
……………………….
যে কোন অসুখের জন্য ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেই, শুধু শাক সবজী, ফল খেতে বলেন, তাই না। আপনি হয়তো বিরক্ত, ডাক্তারদের এই উপদেশের জন্য। আপনি ভাবছেন, আপনি বরং অল্প ভাত শুধু মাছ/মাংস দিয়ে খাবেন, তাতেই হবে। খাওয়ার পরিমান কমালেই হোল, ভেজিটেবল খেয়ে কি করবো…।।
ডাক্তারবাবু যখন খেতে বলেছেন, তাহলে নিশ্চয়ই এর কোন ব্যাখ্যা আছে, উনি তো আর হুজুগে গদবাঁধা কথা বলবেন না। চলুন জেনে নেই কেন খাব এই ভেজিটেবল ?
শাক সবজি, ফলে রয়েছে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ। আমরা অনেকেই জানি না, খাদ্য আঁশ কি এবং এটা শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। খাদ্য আঁশ বা ফাইবার বলতে আমরা উদ্ভিদজাত খাদ্যের ছাল, পাতা, খোসাসহ বিভিন্ন সবজি, ফল বুঝি।
সাধারণভাবে আঁশজাতীয় খাবার মানুষের খাদ্যনালীতে হজম হয় না। এর কারণ হলো, এগুলো হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম আমাদের পরিপাকতন্ত্রে নেই। খাবারের আঁশজাতীয় অংশটুকু হলো সেলুলোজ, যা হজম হয় না ঠিকই কিন্তু শরীরের জন্য বিরাট ভুমিকা পালন করে।
এদের আঁশ বা ফাইবার খাদ্যনালী থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল এবং চর্বিকে শুষে নেয় পরবর্তীতে মল মুত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালীর রোগ বা এথেরোস্ক্লেরোসিস, পাইলস, কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। খাদ্যের আঁশ অংশটুকু হজম না হওয়ার কারণে এগুলো পরিপাকতন্ত্রের বেশকিছু জলীয় অংশ শোষণ করে ধরে রাখে এবং এই জলীয় পদার্থসহ এগুলো মলের সঙ্গে বের হয়ে আসে। ফলে শরীরের কোনো অংশে চর্বি বা মেদ জমতে পারে না। এতে মল নরম হওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়।
আমাদের খাদ্যনালীতে রয়েছে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া। সুখবর হলো, খাদ্য আঁশ এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর লালনে, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা কোলন ক্যান্সার ঠেকাতে যা অত্যন্ত কার্যকরী।
আবার খাদ্য আঁশ বেশি পরিমাণ গ্যাস্ট্রিক এসিড নিঃসৃত করে এবং ধীরে ধীরে খাদ্যনালীতে প্রেরণ করে। এ কারণে, এর হজম ও শোষণ দুটোই ধীরে হয়। এজন্য খাদ্য আঁশ গ্রহণের পর পেট অনেক সময় ভরা অনুভূত হয় এবং ক্ষুধা কম লাগে।
বেশি পরিমাণ আঁশ যুক্ত খাবার গ্রহণে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে। খাদ্য আঁশ যখন খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে তখন কার্বহাইড্রেট ভাঙ্গার হার অনেক দীর্ঘায়িত হয়, ফলে কার্বহাইড্রেটের মাত্রা কম থাকে বলে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়তে পারে না। এ কারণে ডায়বেটিকস রোগীদের জন্য খাদ্য আঁশ গ্রহণে বেশ উপকার হয়।
ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন মেয়েদের শরীরে মেদ বৃদ্ধি করে এবং ব্রেষ্ট ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ায়। আঁশযুক্ত খাদ্য, ইস্ট্রোজেনকে মলের সাথে বের করে দেয়। ফলে রক্তে এর পরিমাণ কমে যায় এবং স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে আসে।
ফাইবার বা আঁশ খাওয়া বাড়ানোর উপায়:
প্রত্যেকদিনের খাবারে রাখুন বিভিন্ন হোল গ্রেন প্রোডাক্ট, ফল, বিনস্, মটরশুটি, ডাল, বাদাম ইত্যাদি। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিবর্তে হোল গ্রেন যুক্ত খাবার খান।
ব্রেকফাস্টে, বার্লি, গম অথবা ওটস্ যুক্ত সিরিয়াল খেতে পারেন। সাধারণ পাউরুটি বা ময়দার পরিবর্তে হোল হুইট বা মাল্টি গ্রেন যুক্ত পাউরুটি ও লাল আটা ব্যবহার করুন।
সাধারণ চালের বদলে ব্রাউন রাইস খান। প্রত্যেকদিন বিভিন্ন রঙয়ের সব্জি বেশি রাখুন খাবারে।
স্ন্যাক্স খেতে ইচ্ছা হলে বিভিন্ন ফল, ড্রাই ফ্রুটস্, বাদাম, ছোলা- বুট, সব্জির জুস খেতে পারেন। কিন্তু কেনা জুস খাবেন না। কারন এতে নানা প্রিজারভেটিব ও বাড়তি চিনি থাকে।
ফাইবার বা আঁশ উপকারি হলেও হঠাৎ করে অতিরিক্ত ফাইবার খেতে শুরু করলে হিতে বিপরীত হবে। গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, পেট ব্যাথা, পেটে খিচুঁনি ধরার মত সমস্যা হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়ান। এতে শরীরে থাকা উপকারি ব্যাক্টেরিয়া এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। সঙ্গে প্রচুর পানি খান। কারন ফাইবার।
খাদ্যনালীতে পানি টেনে নেয়। পর্যাপ্ত পানি না খেলে ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ না করে, বরং তা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই প্রত্যেকদিন অন্তত ৮/১০ গ্লাস করে পানি পান করুন।
সারাদিনের খাবারে ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন।
আঁশসমৃদ্ধ খাবারের তালিকাঃ
১। শাক-
কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলা শাক, ডাঁটা শাক, লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার আগা-ডোগা শাকে প্রচুর আঁশ রয়েছে।
২। সবজি-
অপেক্ষাকৃত বেশি আঁশযুক্ত সবজির মধ্যে রয়েছে সাজনা, কলার মোচা, ঢেঁড়স, ডাঁটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, গাজর, শিম, পটল, কচু, বেগুন, টমেটো, বরবটি ও মটরশুঁটি।
৩। ফল-
বেল, পেয়ারা, কদবেল, আমড়া, আতাফল, নারকেল, কালোজামের মধ্যে। এছাড়াও গাব, কামরাঙ্গা, পাকা টমেটো, পাকা আম, পাকা কাঁঠাল, আপেল ও আমলকীর মধ্যে মাঝারি পরিমাণে আঁশ থাকে।
৪। ডাল, বাদাম ও বিচি-
মটর, মুগ, মসুর, ছোলা ও খেসারি ডালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আঁশ পাওয়া যায়। বাদাম, যব, ভুট্টা, আটা, তিল, কাঁচামরিচ ও সরিষাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আঁশ বিদ্যমান।
যদি কেউ চান, তাহলে ফাইবার সাপ্লিমেন্ট ও খেতে পারেন। তবে চেষ্টা করবেন, খাবারের মাধ্যমে ফাইবার গ্রহন করতে। বাজারে বিভিন্ন নামে এই ফাইবার পাওয়া যায়, যেমন, ইসব গুলের ভুসি, Meta Mucil Fibre, ইত্যাদি।
তাই চলুন ভেজিটেবল ও ফল খেতে ভালো না লাগলেও, ডাক্তারবাবুর কথামতো খেতে থাকি।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
………………
……… তিনা শুভ্র
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style Medicine)
