
…………………
ফ্যাটি লিভার, নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে এটা কি, যখন অতিরিক্ত পরিমান চর্বি বা ফ্যাট লিভারে জমে যায়, তখনই তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। সাধারণত লিভার ফ্যাট তৈরি করে। রক্তের মধ্যে দিয়ে তা পেশিতে পৌঁছায়। লিভার যতটা ফ্যাট তৈরি করছে, আর যতটা খরচ করছে তার মধ্যে যদি ভারসাম্য না থাকে, অর্থাৎ ফ্যাট যদি বাড়তি হয়ে যায়, তা হলে সেটা লিভারে জমে। আর এটাই ফ্যাটি লিভার। সাধারণত ২ ধরনের ফ্যাটি লিভার দেখা যায়,
১। মদ ঘটিত বা অতিরিক্ত মদ্য পানের জন্য হয়ে থাকে (উন্নত বিশ্বে বেশি দেখা যায়)
২। অ-মদ ঘটিত যা অতিরিক্ত চর্বি লিভারে জমার কারণে হয়ে থাকে। (আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়)
কিভাবে এই ফ্যাটি লিভার থেকে পরিত্রাণ পাবেনঃ
১. অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করুনঃ
মুটিয়ে যাওয়া বা ওবেসিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ ফ্যাটি লিভারের। আপনার শরীরের ওজন থাকতে হবে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী। ওজন কমালে দেখা যায় পাঁচ থেকে ১০ ভাগ লিভারের চর্বি কমে যায়।
প্রতিদিন নিয়ম করে জোরে জোরে হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত ওজন কমাতে হাঁটার কোন বিকল্প নেই।
২। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করুনঃ
ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, প্রানিজ চর্বি বাদ দিন আর উদ্ভিজ্জ চর্বি বা তেল খান। ওমেগা-৩ তেলযুক্ত মাছ, যেমন, ইলিশ, রুপচাঁদা, স্যামন, টুনা লিভারের চর্বি কমাতে সহায়ক। এর বাইরে নানা ধরনের বাদাম ফ্যাটি লিভারের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। প্রচুর পরিমাণে আঁশ আছে এমন শাকসবজি ও তাজা ফলমূল খেতে হবে। ফুলকপি, ব্রকলি, সবুজ শাক, ছোলা, বীজ ভালো। খেতে হবে আমিষের উৎস হিসেবে নানা ধরনের ডাল ও লো ফ্যাট দুধ।
৩। চিনি বা শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুনঃ
ফ্যাটি লিভারের জন্য অনেকাংশে দায়ী চিনি বা শর্করা। অতিরিক্ত শর্করাই চর্বি হিসেবে লিভারে জমা হয়। তাই উচিত হবে শর্করাজাতীয় খাবার, বেশি চিনি, কোমল পানীয়, জুস, শরবত, মিষ্টি ইত্যাদি পরিহার করা। ভাত কম খেয়ে বরং লাল আটার রুটি, ওটমিল ও জটিল শর্করা গ্রহণ করা।
৪। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় টক জাতীয় ফল রাখুন, যেমন, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, আমলকী ইত্যাদি। টক ফল লিভারের জন্য বেশ উপকারি।
৫। পরিমাণ মত পানি পান করুনঃ
লিভার ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হোল পর্যাপ্ত পানি পান করা।
৬।ধুমপান ও মদ্যপান বাদ দিন।
৭। ডায়াবেটিস বা রক্তের চর্বি পরিক্ষা করাঃ
রক্তের সুগার, কোলেস্টেরল, লিপড প্রফাইল বা ট্রাইগ্লিসারাইড, এল ডি এল, এইচ ডি এল ইত্যাদি পরিক্ষা করা জরুরী।
ডায়াবেটিস বা লিপিড প্রোফাইল বেশি থেকে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ৪০-৬০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটা বা ব্যায়াম আপনার রক্তের চিনি ও চর্বিকে অনেকটা কমিয়ে আনতে পারে।
একটাই আসল পরামর্শ । ভালমতো পরিশ্রম করুন। শরীরটাকে ভাল করে খাটান। যাঁদের কাজের ধরনটাই এমন যে খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম হয় না, তাঁদের বিকল্প ভাবতে হবে। প্রচুর ব্যায়াম করুন বা জোরে জোরে হাঁটুন, তা বাড়িতেই হোক বা জিমে হোক, প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম দরকার। ফ্যাটি লিভারের প্রতিরোধ ডাক্তারের হাতে না। নিজের হাতে। যেটি সবচেয়ে প্রধান চিকিৎসা সেটি হলো জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন।
যেকোন রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…………….
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style Medicine)
