অধ্যায় ২: সব ধর্ম কিভাবে একসাথে সত্য হয়?
রোববার বিকেল থেকেই মুনিরের মনটা প্রচন্ড বিষিয়ে ছিল। একেতো সকাল থেকেই তার খুব মাথাব্যথা করছে, এর মধ্যে কে যেন একজন একটার পর একটা বিরক্তিকর মেসেজ পাঠাচ্ছে। অবস্থা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মুনিরের লেখা-লেখি বাদ দিয়ে মেসেজ ব্লক করায় সময় দিতে হচ্ছে। আর যেই এই কাজ করছে, নতুন নতুন নিকনেম খুলে বার বার মেসেজ পাঠাচ্ছে, ফলে ব্লক করেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
এটা সম্ভবত কোন উগ্রপন্থী লোকের কাজ। সে যেহেতু ধর্মীয় প্রথার বিরুদ্ধে লেখা-লেখি করে, সেহেতু এটা অস্বাভাবিক কিছু না, নতুন কিছুও না। কিন্তু আজকের মেসেজের নতুনত্ব যেটা সেটা হল শারীরিক ক্ষতির হুমকি। একটা ম্যাসেজে তাকে ‘তোর অভিজিৎ দাদার মতো’ করে কোপানোর কথা বলা আছে। আরেকটা শুরু হয়েছে ‘তোর সৎভাই জুলহাস যেমন কুত্তার মতো মরেছে’ বলে। কয়েকটা মেসেজে আশিক আর নিলয়ের কথাও তোলা হয়েছে।
এসব কি শুধুই অনলাইনের হুমকি? নাকি এগুলোর কোন ভিত্তি আছে? পুলিশকে কি জানানোর দরকার আছে? জানালেই বা কি হবে? সে তো আর ভিআইপি না যে পুলিশ তাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে। কেউ কি তার পেছনে লেগেছে? ইশার কালো পাঞ্জাবির কথা মুনিরের মনে পড়ল। সাথে সাথে এটাও মনে পড়ল যে নজরুল সাহেবের এক বন্ধুর কথা সে শুনেছে যিনি থানায় উচ্চপদস্থ অফিসার। নজরুল যদি ফোন করে দেন তাহলে সেই পুলিশ অফিসার অন্তত বলতে পারবেন যে তার বাড়তি কোন সাবধানতার দরকার আছে কিনা।
অনেক ভেবে-চিন্তে মুনির ইশাদের বাসার দিকে রওয়ানা হল। অনেকদিন পর সে রিক্সায় উঠেই হুড তুলে দিল। পথে যেতে যেতে নিজের অজান্তেই চারিদিকে তার চোখ ঘুরে বেড়াতে লাগল। বাসার সামনে চৌরাস্তার মোড়ে সে যেন কালো পাঞ্জাবি পরা এক যুবককেও দেখতে পেল।
ইশাদের বাসার সামনে রিক্সা থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে সে গেটের ভেতর ঢুকে পড়ল। কড়া নাড়ার পর ইশাই দরজা খুলে দিল, তারপর কুশল বিনিময়ের পর ভেতরে নিয়ে বসাল। ইশা বলল যে নজরুল সাহেব আসরের নামাজ পড়ছেন।
‘ভাইয়া, আপনাকে একটু এক্সাইটেড মনে হচ্ছে। আপনার শরীর ঠিক আছে তো?’
‘হ্যা, শরীর ঠিকই আছে। একটা বিষয় নিয়ে একটু চিন্তা হচ্ছে, তাই আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে এসেছি।’
‘অবশ্যই কথা বলবেন, বাবা আপনাকে খুব পছন্দ করে। নামাজ পরেই বাবা চলে আসবে। ও ভাইয়া, আপনাকে একটা কথা বল খুব দরকার। সেদিনের আলাপের কথা মনে আছে? ওই যে বাবা আপনাকে আত্মা নিয়ে লেকচার দিল?’
মুনির হেসে ফেলল।
‘হ্যা, মনে আছে তো।’
‘আমি এক জায়গায় পড়েছি, ঘুম আর মৃত্যু হচ্ছে ভাই-বোনের মতো, একইরকম। তার মানে ঘুমের মধ্যেও আত্মা শরীর থেকে বাইরে চলে যেতে পারে।’
মুনির তখনো হাসছিলো।
‘বল কি?’
‘হ্যা ভাইয়া, শুধু তাই না। ঘুমের মধ্যে যখন আত্মারা শরীর থেকে মুক্ত হয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, তখন তাদের দেখা-সাক্ষাতও হতে পারে, হতে পারে তথ্যের আদান-প্রদান। এটাকে বলতে পারেন সাইকিক জার্নি।’
‘তাই নাকি? তাহলে তো সবার একসাথে ঘুমাতে হবে।’
‘সবাই তো একসাথেই ঘুমায়, রাতের বেলা। যারা রাত জাগে, তারাও তো শেষরাতের আগেই ঘুমিয়ে পড়ে। তার মানে রাতের শেষ অংশের স্বপ্ন সত্য হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। আপনার কি মনে হয়?’
