ছানার পানি (Whey) কাজে লাগতে পারে ডায়াবেটিক রোগীদের…

বহুবছর ধরে এই ছানা ও ছানার পানি ক্রীড়াবিদদের মাংস পেশি গঠন ও ফ্যাট বা চর্বি ভাঙ্গার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

যাই হোক বর্তমান বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শুধুমাত্র ছানার পানি ব্যাবহার করে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীরা আশানুরূপ ফল পেতে পারেন। চলুন দেখে নেই কিভাবে…।

১। ছানার পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যামিনো এসিড, (এল-সিস্টিনঃ)

ছানার পানিতে থাকা অ্যামিনো এসিড (এল-সিস্টিন), শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেনট তৈরিতে সাহায্য করে। যাদের ডায়াবেটিস (Insulin Resistance) থাকে, তাদের শরীরে, ইনসুলিনকে অকার্যকর (Insulin Resistance) করতে কিছু ফ্রিরেডিক্যাল তৈরি হয়। ছানার পানির অ্যামিনো এসিড এই ফ্রিরেডিক্যালগুলিকে নিস্ক্রিয় করে দেয়। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের উপকার হয়।

২। শরীরের ট্রাই গ্লিসারাইড (এক ধরনের ফ্যাট) কমাতে সাহায্য করেঃ

সাধারণত ডায়াবেটিক রোগীদের  রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইডের পরিমান বেশি থাকে। এই ছানার পানি ট্রাই গ্লিসারাইডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য কর।

৩। ইন্সুলিনের সিক্রেশন বাড়ায়ঃ

সাধারণত খাবার খাওয়ার পর, ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে ইন্সুলিন পর্যাপ্ত থাকে না, তাই সুগারও চট করে বেড়ে যায়। ছানার পানি খাবার খাওয়ার পরে ইন্সুলিনের সিক্রেশন অনেকাংশে বেড়ে যায়, ফলে সুগার কমতে থাকে।

৪। এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহ প্রতিশেধকঃ

 শরীরে যে কোন ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ থাকলে, ওজন কমে না, আবার ডায়াবেটিক রোগীদের শরীরে নানা প্রকার ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ চলতেই থাকে। ছানার পানি যে শুধু ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমায় তা নয়, লিভার থেকে ফ্যাটও

কমায়।

৫। অল্প খাওয়াতেই তৃপ্তিঃ

ছানার পানি পাকস্থলী আস্তে আস্তে খালি করে ফলে, একটু একটু করে অল্প অল্প সুগার রক্তে আসে, এতে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রনে বেশ সুবিধা হয়। যেহেতু  ছানার পানি অনেক্ষন পেট ভরিয়ে রাখার অনুভূতি দেয়, ফলে দীর্ঘক্ষণ খিধা লাগে না, যা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কিংবা ওজন কমানো জন্য উপকারি।

কতটুকু খাবেনঃ

ছানার পানি খুব ঘনিভুত আমিষ। বেশি ভালো ফল পাবার আশায়, বেশি বেশি খাবার প্রয়োজন নেই। অল্পতেই ভালো কাজ হয়। প্রতিদিন ১৫-৩০ গ্রাম ছানার পাউডার পানিতে গুলিয়ে খেতে পারেন। বাইরের দেশে পাউডার (Whey Protein) আকারে কিনতে পাওয়া যায়। আর না পারলে , ১ কাপ পরিমান  ফ্রেশ দুধ জাল দিয়ে, কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে ছানার পানি তৈরি করে নিতে পারেন, তবে ১ কাপের বেশি দুধ নয়। কিন্তু নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধের পানি নয়।

বিশেষ লক্ষণীয়ঃ

উপরের লেখাগুলো পড়ে হয়তোবা আপনার মনে হতে পারে যে, এতো কষ্ট করে ছানার পানি কেন খাবো, তার বদলে ঐ পরিমান লো ফ্যাটের দুধ খেলেই হয়। হাঁ, ব্যাপারটা আপনি ঠিকই ধরেছেন। দুধ আর ছানার পানির প্রধান পার্থক্য হোল ফ্যাট বা চর্বিতে। ছানার পানিতে দুধের সকল উপাদান প্রায় একই থাকে, শুধুমাত্র ফ্যাট ছাড়া। যারা মোটা বা রক্তে চর্বি বেশি, তারা অনেক সময়ই দুধের ফ্যাটের কারনে, দুধ খেতে পারেন না। বঞ্চিত হন দরকারি প্রটিন ও অন্যান্য জরুরী খাদ্য উপাদান থেকে। আবার ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে চর্বি থাকে বেশি। অন্যদিকে দুধ তাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য খাদ্য। এক্ষেত্রে তারা এই ছানার পানির মাধ্যমে যেমন ইনসুলিনকে সক্রিয় করতে পারবেন, তেমনি চর্বির পরিমান না বাড়িয়ে দুধের সকল

খাদ্যাপাদান গুলো পেয়ে যাবেন। আবার ছানার পানি শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজনও কমাতে সক্ষম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের খাদ্য তালিকায় ছানার পানি থাকলে মন্দ হয় না।

ছানার পানিতে অ্যালবুমিন ও গ্লোবিউলিন নামে দু‌টি প্রোটিন থাকে, থাকে ল্যাকটোজ। ছানায় রিবোফ্ল্যাভিন নামে একটি ভিটামিন থাকে যা শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শরীরে শক্তি বাড়ায়।

এছাড়াও হরমোনাল ইমব্যালান্স, কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা, লো প্রেশার থাকলেও ছানার পানি খেতে পারেন। পেশি শক্ত করতে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ছানার পানি।

যে কোন রোগ বা অন্য শারীরিক সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ দরকার।

……তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com

(Weight Reduction and Life-Style Medicine)

Leave a comment