যে যাই বলুক না কেন, ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হোল, রোজা রাখা, না পারলে উপবাস থাকা বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা…।।

………………………

ওজন কমানোর জন্য কত কিছুই না করেছেন, কিন্তু কাংখিত ফল পাচ্ছেন না, তাই না…! আবার, ওজন কমানোর জন্য খাবার কমাতে গিয়েও অনেক সমস্যা পোহাতে হয় আমাদের। যারা খাবার কমাতে পারছেন না কিংবা অতিরিক্ত ওজনে বাঁধা পরে আছেন, তাদের জন্য রোজা বা উপবাস বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, একটি খুব ভালো সমাধান।

আমরা যে কিছু সময় পর পর খাই এতে আমাদের ইনসুলিন সিক্রেশনের মাত্রা কখনই কমে না। বার বার খেলে, ইন্সুলিনও বার বার রক্তে আসে, আবার এই ইন্সুলিন বার বার ক্ষুধা লাগায়। ফাস্টিং করার সময় ইনসুলিন কন্ট্রোলে চলে আসে বলে ক্ষুধা কমে যায় আর বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমে।

রোজা বা উপবাস কিভাবে করতে হয়, তা নিয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন থাকার কথা নয়। তাই আজ শুধু ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে কথা বলবো।

১। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এ, আক্ষরিকভাবে আপনাকে রোজা থাকতে হয়, পার্থক্য শুধু এই যে আপনি পানি পান করতে পারবেন। আপনি যতক্ষণ জেগে আছেন, তার মধ্যে বেশ লম্বা একটা সময়, আপনাকে না খেয়ে থাকতে হবে, এই হচ্ছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর নিয়ম। ১০-১২ ঘণ্টা থেকে আরম্ভ করে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকা যায়। তারপরে অবশিষ্ট কয়েক ঘন্টা আপনি স্বাস্থ্যকর খাবার খান। এইভাবে, যখন শরীর বিশ্রাম নেয়, তখন এটি বিশ্রামের সময়গুলিতে শরীরের বাড়তি ক্যালোরিগুলি জ্বালিয়ে ফেলার সময় পায়।

উদাহরণ স্বরূপ

. ১৬ঃ৮, মানে আপনি ১৬ ঘণ্টা খাবেন না, বাকি ৮ ঘণ্টা খাবেন,
অথবা
. ১৪ঃ১০, আপনি ১৪ ঘণ্টা খাবেন না, বাকি ১০ ঘণ্টা খাবেন।
অথবা
. ১২ঃ১২, আপনি ১২ ঘণ্টা খাবেন না, বাকি ১২ ঘণ্টা খাবেন।

মূল শর্ত হোল এগুলো, আপনি আপনার পছন্দ মত যেকোনো একটি সময় বেছে নিবেন।

২। অনেকে সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে রাতের খাওয়া সেরে নেন, পরদিন সকাল ন’টার আগে কিছু খান না। কেউ কেউ সন্ধ্যা আটটায় খাওয়ার পর, পরদিন সরাসরি লাঞ্চ সারেন।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এ কি কি খাবেনঃ

সঠিক পরিমানে পুষ্টিকর খাবার এবং পানীয় রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে যে, ফাস্টিং করার কারণে, অন্য সময় যা ইচ্ছা তাই খাওয়া যাবে না।
. চর্বি ছাড়া মাংস, চামড়া ছাড়া হাঁস-মুরগি, মাছ, ডিম, ফ্যাট ছাড়া দুধ, ডাল, বাদাম, বীজ ইত্যাদি
. প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল।
. লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি (আঁশযুক্ত), ওটস ইত্যাদি
. জলপাই তেল, নারিকেল তেল, ভেজিটেবল তেল।
. পানি, চিনি ছাড়া রং চা, গ্রিন টি, ফাস্টিং অবস্থায় আপনাকে হাইড্রেটেড রাখার সাথে আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
কি খাবেন নাঃ
অতিরিক্ত চর্বি বা তেলের খাবার, জাঙ্ক ফুড, চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর কিছু গাইডলাইনঃ

১. প্রথমে ঠিক করে নিন যে, আপনি কোন সময়টা খাবেন আর কোন সময়টা খাবেন না।

২. ফাস্টিং এর সময় প্রচুর পানি পান করুন, এতে শরীর হাইড্রেট থাকবে, ক্লান্তি লাগবে না। চাইলে এ সময় দুধ-চিনি ছাড়া রং চা, গ্রিন টি, যত খুশি পান করতে পারেন।

৩. ফাস্টিং করছেন বলে অন্যসময় যা খুশি তাই খাবেন না। যেহেতু দিনের কিছুটা সময় ফাস্টিং করছেন, তাই উচিৎ হবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া, যেন শরীর দুর্বল না লাগে।

৪. যদি আপনার মনে হয়, ফাস্টিং থাকা অবস্থায় ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন, তাহলে করুন। তবে অনেকক্ষণ ধরে, খুব জোরালো ব্যায়াম বা জোরে জোরে হাঁটার দরকার নেই। কখনই শরীরে জোর দিয়ে ব্যায়াম বা হাঁটবেন না।

৫. ফাস্টিং এর সময় সারাক্ষন ঘুমিয়ে বা শুয়ে-বসে কাটাবেন না। দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করুন।

৬. প্রথম প্রথম ফাস্টিং এ কষ্ট হতে পারে, তবে ধৈর্য ধরে চালিয়ে যান।

যাদের জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং প্রযোজ্য নয়ঃ

. গর্ভবতী মা।
. লো ব্লাড প্রেসারে, রক্তস্বল্পতার, ডায়াবেটিসে, হৃদ্‌রোগে বা যে কোন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী।
. বুকের দুধ খাওয়ানো মা।
. ১৮-২০ বছরের কম বয়সী।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com

Leave a comment