###পথের খোঁজে##০৯#

স্যাম একটা জনপ্রিয় ব্রথেলের ট্যাক্সি র‍্যাঙ্কে অপেক্ষা করছে। সাধারনতঃ ব্রথেল থেকে বের হওয়া যাত্রীদের মন খুব ফুরফুরা থাকে; অস্ট্রেলিয়ায় টিপস দেয়ার রীতি না থাকলেও ব্রথেল ফেরা যাত্রীরা যেন এক এক জন দাতা হাতেম তাঈ!

আঠারো -বিশ বছরের এক তরুন ঊঠে বসলো তার ট্যাক্সিতে। সে যাবে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে। মনটা খুব আনন্দে ভরে গেলো- কেন না ভাড়া হবে কমপক্ষে ষাট ডলার!

তবে এতো কম বয়সী যাত্রী সে এর আগে কখনই তুলে নি এই র‍্যাঙ্ক থেকে। তাই বারবার সে রিয়ার ভিউ আয়নাতে ছেলেটাকে দেখছিলো। ছেলেটার দাঁড়ী -মোচ এখনো উঠি উঠি করছে। স্যামের মনটা হু হু করে উঠলো দরদে – আহা রে! এই পুলার ভবিষ্যৎ কী ?

প্রায় ৮০০ মিটার বাকী গন্তব্যে পৌঁছনোর , এই যাত্রী ছেলেটা একটা কথাও বলে নি। স্যাম তো চুপ থাকার পাত্র নয় – কিন্তু , স্যামও এক সময় চুপ করে যেতে বাধ্য হয়েছে। এক হাতে তো আর তালি বাজে না । জি পি এস অনুযায়ী সামনের সিগনালটার পর মাত্র ২০০ মিটার বাকী গন্তব্যের। যথারীতি লাল বাতী জলে উঠলো , স্যাম থামালো তার গাড়ী। আর সেকেন্ডের মধ্যেই সেই যাত্রী গাড়ীর দরজা খুলে দিল দৌড় ! স্যামের মিটারে ৭৩ ডলার ঊঠেছে … মুহূর্তর মধ্যে স্যামের মেজাজ গেল ক্ষিপ্ত হয়ে। কিন্তু কিছু করার নাই। স্যাম জানে কোনও লাভ নেই ওই ঠিকানায় গিয়ে ছেলেটাকে খোঁজার। তাও সে গেল। যেয়ে দেখলো সেটা একটা ইলেক্ট্রনিক্স এর দোকান – কম্পিউটার জাতীয় জিনিস বিক্রী করে। মানে,ওই বদমায়েশটা ভুয়া ঠিকানা দিয়ে এসেছে এখানে। থাকে হয়তো আশে পাশেই কোথাও ।

দিনের প্রথম খ্যাপ খারাপ হলে দিনটা খুব একটা ভালো যায় না- এমনটা স্যামের বিশ্বাস। রেডিওতে সে তার অফিসকে ইন্সিডেন্ট রিপোর্ট করে নিকটস্থ ট্যাক্সি রাঙ্কে যেয়ে অপেক্ষা করছে। বেশ একটা খারাপ দিন যাবে মনে হচ্ছে তার।

মোবাইলে রাকিবের ব্লগে ঢুকেছে সে। রাকীব নতুন একটা ব্লগ লিখেছে –“পথের খোঁজে” নাম দিয়ে। নামটা বেশ পছন্দ হয়েছে স্যামের। মনে মনে ভাইটার প্রতিভায় সে মুগ্ধ! আর কয়টা দিন… এখানে এসে পড়লে কাজের চাপে ফালতু জিনিস লেখার সময় পাবে না। পথের খোঁজে বাদ দিয়ে তখন টাকার খোঁজে লিখতে লাগবে … মনে মনে বিড় বিড় করে বলতে বলতে সে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে তার চোখ পড়লো ব্লগের এক কমেন্টে। কে একজন নামহীন ব্যাক্তি লিখেছে –“ তোর বউ সহ তোরে কোপানো হইবো…” । পড়ে স্যাম আবার হেসে উঠলো – “ শালা নাম দেয়ার সাহস নাই যার … সে আবার কোপাইবো… আবার বউ পাইলো কোথায় ??? ফেন্সী খোরের দল …“

স্যামের আজকে আর কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। সে ভাবল মনির ভাইকে ফোন দিয়ে তার সাথে একটু গ্যাজানো যায়। একটা রিং বাজার সাথে সাথেই ওপার থেকে মনিরের কন্ঠ – “শামসু ভাই -আমি বাসায় চলে এসেছি অফিস থেকে। আপনি পারলে বাসায় আসেন”

স্যাম কিছু না ভেবেই রাজী হয়ে রওনা দিল মনিরের বাসার দিকে। পথের খোঁজে পড়া হোল না। যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট লাগবে।

মনিরের মন দারুন খারাপ! মিশার মা ফোন করেছিলেন – মিশা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। রাকীবের সাথে ভিসা মেডিকেল করে ফেরার পথে কিছু যুবক তাদের রাম দা দিয়ে আক্রমন করে। রাকীব পালিয়ে বেঁচে যায় কিন্তু মিশা ওদের আক্রমনের শিকারে পরিনত হয়।খবরটা শুনে সে আর অফিস করতে পারে নি। বাসায় চলে এসেছে।

রাকীবের নতুন ব্লগ “পথের খোঁজে” সে পড়েছে। ব্লগে রাকীব তসলিমা নাসরীন এর সুনাম করেছে, রীচারড ডওকীন্স এর “দি গড ডিলুসন” বই থেকে কিছু ইন্টারেস্টিং পংক্তি তুলে ধরে আলোচনা করেছে। সাধারনত, তার লিখায় ইসলাম ধর্ম নিয়ে যে সব কটাক্ষ থাকে, এবারের লিখায় সে রকম কিছুই নেই। ডওকীন্স এর উক্তি তে ইহুদীদের গড নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। এই আক্রমন সম্ভবতঃ “পথের খোঁজে” ব্লগের জন্য নয়; আগের লিখা নিয়ে আক্রোশ। কিন্তু কিছুতেই সে বুঝে ঊঠতে পারছে না মিশাকে কেন আক্রমন করা হোল। মনির বাসার সামনে শামসুর গাড়ী দেখে দরজাটা খুলে দিয়ে ভিতরে এসে বসলো।

শামসুর গাড়ী থেকে হিন্দী ভাংড়া জাতীয় গানের শব্দ আসছে। তার মানে, শামসু সম্ভবতঃ এখনো কিছু জানে না। অথবা, তার ভাই নিরাপদ- তাই সে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তিত নয়।

শামসু গাড়ী থেকে বের হয়ে আসছিল- এমন সময় তার মোবাইলটা বেজে ঊঠলো। কিছুক্ষন ধরেই সে কথা বলতে থাকলো। তারপর হঠাত করে আবার গাড়ীতে চড়ে খুবই দ্রুত গতিতে উধাও হয়ে গেলো।

মনিরের বুঝতে দেরী হোল না … স্যাম খবরটা পেয়েছে মাত্রই। মনির তার ভিনাইল প্লেয়ারে ভ্যান মরিসনের “Days like this” চড়িয়ে শুনতে শুরু করলো। মিশাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে!

One thought on “###পথের খোঁজে##০৯#

Leave a comment