
আপনি কি জানেন গবেষকরা আমাদের খাদ্য তালিকার ৪ টি জিনিসকে “সাদা বিষ” বলে আখ্যায়িত করেছেন? সাদা লবণ, সাদা চিনি, সাদা ভাত আর সাদা আটা- এই চার খাবারকে পুষ্টিবিদেরা ‘সাদা বিষ’ বলছেন। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ যদি সাদা লবণ, সাদা চিনি, সাদা ভাত বা সাদা রুটি বেশি পরিমাণে খায়, তাহলে দ্রুত মোটা হয়ে যাবে, যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সুস্থ থাকতে হলে পরিমাণমতো খেতে হবে এই চার ‘সাদা বিষ’। আসুন জেনে নেই, কি আছে এই সাদা খাবারগুলোতে
সাদা চাল তথা রিফাইন্ড চালঃ
সাদা চাল প্রস্তুত করার সময় চালের উপরিভাগের লেয়ার ও জীবাণু সরিয়ে ফেলা হয়। ফলে চালের ভেতরের অংশটুকু (এন্ডোস্পার্ম) রয়ে যায়। যে অংশে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে। দৈনিক সাদা চালের ভাত খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যায়। দেখা দেয় ডায়বেটিসের ও ওবেসিটি সমস্যা। এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাদা চালের ভাত খাওয়ার ফলে ডায়বেটিস দেখা দেবার সম্ভবনা ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। চাল অতিরিক্ত সাদা করার কারণে সেই চাল থেকে রান্না হওয়া ভাতে শর্করা ছাড়া আর তেমন কোনো পুষ্টিগুণ থাকে না। এ জন্য এই খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। এতে মানুষের ক্ষুধা বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে মানুষের বেশি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এ কারণে মানুষ দ্রুত মোটা হয়ে যায়।
সাদা চিনি তথা রিফাইন্ড চিনিঃ
সাধারণত আখের রস থেকে তৈরি করা হয় সাদা চিনি। চিনি তৈরির এই প্রক্রিয়ার সময় মেশানো হয় ক্যামিকেল। যা এতে উপস্থিত উপকারী ভিটামিনকে বিনষ্ট করে দেয়। এছাড়াও চিনি ব্লিচিং করার জন্য, মানে সাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম সালফেট ও সালফিউরিক অ্যাসিড। ওই পরিশোধন করা চিনিতে শুধু কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা মানুষকে মোটা করে তুলতে সহায়তা করে।
রিফাইন্ড লবনঃ
প্রাকৃতিক লবণে থাকে আয়োডিন। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে রিফাইন্ড লবণ তৈরির জন্য লবণ থেকে আয়োডিন সরিয়ে ফেলা হয়। রিফাইন করার সময় এতে যুক্ত করা হয় ফ্লোরাইড। অতিরিক্ত ফ্লোরাইড গ্রহন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া রিফাইন্ড লবণ খাওয়ার ফলে দেখা দেয় উচ্চরক্ত চাপের সমস্যা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাজার থেকে চিনির ১৬টি নমুনা সংগ্রহ করে সিঙ্গাপুর থেকে পরীক্ষা করায়। সেই পরীক্ষায় বাংলাদেশে আমদানিকৃত সাদা চিনিতে উপস্থিত ছিল কৃত্রিম উপাদান সোডিয়াম সাইক্লামেটের, যেটি পরিচিত ঘনচিনি নামে।
সাদা পাউডারের মত পদার্থ সোডিয়াম সাইক্লামেট বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৬ সালে। চিনির চাইতে ৩০-৫০ গুণ বেশি মিষ্টি, দামে কম এ পদার্থটি স্বাদে চিনির সাথে তফাৎ কম।
এই উপাদানটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে নিষিদ্ধ।
তারপরও চিনিতে নির্দ্বিধায় মেশানো হচ্ছে এই উপাদান। কেন মেশানো হচ্ছে, এই প্রশ্নের যেমন কোন জাবাব নেই, তাই আমাদেরও উচিত হবে এই সাদার পরিবর্তে, লাল চিনি, লাল চাল, লাল আটা ও পিঙ্ক লবন (হিমালয়ের গোলাপি লবন)খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, আর তা হতে হবে অবশ্যই পরিমানমতো।
না জেনে কিংবা না বুঝে প্রতিদিন নিজেদের ক্ষতি করছি আমরা। সুস্বাস্থ্যের জন্য তাই সচেতন হওয়া প্রয়োজন আজ থেকেই।
………চলবে।
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and life-Style Medicine)
