আমাদের সমাজে শিক্ষা, শিক্ষিত আর অশিক্ষিতের চর্চা অনেক পুরাতন । সন্তানকে শিক্ষিত করতে আমরা স্কুলে পাঠাই। স্কুল শেষে কলেজ। তারপর উচ্চশিক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়। যারা তারপরেও প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করেন তারাতো যেন আমাদের সমাজের মুকুট। কিন্তু প্রশ্ন হল কি এই শিক্ষা? জ্ঞান – এটাই শিক্ষার সবচেয়ে সাধারণ সমার্থক শব্দ, অন্তত আমাদের সমাজে। কিন্তু কি জ্ঞান অর্জন করব? যে কোনো জ্ঞান অর্জনই কি শিক্ষা ? কি শিক্ষা চাই আমরা, আর কি শিক্ষা আমাদের প্রয়োজন? অনেক প্রশ্নই করা যেতে পারে শিক্ষা বিষয়ে।
প্রাথমিক ভাবে আমরা যে শিক্ষা গ্রহন করি তা মূলত অক্ষর শিক্ষা, অর্থাৎ লিখতে এবং পড়তে শেখা। একে শিক্ষা না বলে স্বাক্ষরতা অর্জন বলা আরও ভালো। এটা শিক্ষা অর্জনের অন্যতম ভিত্তি। আর এর কারণ খুবই সাধারণ। স্বাক্ষর মানুষ পড়বে, জানবে, ফলে শিক্ষিত হবে। কিন্তু কি পড়বে? আমাদের প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থায় যা পড়ানো হয় তাই – এটাই হয়ত অনেকের তৈরি জবাব। কিন্তু প্রথার ঊর্ধ্বে উঠে ভেবে দেখুন তো, কি পড়তে চান আপনার এই সীমিত জীবনের মূল্যবান সময় গুলোতে। এ ক্ষেত্রে আমার জবাব হতে পারে, যা আমাকে বাস্তবে উপকৃত করবে এবং তা হবে শান্তি ও আনন্দের সাথে, আমি তাই পড়তে চাই। তাহলে এবার ভাবুন, আপনার কি ইচ্ছা?
আবারও, উপকার, শান্তি, আনন্দ – এগুলোর সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। তবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা একটা নির্ধারিত রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই, দেশের/সমাজের মানুষের ঠিক কি ধরনের উপকার প্রয়োজন তার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার পরিকল্পনাও করা যেতে পারে। তবে যতদিন সে রকম ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে না ওঠে, সে পর্যন্ত কি হবে? তার জবাবও বোধ হয় খুব জটিল না। ধরুন, দেশের প্রথাগত পোশাক লুঙ্গি আর গেঞ্জি। কিন্তু আপনি যখন নিজের জন্য ভালো কোন পোশাক কিনতে যান তখন নিশ্চয়ই প্রথাগত পোশাকে সীমিত থাকেন না; বরং নিজের পছন্দ আর প্রয়োজন মত সবচেয়ে মানানসই পোশাকটাই কিনে নেন। তাহলে, যদি নিজের কল্যাণ আর শান্তির জন্য শিক্ষিত হতে চান, তার জন্য প্রথাগত শিক্ষার দোহাই দিয়ে বসে কেন থাকবেন?
হতে পারে, বেতের বাড়ি কিম্বা উচ্চনম্বরের স্বপ্ন আপনাকে প্রথাগত শিক্ষায় ধরে রাখে যা আপনার ব্যাক্তিগত শিক্ষায় নেই। কিন্তু সত্যিকারের চাহিদা পূরণ আর মনের ফুর্তি বেত বা উচ্চ নম্বরের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালি সহায়ক হতে পারে। শুধু আপনাকে ভাবতে হবে, ঠিক কি আপনি চান আর তা বাস্তবে কিভাবে করা সম্ভব। মনে হতে পারে, যদি নিজের পছন্দ মত শিক্ষা ভুল পথে নিয়ে যায় তাহলে কি হবে? খুবই ঠিক। তবে নিজেকে বিশ্বাস করার প্রবনতাও ভালো শিক্ষারই চিহ্ন, তাই যদি তা না পেয়ে থাকি, শীঘ্রই তা শিখে নেই। আর প্রথাগত শিক্ষা তো চলমান থাকছেই মূল ধারায়, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতান্ত ভুল প্রমান হলে নাহয় প্রথাকেই মেনে নেবেন!
তাহলে আর দেরি কেন? কাজ শুরু করে দিন নিজেকে মনের মত শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে। শুধু সাবধান, মনের মত শিক্ষাকে তুলে ধরতে প্রথাগত শিক্ষাকে যেন ছুড়ে না ফেলেন, মনে রাখবেন, যে প্রথার মাঝে আমরা বাঁচি, তাকে ছুঁড়ে ফেলা কোন দিক থেকেই নিরাপদ নয়।
