে হতাশা উদ্বীপক কোর্টিসল হরমোনের পরিমাণ কমে আসে। তাছাড়া শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তা মানসিক অস্থিরতা কমাতেও সহায়তা করে। সম্ভব হলে হাঁটা শেষ করে লেবু, কমলা, মাল্টা, আঙুর, স্ট্রবেরিসহ ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে পারেন, যা শরীরে মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কোর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই খাবারগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। আপনার যদি পোষা প্রানি থাকে, তাহলে তার সাথে সময় কাটান, তাকে নিয়ে হাঁটতে বের হউন। পোষা প্রাণী নির্মল ভালোবাসার একটি বিশ্বাসযোগ্য উৎস। তাই প্রিয় প্রাণীটির সঙ্গে সময় কাটালে মানসিক চাপ দূর করে কিছুটা হালকা হওয়া যায়। পোষা কুকুর বা বিড়ালের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটালে শরীরে সেরোটনিন, প্রোলাকটিন ও অক্সিটনিক নামক কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় যা ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এতে দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূর হয় চটজলদি।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বেলাতে বিষণ্ণতা দেখা যায় বেশি। যারা নিষ্ক্রিয় থাকে তারা কম খোলা মনের হয়, কম বহির্মুখী হয় এবং তাদের স্নায়ু-জনিত অনেক সমস্যাও দেখা দেয়।

দুশ্চিন্তা, অশান্তি, অস্থিরতা, মন খারাপ কমানোর অন্যতম উপায় হলো সামাজিক মেলামেশা বাড়ানো। দেখা যায়, যাঁদের বন্ধুবান্ধব বেশি বা নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে। তবে সেটা যেন ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ না হয়। কাজেই মাঝেমধ্যে সপ্তাহের কাজের ভিড়ে কিছুটা সময় রাখুন বন্ধু-আত্মীয়-প্রতিবেশীর সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন আড্ডা বা সময় কাটানোর জন্য। চাইলে তাদের নিয়ে একসাথে হাঁটতেও পারেন প্রতিদিন। এতে আপনার এবং তাদের হাঁটার উৎসাহ বাড়বে, মনে ফুর্তিও আসবে।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……ডাঃ তিনা শুভ্র

Home

(Weight Reduction and life-Style Medicine)

Leave a comment