
আজকাল অনেকেরই বেশ অল্প বয়সে হাই ব্লাড প্রেসার হতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেরই আবার দুবেলা প্রেসারের ওষুধ খাওয়ার পরেও নিয়ন্ত্রণে থাকছে না প্রেসার। এ নিয়ে নানান দুশ্চিন্তা আপনার, কেন যে আপনার প্রেসার কমছে না।এ ক্ষেত্রে ওষুধের চেয়েও বেশি কাজে দেয় লাইফস্টাইল পরিবর্তন। জীবনযাপনে খুব ছোট ছোট বদল এনে, আপনি আপনার শুধু ব্লাড প্রেসার কেন আরও অনেক ভয়াবহ রোগ থেকে শরীর ও মনকে রাখতে পারেন সুস্থ। ব্লাড প্রেসারের ওষুধ হয়তো আপনার প্রেসার অনেকখানি নিয়ন্ত্রনে আনলেও, শুধুমাত্র জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন আপনাকে এনে দিতে পারে পরিপূর্ণ অনাবিল আনন্দ ও সুস্থ জীবন। তাই আজ আমরা আলাপ করবো, যে জীবনযাত্রায় ঠিক কি কি পরিবর্তন আনলে, হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
১।বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলুনঃ
রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে সর্ব প্রথম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজন বাড়লে হার্ট বেশি পাম্প করবে। ফলে রক্তচাপ বাড়বে। তাই উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের কোমরের মাপ যদি ৪০ সেন্টিমিটারের বেশি হয়, এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার কোমরের মাপ যদি ৩৫ ইঞ্চির বেশি হয়, তাহলে অবিলম্বে বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলতে হবে।
২। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা হালকা থেকে ভারী ব্যায়াম করুনঃ
শরীরের বাড়তি মেদ বা ওজন কমাতে এবং শরীর ও হার্টকে সচল রাখতে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট বা পাঁচদিন ৩০ মিনিট করে হালকা থেকে ভারী ব্যায়াম করুন।
এক্ষেত্রে, জোরে জোরে হাঁটা – মানে ঘাম ঝরিয়ে হাঁটলে, দৌড়ালে, সাইক্লিং করলে অথবা সাঁতার কাটলে শরীর চালু ও চনমনে থাকে। হাঁটাতে শুধু হাই ব্লাড প্রেশারই নয়, লো ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩। খাদ্যতালিকায় উদ্ভিজ্জ খাবার বেশি রাখুনঃ
রোজকার খাবারে রকমারি ফল ও প্রচুর শাকসব্জি রাখুন। কারণ, এ সবের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম, প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগলে অ্যানিমাল প্রোটিন কম খেতে হবে।
৪। খাদ্যতালিকায় লবন কমিয়ে দিনঃ
রক্তচাপ বেশি হলে লবণের কথা মাথায় রাখতে হবে। লবণের সোডিয়াম ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। খাবার পাতে বাড়তি লবন খাবেন না। রান্নায় যথাসম্ভব লবন কমিয়ে দিন।
বাদ দিতে হবে প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড, টিন ফুড, প্যাকেট ফুড, রেডি টু ইট ফুড, আচার, চিপস ইত্যাদি। কারণ এগুলোতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে লবন মেশানো থাকে। ফ্রেশ রান্না করা খাবার খান।
৫। প্রচুর পানি পান করুনঃ
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কারণ পানি হল ডাইইউরেটিক। পানি শরীরের পি-এইচ ভারসাম্য বজায় রাখে। পানি শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক পদর্থগুলোকে বের করে দেয়। এগুলো বেরিয়ে গেলে শরীরে রক্তের চাপ কমে।
৬। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস লেভেল কমানঃ
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বাড়লে ব্লাড প্রেসার বাড়ে। আবার উল্টোটাও হয়। ব্লাড প্রেসার বাড়লে স্ট্রেস বাড়ে। স্ট্রেস বাড়লে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে। ফলে প্রেসার বাড়ে। তাই রক্তচাপকে বশে রাখতে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি। সে ক্ষেত্রে দরকার মতো কাউন্সেলিং করে ওষুধ খেতে হতে পারে।
৭।সারাদিনে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি।
৮। ধূমপান, মদ্যপান পরিত্যাগ করুন।
৯। অন্যান্য রোগ যেমন, ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কারা আছেন এই হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকিতে:
মোটা বা স্থূলকায় ব্যক্তি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী এবং যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি।
হাই ব্লাড প্রেসার আজ সারা বিশ্বে “সাইলেন্ট কিলার” নামে প্রতিনিয়ত শত শত মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, তাই যাদের হাই ব্লাড প্রেসার হয়েছে বা এখনো হয়নি, তাদের জন্য আমাদের একটাই সমাধান, তা হোল,
“হাঁটাহাঁটি, চলাফেরা করুন! ওজন কমান! সুস্থ থাকুন!”
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style medicine)
