খারাপ কথা

আজ একটা বাজে বিষয়ে লিখবো যা সচাররচর কেউ মুখে আনেন না। কি ভয় পাচ্ছেন? ভয় পেলে বরং এড়িয়ে যান, না পড়াটাই ভালো। আর যদি পড়েই ফেলেন, তাহলে যে কোন মন্দ অনুভুতির জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নেব।

গতকাল বিকালে হাঁটতে বের হয়ে অন্য রকম একটা জায়গায় গেলাম। অদ্ভুত আর সুন্দর। একেবারেই অন্য রকম। বিশাল একটা কবরস্থান যেখানে লাখো মানুষের মৃত্যু পরবর্তী স্মৃতি ধরে রাখা হয়েছে দারুন শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা আর শৈল্পিকতার মধ্য দিয়ে। হয়ত একসাথে এত মৃত্যুর চিহ্ন আগে কখনো দেখিনি। এ যেন যত জীবন ঠিক ততই মৃত্যু।

কিন্তু কোথায় মৃত্যু? আমি তো কোথাও দেখছিনা। সকাল থেকে রাত অবধি যা কিছু করে চলেছি তার মধ্যে কোথাও মৃত্যুর কোন চিহ্ন তো নেই। বরং চিহ্ন রয়েছে অনন্তকাল মৃত্যুহীন জীবনের। তাহলে কি আমরা মৃত্যু পরবর্তী জীবনের ভক্ত? কিন্তু তাই বা হয় কিভাবে, স্বজনের মৃত্যু পরবর্তী বিলাপ দেখলে তো বরং মনে হয়, এই শেষ, আর কিছুই বাকি নেই!

কি আশা করছি আমি? মানুষ প্রতিদিন মৃত্যু চিন্তায় শুকনো মুখে হতাশ জীবন যাপন করবে!? না, মোটেও না। সব কিছু মিলেই মানুষ শান্তির জীবন পাবে এটা আমারও আকাঙ্ক্ষা। শুধু এততুকুই আমার আশা যে, যে পথটা শেষ হবে নিশ্চিত, তাকে অশেষ পথের মত করে পার করবো না।

কোনটা অস্বাভাবিক, মৃত্যুকে মনে রাখা, নাকি মৃত্যু নেই এমন ভাবে তাকে ভুলে যাওয়া? আপনজনের জীবনাবসানে আমাদের অদৃষ্টের দিকে যে তীব্র প্রতিবাদ, তাই বা কততুকু স্বাভাবিক?

পাথর হৃদয় কাপুরুষ আমি যখনই কোন আপনকে চলে যেতে দেখি, কেঁপে উঠি নিজের চলে যাবার কথা স্মরণ করে। ব্যাস্ত হয়ে পড়ি নিজের জীবনকে ঠিকঠাক মত গুছিয়ে কিম্বা শুধরে নিতে। আপনের চলে যাওয়া কষ্টের হলেও তা ঠিক আমার জীবনেরই মত, এই চিন্তা কেন যেন এক ধরনের প্রশান্তিমূলক বোধের জন্ম দেয় মনের ভেতরে। অবশ্য চারপাশের মানুষ আমার প্রশান্ত চেহারা দেখে বলে, অধিক শোকে আমি পাথর হয়ে গেছি। হতে পারে তাই, আবার হতে পারে, কোন এক অজানা কারণে কেউই প্রাকৃতিক মৃত্যুতে প্রশান্তি দেখতে চায় না।

শান্তি চাই। জীবনেও, মৃত্যুতেও। অর্থপূর্ণ চাই সবটাকেই। তাইতো সবটা মনে রেখেই চলুন জীবনের পথ চলি, চক্ষুষ্মানের মত।

Leave a comment