এগিয়ে যেতে চাই

বাংলাদেশের মানুষ হিসাবে, বাঙালি হিসাবে আমরা প্রায়শই সমালোচনা করি আমাদের দেশ ও সমাজের নানা সমস্যা নিয়ে। ব্যক্তিগত কষ্ট অশান্তির অভিজ্ঞতা আর স্মৃতি অনেক সময় আমাদের এই নেতিবাচক আলোচনাকে আরও জোরদার করে তোলে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে সমস্যার আলোচনা ছাড়া সমাধান আসে না। আবার, শুধুই সমস্যার আলোচনা সবার জন্যই অলাভজনক। আমি নিজেও এই পরিস্থিতির বাইরে নই। তাই এবার ঠিক করেছি, কোন একটা সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি তার জন্য সমাধান নিয়েও আলোকপাত করব। আমি জানি আমার আলোকপাতে কারো লাভ হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অন্তত আমার মন ও শরিরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা মোটামুটি নিশ্চিত। তাই আসুন, সবাই মিলে উত্তরণের পথ খুঁজি, যার জন্য ভুল চিহ্নিত করা এবং তার সমাধান বের করা একই সমান জরুরি।

তাহলে আর দেরি কেন? আসুন, আজকের সমস্যা আর সমাধান নিয়ে লেগে পড়ি! সবাই জানেন, মূল্যস্ফীতি আমাদের জন্য এক বিরাট এবং চলমান সমস্যা। সব কিছুর দাম সব সময়ই বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তাও সমানুপাতিক হারে বাড়ছে, বাড়ছে অসন্তুষ্টি। দুর্নীতি কমতে হবে, নীতি বাড়তে হবে, আন্তরিক হতে হবে, সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হতে হবে, আরও কত কি সমাধান আমরা রোজ শুনি এবং শোনাই। এগুলো সবই কাজের কথা। কিন্তু মাথার আকার বেশি বড় হয়ে গেলে তার ভারে শরিরের আর উঠে দাঁড়ানো হয় না। তাই প্রাথমিক সমাধান হওয়া দরকার হাল্কা, স্মার্ট এবং ভীষণ কাজের যেন তা দ্রুতই অন্যান্য প্রয়োজনীয় সমাধানকে সহজেই আকৃষ্ট করে।

খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই সব কিছুরই দাম বাড়ে। এমন দেশ নেই যেখানে এই পরিবর্তন নেই। সে হিসাবে আমাদের দেশে একটা জিনিসেরই দাম বাড়ে না, যা বাড়লে বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রন সম্ভব হত। তা হল, মানুষের দাম। মানে, মানুষের দাম প্রতিদিন আমরা নানা ভাবে কমিয়েই চলেছি। মানুষের মূল্য বাড়াতে পকেটের পয়সা খরচ মোটেও জরুরি নয়। মানুষের বাজার তার নিজের মধ্যে, কিম্বা তার পরিবার বা সমাজের কাছে, অথবা তার চারপাশের মানুষের কাছে। পয়সা খরচ না হলেও যেন মানুষকে যোগ্য মূল্য দেয়া আমাদের জন্য ভীষণ ব্যায়বহুল ব্যাপার। অথচ, তখনই দ্রব্যমূল্য অসহনীয় হয়ে ওঠে যখন মানুষ আরও মূল্যহীন হয়।

আমি জানি, আমার এই সমাধান হয়ত বাঘা অর্থনীতিবিদদের কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে। তাই, তত্ত্বকথা বা তর্কে না গিয়ে আসুন বাস্থব প্রয়োগ থেকে এর উপকারিতা জেনে নেই, আজই। বাজারের বর্তমান দ্রব্যমূল্য যা রয়েছে সে অবস্থাতেই মানুষের দাম একটু বাড়িয়ে দিন। ভাবছেন, কাকে দিয়ে শুরু করবেন? খুব সহজ। প্রথম নিজেকে মূল্য দিন। ভাবতে পারেন, কিভাবে নিজেকে মূল্য দেব? ভেবে দেখুন, মুল্যবান হীরক খণ্ড আমরা কিভাবে নাড়াচাড়া করি? যত্নের সাথে, তাইনা? যেখানে সেখানে ফেলে রাখি না, আঘাত বা ময়লা লাগতে দেই না, দেখতে যেমনই হোক তার জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে এক ধরনের মায়া এবং ভালবাসা অনুভব করি। সেটা অধিকারে থাকাতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেই। এগুলো কি নিজের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না? দেখুন না চেষ্টা করে। তারপর নাহয় একই ভাবে পরিবারের আপনজনদের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করে দেখুন। যদি এতে আপনার জীবনধারায় ইতিবাচক বদল না আসে, তাহলে নাহয় এ চিন্তা বাদ দিয়ে দিবেন। আর যদি এটা কাজে আসে, তাহলে প্রতিবেশি থেকে শুরু করে অন্য সবাইকেই মূল্য দিতে শুরু করুন। দেখবেন, বাজারে আগুন থাকলেও মানুষের মন অনেকটাই শীতল অনুভব করবে!

আর হ্যাঁ, এতে নিজে উপকার পেলে অন্যের সাথে এটা শেয়ার করুন, দেখবেন ব্যাঙ্কের সুদের মত আপনার ভেতরের শান্তিও চক্র বৃদ্ধি হারে বাড়বে।

Leave a comment