চল সবাই মেডিটেশন করি আর নিজেকে নিজেই চালাই….

বর্তমানে অনেককেই মেডিটেশন করতে শুনা যায়। ঠিক বুঝে উঠতেও পারি না যে, মেডিটেশন কেন করবো বা কিভাবে করবো। আবার ভাবি, মেডিটেশন বা ধ্যান, আসলে সেটা শুধুমাত্র সময় অপচয় নাতো? এমন ভাবনা যদি মনে উঁকিও মারে, অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই। কারণ, নেট যুগের জেট গতি-র সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে যে রেটে আমরা দৌড়োচ্ছি তাতে সেকেন্ড নষ্ট হওয়ার মানে লাখ টাকার অপচয়! কিন্তু একটু ভাবলেই দেখা যাবে, রোজকার টেনশন, কাজের চাপ, অতিরিক্ত চিন্তার ধাক্কা সামলে সুস্থ থাকার এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে ‘মেডিটেশন’। কীভাবে?

মেডিটেশন কিঃ

মেডিটেশন হোল এক প্রকার মনের ব্যায়াম। এটি সচেতনভাবে দেহ, মন এবং ব্রেইনকে রিলাক্স বা শিথিল করার আধুনিক বৈজ্ঞানিক এবং সহজ প্রক্রিয়া। মেডিটেশনের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র মনকেই একাগ্র বা ফোকাস করি, নির্দিষ্ট কিছুক্ষ্ণের জন্য নিজেকে দূরে সরিয়ে আনি দৈনন্দিন জীবনের শত সমস্যা থেকে। এতে মনে আসে শান্তি, ধীরে ধীরে কাজে মনোযোগ বাড়ে, নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরে আসে।

সকল ধর্মেই ধ্যানের ব্যাপারে বিশেষভাবে উল্লেখ করা আছে। আমরা যে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, সেটাও একধরনের ধ্যান, যা শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার সাথেই করছি। কিন্তু আফসোস, অনেক সময়ই আমাদের ধ্যান ঠিকমতো হয় না, নানা চিন্তা, নামাজের সময় মাথায় চলে আসে। আমরা যদি সঠিক ভাবে শুধু নামাজের ধ্যান করতে পারতাম, তাহলে আমাদের এতো সমস্যা থাকতো না।

আমরা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে একসাথে অনেক ব্যাপার নিয়ে আমাদের মনকে ব্যস্ত রাখি। ধ্যানের সময় আমরা যে কোন একটা ব্যাপার নিয়ে ভাববো, সেই ব্যপারটা নিজের অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখতে চেষ্টা করবো। নয়তো কিছুই ভাববো না, চোখ বন্ধ করে নিজের নাকের ভিতর যে বাতাস যাচ্ছে আর আসছে সেটা খেয়াল করবো আর এটাই হোল ধ্যান।

মেডিটেশনে বা ধ্যানে প্রতিটি শ্বাস নিতে হবে সচেতনভাবে ও যত্নসহকারেঃ

সচেতনভাবে শ্বাস নেওয়াটা আপনার স্ট্রেস বা অশান্তি কমাতে সাহায্য করবে৷ প্রতিটি শ্বাস নেওয়ার সময় যদি আপনি সতর্ক থাকেন, তা হলে অক্সিজেন ব্যাবহারের পরিমাণ অনেকগুন বেড়ে যায়, ফলে উত্তেজনা কমবে স্বাভাবিক নিয়মেই৷ সুবিধের ব্যাপারটা হচ্ছে যে, এটা করার জন্য আপনার কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, অফিসের সিটে বসে বা বাড়িতে নানা কাজ করতে করতেও তা করা সম্ভব৷ যদি পারেন, তা হলে চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিন ৫ গুনতে গুনতে, তারপর ১০ গুনতে গুনতে তা ছাড়ুন৷ এতক্ষণ দম ধরে না রাখতে পারলে সময়টা কমিয়ে নিন, তবে যতক্ষণে শ্বাস নেবেন তার দ্বিগুণ সময়ে ছাড়তে হবে৷ প্রতিবার ১০টি করে অভ্যেস করুন৷ শুধুমাত্র শ্বাস নেয়া ও ছাড়ার উপর মনোযোগ দিতে হবে, অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে।

মেডিটেশন বা ধ্যান যে কোন অবস্থাতেই করা যায়, দাড়িঁয়ে, বসে, শুয়ে (তবে হেঁটে হেঁটে না করাই ভালো)। যে কোন সময়, খাবার আগে বা পরে, সকালে বা বিকালে বা রাতে এবং যতক্ষন ইচ্ছা। ধ্যানের কোন বিধি নিষেধ নেই। তাই যখনই সুযোগ পাবেন একটু ধ্যান করে নিবেন। প্রতিদিনের ৫মিনিটের ধ্যানও আপনাকে দিতে পারে একটি নিয়ন্ত্রিত সুশৃংখল জীবন। অনাবিল প্রশান্তি। যা আপনি লাখ লাখ টাকা খরচ করেও একবিন্দু পাবেন না।

………তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style Medicine)

Leave a comment