###পথের খোঁজে##০৮#

রাকীব এসেছে মিশাদের বাসায়; মিশাকে নিয়ে যাবে সাথে -রাকিব যাবে ভিসা মেডিক্যাল করাতে। মিশাদের বাসায় হাশিম সাহেবও এসেছেন মিনিট পাঁচ আগে। গরমে ঘামছেন তিনি। মিশার বাবা গোসলে , মা নেই বাসায়। হাশিম সাহেব রাকীবের সালামের উত্তর দিতে দিতে ভাবছিলেন রাকীবকে নিজেই একটু সাবধান করে দিবেন কী না। ঊনি মনস্থির করার আগেই রাকীব মিশার ঘরে চলে গেলো। হাশিম সাহেব বসে রইলেন জামান সাহেবের জন্য।

মিশা একটা স্কীন টাইট জিন্স আর একটা পলো পরেছে। ওড়ণা পরে নি। হাশিম সাহেব কিছু একটা বলতে গিয়ে চুপসে গেলেন। এই মেয়ের সাথে কথা বলা যায় না। তার মনে পড়ে একবার মিশাকে ড্রেস নিয়ে বয়ান করতে গিয়ে কী বিপাকে পড়েছিলেন তিনি। মিশাকে তিনি কুরানের আয়াত বলেছিলেন ইংরেজীতে অনুবাদ করে, সুরা নুর ৩১ নম্বর আয়াত-

“ And Tell The Believing Women To Subdue Their Eyes, And Maintain Their Chastity. They Shall Not Reveal Any Parts Of Their Bodies, Except That Which Is Necessary. They Shall Cover Their Chests, And Shall Not Relax This Code In The Presence Of Other Than Their Husbands, Their Fathers, The Fathers Of Their Husbands, Their Sons, The Sons Of Their Husbands, Their Brothers, The Sons Of Their Brothers, The Sons Of Their They Shall Not Strike Their Feet When They Walk In Order To Shake And Reveal Certain Details Of Their Bodies. All Of You Shall Repent To God, O You Believers, That You May Succeed”

মিশা এক সেকেন্ড দেরী না করে হাশিম সাহেবকে বলে – “ চাচা, এই সুরাতেই ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন –

“Tell the believing men that they shall subdue their eyes (and not stare at the women), and to maintain their chastity. This is purer for them. God is fully Cognizant of everything they do.”

তো পুরুষরা যদি এই আয়াত মেনে চলেন – তাহলে মেয়েরা কী পরলো না পরলো  তাতে কী এসে যায় ? সম্ভবত এই কারনেই  আল্লাহ বলেন সুরা আরাফে ২৪ নম্বর  আয়াতে– পুন্যতার পোশাকই আসল পোশাক ..

O children of Adam, we have provided you with garments to cover your bodies, as well as for luxury. But the best garment is the garment of righteousness. These are some of God’s signs, that they may take heed. চাচা আমরা নিজেদের অক্ষমতা অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের চাপিয়ে দিয়ে সুখ খুজতে চেষ্টা করি। নিজেদের ফাঁকি দিই। আল্লাহ কে ফাঁকি দেয়া কি সম্ভব চাচা?  

হাশিম সাহেব কোনো উত্তর দিতে পারেন নি সেদিন।

গুলশানের এক ক্লিনিকে মেডিক্যাল করতে এসেছে তারা। কাউন্টারে যে লোকটা বসে আছে তার বয়স রাকীবের চেয়ে বেশী হবার সম্ভাবনা  কম। লোকটার মুখে হালকা দাঁড়ী। রাকীব লক্ষ্য করে দেখেছে- অফিসারটির ফুল শার্টের হাত দুইটি কব্জীর ঠিক উপরে গুটানো। সেটা দেখে রাকীব আরো উতসাহী হয়ে লোকটার পায়ের নিচের অংশে তাকালো। ঠিক যা ভাবছিল – তা ই ষ দেখতে পেলো- পায়ের গোড়ালীর উপরে প্যান্ট গুটিয়ে রাখা। রাকীবের বুঝতে বাকী রইলো না এই লোক ইসলামী মৌলবাদী দলের সক্রিয় সদস্য।

কাউন্টারে আসা মাত্রই লোকটা হাসি মুখে বলল –

  • আসসাল্মু আলাইকুম রাকীব ভাই ওরফে রকফেস্ট। বিদেশ যাইতেসেন ?

