
…………………
খিদের কেন্দ্রস্থল হলো আমাদের ব্রেইন। লেপটিন এবং গ্রেলিন নামে দুই ধরনের হরমোন রয়েছে, যা আমাদের খিদা জাগিয়ে তোলার জন্য দায়ি। গ্রেলিন হরমোন কাজ করে তখনই, যখন আমাদের পাকস্থলী খালি থাকে। আপনি যদি কোনো একটি বেলার খাবার বাদ দেন, তাহলে আপনার দেহে এ হরমোনটির মাত্রা বেড়ে যায় এবং এর সঙ্গে ক্ষুধাও বাড়ে ব্যাপকভাবে। এতে সামনে যে খাবারই আসুক না কেন, তা খাওয়ার লোভ সামলানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এতে আপনার ওজন আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
লেপটিন হরমোনের কাজ আবার একটু আলাদা। আমাদের দেহে যখন অতিরিক্ত চর্বি বা মেদ জমা হয়, তখন এই হরমোনের কাজ বাড়ে। মস্তিষ্কের যে তৃপ্তির স্থান সেটিকে এই হরমোন অনুভূতিহীন করে দেয়। আর তাই আপনি যতক্ষণ না নিজের পছন্দের খাবার পেট পুরে খাচ্ছেন, ততক্ষণ এই হরমোন আপনার খিদেকে জাগিয়ে তোলে, যা মোটেও আপনার পাকস্থলীর ক্ষুধা নয়। এটিই হলো আপনার চোখের খিদে।
তাই ওজন কমানোর জন্য আমাদের এমন কিছু করা উচিত, যাতে খিধা লাগবে কম আবার অল্প খাবারেও যেন সন্তুষ্টি চলে আসে। এক্ষেত্রে আমাদের দরকার গ্রেলিন হরমোন কমানো এবং লেপটিন হরমোন বাড়ানো। মজার ব্যাপার হোল, সমাধান কিন্তু একই। আসুন দেখে নেই কি সমাধান…।
১। একই সঙ্গে বেশি পরিমাণে না খেয়ে, বারবার অল্প করে খাওয়া ভালো। এর ফলে আমাদের বিপাক ক্রিয়া যেমন ভালো থাকে, তেমনি গ্যাসট্রিকের রোগীদের জন্যও এটি বেশ উপকারী। এতে গ্রেলিন হরমোনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। অতিরিক্ত খিধা লেগে, বেশি খাবার প্রবনতা কমে যায়। একই সঙ্গে এই অভ্যাস আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সহায়তা করে।
২। খাবারে প্রোটিন বাড়িয়ে দেয়াঃ
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে Pyy ও GLP-1 নামে দুটি হরমোনের পরিমান বাড়ে৷ তাদের প্রভাবে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে৷ আসে তৃপ্তি৷ ।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে ঘ্রেলিন হরমোনের পরিমান কমে যায় বলে কথায় কথায় খিদে পায় না৷ কম খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়৷ তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন খান।
৩। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমঃ
রাতে ঘুম ভালো না হলে, ঘ্রেলিন হরমোন বাড়ে এবং লেপটিন হরমোন কমে, ফলে খাওয়াও বেড়ে যায়, ওজনও বাড়তে থাকে।
৪। শরীরে মাংসপেশির পরিমান বাড়ানোঃ
শরীরে চর্বিহীন মাংসপেশি যত বেশি হবে, ঘ্রেলিন হরমোন ততো কম বের হবে। আর মাংসপেশি বাড়ানোর উপায়ই হোল ব্যায়াম। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরী।
৫। যেকোনো ক্রাশ ডায়েট বা দীর্ঘমেয়াদী ডায়েট না করাঃ
সাধারণত খালি পেটে ঘ্রেলিনের সিক্রেশন বাড়ে, আবার পেট ভরে গেলে কমে যায়। তাই যখনই আমরা ক্ষুধার্ত থাকি, তখনই এই হরমোন বেড়ে যায়। যখনই আমরা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট শুরু করি, তখন থেকেই ঘ্রেলিন হরমোনের পরিমান বাড়তে থাকে। আর এজন্যই ডায়েট করা অবস্থায় আমাদের খিধা লাগে অতিরিক্ত। লম্বা সময় ডায়েট করায় সাময়িক সুফল পেলেও, পরবর্তীতে ঘ্রেলিন সিক্রেশনে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।
৬। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, বিভিন্ন বাদাম ও বিচি ঘ্রেলিন ও লেপটিনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
৭। অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনি না খাওয়াঃ
অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার ঘ্রেলিন হরমোনকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে মিষ্টি খেলে, বারবার খেতে ইচ্ছা করে, যা নেশার মতো কাজ করে।
৭। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া।
মানুষের বয়স, উচ্চতা ও লিঙ্গ অনুযায়ী নির্ভর করে শারীরিক ওজন কেমন হবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হরমোন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা উচিত না।
যেকনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
………………..
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style Medicine)

Bhalo. Thank you
LikeLike