আমার ভুঁড়ি মনে হয় এ জীবনে আর কমবে না…!! (পর্ব, ১)

……………………………………………………

বেশির ভাগ মানুষের কাছে মেদভুঁড়ি যেন অপ্রতিরোধ্য এক বিরাট সমস্যা। অনেকের দেখা যায় শরীরের অন্যান্য অংশে তেমন মেদ নেই, কিন্তু ভুঁড়িটা বিশাল। আবার অনেকে নিয়ম করে হেঁটে বা ব্যায়াম করেও ভুঁড়ি কমাতে পারছেন না। আসলে শুধু ব্যায়াম বা হাঁটা দিয়ে ওজন বা ভুঁড়ি কিছুই কমানো যাবে না। সাথে সাথে আপনার লাইফ-স্টাইল, খাওয়ার ধরনও বদলাতে হবে। নয়তো ফলাফল হবে শূন্য। এই তিনটি কাজ যদি একসাথে করতে পারেন, তাহলেই কেবল ওজন কমানো সম্ভব। হয়তো অনেকে বলবেন যে, আমি তো এই তিনটি কাজ করে আসছি, কিন্তু ওজন বা ভুঁড়ি কমছে না। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, এই তিনটি কাজের কোথাও না কোথাও, কোন না কোন গড়মিল হচ্ছে। দোয়া করে একটু খতিয়ে দেখুন …
এই তিনটি কাজ হোল…
১। নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটা ও পেটের ব্যায়াম করা।
২। খাবার ধরন বদলানো
৩। লাইফ-স্টাইল বদলানো
একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে, আমি ১ নাম্বারেই শারীরিক পরিশ্রমের কথা বলেছি। ওজন বা ভুঁড়ি কমানোর জন্য ব্যায়াম ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। আপনি খাবার কমিয়ে হয়তো ক্যালরি কম গ্রহন করছেন, কিন্তু যে মেদ বা চর্বি অলরেডি শরীরে জমে আছে, তা খরচ করবেন কিভাবে? এক্ষেত্রে জমা শক্তি খরচের ব্যাপারটা, তাই ১ নাম্বার সমাধান।
আমি খুব সংক্ষেপে বর্ণনাগুলো দিচ্ছি…

১। নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটা ও পেটের ব্যায়াম করাঃ
আপনি যদি আপনার পেটের মেদ কমাতে চান, তাহলে প্রথমে আপনি আপনার পুরো শরীরের মেদ কমাতে থাকুন। শুধুমাত্র পেটের ব্যায়াম করলে, হয়তো আশানুরূপ ফল পাবেন না। আবার শরীর ফিট না থাকলেও ভুঁড়ি কমানো সম্ভব নয়। তাই আপনার উচিৎ হবে, শরীরকে চালু রাখা ও ভুঁড়ি কমানো। তাহলেই আপনি একটি স্থায়ী সমাধান পাবেন, আশা করি।
শরীর চালু রাখার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হোল হাঁটা।
প্রতিদিন নিয়মমতো হাঁটুন, দেখবেন আস্তে আস্তে আপনি অনেকটা ভালো বোধ করছে। এক্ষেত্রে হাঁটার নিয়ম হোল…
… প্রতিদিন ৪৫-৬০ মিনিট হাঁটা।
… জোরে জোরে হাঁটা।
… এমনভাবে হাঁটবেন যেন প্রচুর ঘাম হয় এবং আপনি হাপাতে থাকবেন। এতে প্রচুর শক্তি খরচ হবে আর শক্তি খরচ মানেই ওজন কমতে থাকা।
প্রথমেই ৪৫-৬০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটতে কষ্ট হবে, তাই অল্প অল্প করে হাঁটার সময় ও ধরন বাড়াবেন।
নিয়মিত হাঁটার পাশাপাশি পেটের মাসলের কিছু ব্যায়াম করা দরকার। নিয়মিত হাঁটার পরেও ভুঁড়ি না কোমার কারণ হোল, আমাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের ফ্যাট সেল থাকে, কোনটা আলফা, আবার কোনটা বিটা নামে পরিচিত। আলফা সেলগুলো ব্যায়ামের ফলে সহজেই কমতে থাকে কিন্তু বিটা সেলগুলো অনেকটাই ঘাড়-ত্যারা। এরা সহজে ব্যায়ামে কমে না। আমাদের হাত, পায়ের ফ্যাট সেলগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আলফা, তাই কমেও তাড়াতাড়ি। কিন্তু পেটের যে ফ্যাট সেলগুলো আছে সেগুলোর অনেকেই বিটা ফ্যাট সেল। তাই এগুলো কমতেই চায় না। কিন্তু আশার কথা হোল, এই পেটের মেদ কমানো কঠিন ঠিকই তবে অসম্ভব নয়। আপনি চাইলে কমাতে পারবেন কিন্তু কষ্টসাধ্য। সঠিক ব্যায়াম ও সুষ্ঠু খাদ্যাভাসের মাধ্যমে আপনি তা করতে পারেন। আর এই পরিবর্তন দেখতে পাবেন প্রায় ৩ মাসের মাথায়। এই ৩ মাস আপনাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতেই হবে। এটা শরীরের একটা স্বাভাবিক নিয়ম, যা আপনাকে মানতেই হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা হতাশ হয়ে ব্যায়াম ছেড়ে দেই আর ভাবি আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এক্ষেত্রে আপনি যদি জানতে পারতেন যে এটাই স্বাভাবিক, তাহলে হয়তো আপনি আশা ছাড়তেন না। তাই আপনার দরকার হবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া, যিনি আপনাকে সাহায্য করবেন সঠিক লক্ষ্যে পৌছাতে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা ভুল নিয়মে, ভুল ব্যায়াম করে থকি, সেক্ষেত্রেও ফলাফল হবে শূন্য। তাই আপনার উচিৎ হবে ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া।
পেটের মেদ কমানোর শত শত ব্যায়াম রয়েছে। আপনারা চাইলে সেগুলো করতে পারেন, তবে আমি শুধুমাত্র ১ টি ব্যায়ামের কথা বলবো। ঠিকমত করলে আশা করা যায় ফল পাওয়া যাবে। সেটি হোল “এয়ার সাইক্লিং ক্রাঞ্চ” বা “এয়ার বাইক ক্রাঞ্চ” বা “শুয়ে শুয়ে সাইকেল চালানো”।
আপনি ইউটিউবে চাইলেই ভিডিও সহ দেখতে পারবেন।

কিভাবে করবেনঃ
একটি ম্যাটের উপর সোজা হয়ে শুয়ে হাতদুটো মাথার পিছনে নিন। এবার ধিরে ধিরে ঘাড় ও মাথা তুলে সামনের দিকে ঝোঁকান আর পা দুটো দিয়ে সাইকেল চালাতে থাকেন। এতে একইসাথে ক্রাঞ্চ ও সাইক্লিং দুটোই চলবে।
বিশেষ খেয়ালঃ
. এটা করার সময় পেট ভিতরে ঢুকিয়ে করতে হবে, মানে পেট ভিতরে ঢুকানো থাকা অবস্থায় শ্বাস প্রশ্বাস ও ব্যায়াম চলবে।
. হাতদুটো দিয়ে মাথাকে সাপোর্ট দিতে হবে, নইলে ঘাড়ে ব্যাথা হরে পারে আর থুতনি বুকের সাথে লেগে যাবে না।
. পুরো প্রেশারটা পেটের উপর দিতে হবে।
তবে এয়ার বাইক ক্রাঞ্চ করতে না পারলে, চিত হয়ে শুয়ে শুয়েও সাইকেল চালাতে পারেন। এতে কিছুটা কাজ হবে। অভ্যাস হয়ে গেলে, একইসাথে ক্রাঞ্চ করা শুরু করতে পারেন। আর একেবারেই না পারলে, শুধু চিত হয়েই সাইকেল চালান।

কতবার করবেনঃ
দিনে ৪/৫ টি সেশন করুন। আর প্রতি সেশনে ১৫/২০ বার করুন।
এক্ষেত্রে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর করতে পারেন। এতে ব্যায়াম বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে না।
প্রথম প্রথম কষ্ট হবে, পরে তা আয়ত্তে এসে যাবে।

মূল কথাঃ
পেটের মেদ কমানোর জন্য, প্রতিদিন ৪৫-৬০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটুন ও শুয়ে শুয়ে সাইকেল চালান।

আজ এ পর্যন্তই
……চলবে

…………তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style Medicine)

Leave a comment