রাকীবের সারা শরীর ঝি ঝি করে উঠলো মুহূর্তের মধ্যে। এই লোক কীভাবে তাকে চেনে ? এক রকমের ভয় ভর করে বসলো তার মনে। মাথা ভারী ভারী লাগতে শুরু করলো। মুখ হাসি হাসি করে সে সালামের উত্তর দিয়ে বলল- “ জী ভাই, কিছু দিনের জন্য খালার বাসা থেকে বেড়িয়ে আসবো আর কী….” মিথ্যা কথা বলতে রাকীবের খুব একটা ভালো লাগে না।

এবার লোকটা মিশার দিকে ইঙ্গীত করে বলল –“ ভাবী ও যাচ্ছেন না কি সাথে?”

রাকীবঃ না, উনি যাচ্ছে না। রাকীব মিশা যে ভাবী নয় সেটা বলার আগেই ভদ্রলোক-

“ ভাই, ভাবী না গেলে, উনা কে ঢেকে রেখে যাইয়েন। বিরানী উদলা রাখলে বিড়াল আইসা নিয়ে যেতে পারে… বুঝেন নাই ।।?? লোকটার মুখে  মিট মিট করে হাসি ফুটে উঠলো।

এবারে মিশা গর্জে উঠলো – “ এই যে, এতো কথা বলেন ক্যান ? মেয়ে মানুষ দেখলে ভালো লাগে না…  না? বিড়াল হয়ে যেতে ইচ্ছে করে ? দাঁড়ী রাখসেন ভন্ডামী করতে? “

লোকটা কথার উত্তর না দিয়ে মাথা নীচু করে মোবাইল ফোনটা নাড়া চাড়া করতে থাকলো।

এর মধ্যে রাকীবের ডাক এসে পড়ায় তারা ভিতরে ঢুকে গেল। রাকীব মিশাকে একটু সাবধানী হতে বলল কথা বার্তায়। কিন্তু মিশা খুব একটা পাত্তা দিল বলে মনে হলো না। প্রায় ঘন্টা খানেক লাগলো মেডিক্যাল শেষ করতে। বের হবার সময় কাউন্টারে লোকটাকে দেখা গেলো না। সেন্টার থেকে বের হয়ে রিক্সা নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রাকীবের মনে হোল কিছু যুবক মনে হয় তাদের ফলো করছে। রাকীবের ভয়টা আরো বেড়ে গেলো … বার বার মনে হতে থাকলো – কাউন্টারের লোকটার কথা। সে তাকে চিনে ফেলেছে … সে মৌলবাদী দলের লোক- নিশ্চয়ই রাকীবকে হাতের কাছে পেয়ে ছাড়তে চাই বে না। রিক্সা বা বেবী ট্যাক্সী – যা পাওয়া যায় সেটা নিয়ে ভেগে পড়াটা জরুরী। কিন্তু মিশার একটা রিক্সা বিলাসীতা আছে। সে রিক্সা ছাড়া যাবে না। রাকীবের মনে হচ্ছে প্রায় আট /দশ জন লোক তাদেরকে লক্ষ্য করে কথা বলছে। এদের সবার কাঁধে ব্যাগ। রাকীবের দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। রিক্সা পাওয়া যাচ্ছে না। মিশা কি যেন বলেই যাচ্ছে তাকে… সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

…চলবে…।        

One thought on “###পথের খোঁজে##০৮#

Leave a comment