‘আমার তো মনে হয়, তাহলে আমেরিকার কাউকে আমরা স্বপ্নে দেখতে পারব না।’
‘কেন ভাইয়া, কেন?’
‘কারণ, আমাদের যখন রাত, ওদের তখন দিন। আমরা যখন ঘুমিয়ে, ওরা তখন জেগে। ওদের মধ্যে যারা দুপুরে ঘুমায়, তাদের সাথে অবশ্য দেখা হওয়ার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে।’
ইশা উঠে দাঁড়াল।
‘ধুর ভাইয়া, আপনার সব কিছুতেই তর্কাতর্কির অভ্যাস।’
‘সরি ইশা, তুমি বস, তুমি যা বলছিলে বল, আমি আর কিছু বলব না।’
ইশা আবার বসল। তাকে একটুও বিচলিত মনে হল না।
‘ভাইয়া, সব স্বপ্ন একরকম না। বেশির ভাগ স্বপ্নই মনের চিন্তা থেকে আসে। যেমন আমি যে গানটা দুপুরে শুনেছি, সেটাই হয়তো রাত্রে স্বপ্নে দেখলাম। অথবা যে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেছি, তার মাকে স্বপ্নে দেখলাম। এগুলো সব ব্রেনের স্বপ্ন, সাধারণ স্বপ্ন। কিন্তু কিছু কিছু স্বপ্ন আছে, যেগুলো অন্যরকম, বোঝাই যায় যে সেগুলো ব্রেনের সাধারণ স্বপ্ন না। আমি ঠিকই সেগুলো বুঝতে পারি। ওরকম স্বপ্ন দেখার সময় মনে হয় সত্যি সত্যিই ঘটনাটা ঘটছে, আর ঘুম ভেঙে যাবার পর খুব মাথাব্যথা হয়। এই স্বপ্নগুলো সত্য হয়।’
‘ইন্টারেস্টিং। কোন উদাহরণ দিতে পারবে?’
ইশা চোখ সরিয়ে নিল।
‘উদাহরণটা মন খারাপ করার মত, তবুও বলি। মা-বাবা আর ভাইয়ার যখন একসিডেন্টটা হয়, তার আগের সপ্তাহে আমি একটা স্বপ্নে দেখেছিলাম – বাবা-মা-ভাইয়া কোথায় যেন যাবে, বাসে অনেক ভিড়, হেল্পার তবু তিনজনকেই বাসে ওঠানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু মা আর ভাইয়া উঠতে পারল, আর বাবা হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে গেল।’
মুনির চুপ হয়ে গেল। কিন্তু ইশা সেদিলে ভ্রূক্ষেপ করল না, চোখ বড় বড় করে গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে চলল – ‘আমি অন্যরকম স্বপ্নও দেখি। খুব ভয়ের সেগুলো। বিভিন্নরকম প্রাণী, যেগুলোর সাথে পৃথিবীর কোন প্রাণীর কোন মিল নেই। কখনো ওগুলোকে মনে হয় কোন আকৃতি নেই, কখনো মনে হয় ধোয়ার মত।’
‘তুমি মনে হয় খুব হরর মুভি দেখ।’
‘এগুলো আমি হরর মুভি দেখা শুরুর অনেক আগে থেকেই দেখছি।’
‘তুমি কি প্রায়ই এসব স্বপ্ন দেখ?’
‘আমি এরকম স্বপ্ন প্রায়ই দেখিনা, কিন্তু মাঝে-মধ্যে দেখি। এই যেমন ধরেন মাসে একটা করে দেখি, আবার সব মাসে দেখি না। আপনাকে যে কালো পাঞ্জাবি পরা লোকের কথা বলেছিলাম, সেইটা এরকম একটা স্বপ্ন ছিল। একেতো এই স্বপ্ন আমি দেখেছি শেষরাতে, তারপর আবার পরেরদিন সারাদিন ছিল মাথা ব্যথা। আমি শিওর এটা দরকারি কোন স্বপ্ন, আর এজন্যই আপনাকে ডেকে সাবধান করেছি। আচ্ছা, আপনি কখনো স্বপ্নে এরকম দেখেন না?’
মুনির সোফায় হেলান দিয়ে বসল।
‘আমি কোন স্বপ্ন দেখি না।’
ইশা আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিল, তখনি নজরুল সাহেব ঘরে এসে ঢুকলেন।
‘মুনির ভালো আছো? হঠাৎ এখানে? সব ঠিক-ঠাক আছে তো?’
