
………………………….
লবন খাওয়া নিয়ে আমাদের নানান দুশিন্তা বা কনফিউশন। যে লবন আমরা রান্না না করে, খাবারে ছিটিয়ে খাই, সেটাই কাঁচা বা আলগা লবন। লবণ হলো প্রধানত সোডিয়াম ক্লোরাইড। নুন বা লবণ তা সে কাঁচা, পাকা, তেলে ভেজে, তেল না দিয়েই গরমে কড়াইতে ভেজে, সকালে, বিকালে, গুঁড়িয়ে মিহি করে, জলে গুলে যে ভাবেই খাওয়া হোক, আসল কথা, বেশি লবন খেলে, শরীরে সোডিয়ামের পরিমান বৃদ্ধি পাবে। আর আসল সমস্যা এই সোডিয়ামকে নিয়েই। এই সোডিয়াম আমাদের ব্লাড প্রেসার বাড়াবে, হার্টের বারোটা বাজাবে। হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শুষে নিয়ে লবণ হাড়ের ক্ষতি করে। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হবার কাজে লবণ ব্যাঘাত ঘটায়। এর জন্য ইউরিক অ্যাসিড, বাত দেখা দেয়। অতিরিক্ত লবণ খেলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে, কিডনি দুর্বল হয়ে যায়।
হয়তো ভাবছেন, তাহলে কাঁচা লবণকে কেন নিষেধ করা হয়? কারন, যখন লবণ রান্না করা হয়, তখন এর আয়রণ স্ট্রাকচার সহজতর হয় এবং খাদ্যনালীতে শোষণ প্রক্রিয়াও সহজ হয়। কাঁচা লবণের ক্ষেত্রে আয়রণ স্ট্রাকচার একই থাকে এবং শরীরের ওপর চাপ বাড়ায়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হাইপারটেনশন দেখা দেয়।
লবণ কম গ্রহণের জন্য করণীয়ঃ
১। খাবারের সঙ্গে আলাদাভাবে (পাতে) লবণ খাবেন না।
২। টেবিলে লবণদানি রাখবেন না।
৩। রান্না করার সময় খাবারে অল্প লবণ ব্যবহার করুন।
৪। ফাস্টফুড, রেস্টুরেন্ট ও ক্যান্টিনের খাবারে প্রচুর লবণ থাকে, এজন্য এসব খাবার কম খাবেন।
৫। টিনজাত স্যুপ, সবজি, মাংস-মাছ, প্রক্রিয়াজাত পনির ও মাংস, হিমায়িত খাবার, শুঁটকি মাছ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। কারন খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করতে বাড়তি লবন দেয়া হয়।
৬। খাদ্য সংরক্ষণ করার জন্য লেবুর রস, ভিনেগার, কাঁচা রসুন ও মশলা ব্যবহার করুন, লবণকে বাদ দিন।
৭। খাদ্য সুস্বাদু করার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্য যেমন- কেচাপ, সয়াসস, সালাদ বানানোর উপকরণ, আচার কম ব্যবহার করুন।
৮। কাঁচা ফলমূল বা শাকসবজি খাওয়ার সময় লবণ দিয়ে খাবেন না।
৯। লবণবিহীন ক্র্যাকার্স, পপকর্ন, সেদ্ধ ডিম ও বাদাম খান।
১০। ঘরে-বাইরে খাদ্য নির্বাচনের আগে কম লবণ ও কম সোডিয়াম যুক্ত খাবার নির্বাচন করুন। আপনার সন্তানকে শৈশব থেকেই কম লবণযুক্ত খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
১১। হোটেল বা দোকানে ‘ধূমপান নিষেধ’, এর পাশাপাশি ‘অতিরিক্ত লবণ খাবেন না’ লিখে রাখতে দোকানীকে উদ্বুদ্ধ করুন।
১২। বাইরের খবারের ক্ষেত্রে এমন নির্দেশনা দেয়া উচিত যেন খাদ্যে লবণের মাত্রা কম থাকে।
১৩। খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা দরকার, যাতে তারা খাবারের গায়ে ও মেন্যুতে লবণ ও সোডিয়ামের পরিমাণ লিখে রাখেন।
১৪। প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময় ভালো করে লেবেল পড়ে নিন। লো সোডিয়াম স্যুপ খান। বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
প্রতিদিন কতটুকু লবন খাবেনঃ
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের রোজ এক চা চামচ লবণ খাওয়া উচিত। আর যাদের হাই ব্লাড প্রেসার রয়েছে, তারা আধা চামচের মতো লবন খাবেন।
কোন লবন ভালোঃ
ধরা হয়, “হিমালয়া পিংক সল্ট” সবচেয়ে উত্তম লবন। এটা দেখতে গোলাপি ও স্বাস্থ্যসম্মত। তবে খেতে হবে অবশ্যই পরিমান মতো।
অনেকে আবার সি সল্ট বা সামুদ্রিক লবনকে আদর্শ বলে থাকেন, যদিও সামুদ্রিক লবনে অনেক মিনারেল ও অন্যান্য উপাদান থাকে, যা সাধারণ লবণের মধ্যে থাকে না। আবার সামুদ্রিক লবণে আয়োডিন অনুপস্থিত। তাই সাধারণ লবণের চেয়ে এই লবণ খুব একটা উপকারী নয়। সামুদ্রিক লবণ খেলে খাদ্যতালিকায় আয়োডিনসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারও রাখুন। তাছাড়া বর্তমান সময়ে সামুদ্রিক লবনে প্ল্যাস্টিকের উপস্থিতিও পাওয়া যাচ্ছে, যার কারন হোল, সমুদ্রের পানির প্লাস্টিক দূষণ।
তবে অতিরিক্ত লবণের মতো একেবারে লবণহীন খাবার খাওয়াও শরীরের জন্য হুমকি স্বরূপ। হার্ট, লিভার থেকে শুরু করে কিডনি, অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের মতো শরীরের বিশেষ অংশগুলোর কাজকর্ম কিছুটা হলেও লবণের ওপর নির্ভর করে। তাই লবন একেবারে বাদ না দিয়ে, রান্নায় পরিমানে কম খাওয়া উচিত। আর আলগা বা কাঁচা লবন পুরোপুরি বাদ দিতে হবে এবং সবচেয়ে ভাল হয় যদি হিমালয়া পিংক সল্ট খাওয়া যায়।
আমরা যদি বাড়িতে কম লবণ দিয়ে খাদ্য তৈরি শুরু করি এবং আলগা লবণ না খাই, লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলি, কম লবণযুক্ত খাবার কেনা শুরু করি, তাহলে সেটাই অভ্যাস হয়ে যাবে।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……………….
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style medicine)