মুনির ব্লগের উত্তরে অনলাইন হুমকিগুলোর কথা বলল। নজরুল মন দিয়ে শুনলেন।
‘তুমি ভালো কাজ করেছো আমার কাছে এসেছো। এগুলো খুবই বিপজ্জনক মেসেজ। একটু দাড়াও, আমি এখনই পারভেজকে ফোন দিচ্ছি।’
নজরুল প্রায় মিনিট দুয়েক তার এএসপি বন্ধুকে ধরতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু সম্ভবত ঐদিকে কেউ ফোন উঠাচ্ছে না। শেষে তিনি হাল ছেড়ে দিলেন।
‘ফোন ধরছে না। মনে হয় ব্যস্ত। তবে সে কলব্যাক করবে। তা তোমার আর কি খবর? মেডিক্যাল থেকে আর কোন রিপোর্ট পেয়েছো?’
‘না আংকেল, ওই সাইড থেকে নতুন কোন খবর নেই। তবে গত মঙ্গলবার অন্যধরণের একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছে।’
মুনির নজরুল সাহেবকে ফাদার সুশান্তের সাথে তার সাক্ষাতের কথা বলল। সে বলল যে মিশনারিদের সাথে মানুষের জন্য ছোট-খাট কোন কাজ করতে পারলেও তার ভালো লাগবে। অবশ্য ক্যান্সারের অংশটা ইচ্ছাকৃতভাবে সে এড়িয়ে গেল, আর তাছাড়া নিজের চিকিৎসার জন্য কাউকে দিয়ে কোন ধরণের ফান্ড রেইসিং করার আগ্রহও তার একেবারেই নেই।
‘আচ্ছা আংকেল, আমার মনে একটা প্রশ্ন এসেছে, ফাদার সুশান্তের সাথে কথা বলে। আমাদের ধর্ম ভালো কথা বলে, উনাদের ধর্মও ভালো কথা বলে। সব ধর্মই বলে তাদের কিতাব সত্য, আর প্রতিটা ধর্মই বলে যে তাদের ধর্মটা ঈশ্বর প্রদত্ত সুতরাং এর কোন সূত্র-প্রমান নেই। আবার ভালো কথাগুলোই একেক ধর্ম একেক ভাবে বলে, এমনকি স্বয়ং ঈশ্বর সম্পর্কে একেক ধর্মের আইডিয়া একেকরকম। কিন্তু সব ধর্মই তো একসাথে সত্য হতে পারে না। যেহেতু ধর্মগুলো যে যার মতো করে ঈশ্বরের ব্যাখ্যা সাজিয়েছে, সেহেতু এর কোনোটাই সত্য হতে পারে না, ঠিক কি না?’
নজরুল মাথা নাড়লেন – ‘তোমার কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু ফাঁকিও আছে। একেকটা ধর্ম একেক কথা বলে মানেই এই নয় যে সব ধর্ম মিথ্যা। এমনও তো হতে পারে, যে একটা ধর্ম ঠিক আর বাকিগুলো ভুল।’
‘বুঝেছি, আপনি বলবেন ইসলাম সত্য, খ্রিষ্টধর্ম মিথ্যা। আবার উনি বলবেন যীশু প্রভু, ইসলাম বর্বরদের ধর্ম। কিন্তু কেউই আবার যুক্তি-প্রমান দেখাতে পারবেন না।’
‘আমি কিন্তু একবারও বলিনি খ্রিষ্টধর্ম মিথ্যা। বিষয়টা ধরে নিতে পারো এরকম – স্রষ্টা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর পর শিক্ষক হিসেবে ক্রমাগত নবী পাঠিয়েছেন। প্রতিটা নবীর মনে যখন স্রষ্টার ধারণার ভাবোদয় হয়েছে, তখন তিনি স্রষ্টার সেই বাণী প্রচার করেছেন, মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছেন এই জগৎই শেষ কথা নয়। একসময় সেই নবী মারা গেছেন, তারপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তার বাণী বিকৃত না হয় বিস্মৃত হয়েছে। ক্ষমতাবানরা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নিজেদের মনগড়া বাণী সেই নবীর কথামালার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে, ব্যবসায়ীরাও ধর্ম থেকে সহজ রোজগার করার জন্য জিনিস-পত্র ঢুকিয়েছে। হতেও পারে, তাই না?
সব ধর্মই বিকৃত হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি বিকৃত হয়েছে সবচেয়ে পুরাতন ধর্মগুলো। এই যেমন হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্ম বেশ প্রাচীন – তারা এখন বলে যে স্রষ্টা সর্বত্র আছে, সবকিছুর মধ্যে আছে, সব মানুষের মধ্যে আছে, মূলত প্রকৃতিই স্রষ্টা। এই ধারণাটা ধর্মতত্বে সমাধানের চেয়ে প্রশ্নই বেশি তৈরী করে। যেমন, কেউ যদি বলে যে ঈশ্বরের বৈজ্ঞানিক নাম প্রকৃতি, তাহলে কিন্তু তোমাদের নাস্তিকদের বেশ কিছু যুক্তি কার্যকর হয়ে যায়, ঈশ্বরকে পার্থিব জগতের সাথে মিশিয়ে দেয়া মাত্র তাকে সন্দেহ আর অপমান করার রাস্তা তৈরী হয়ে যায়। কিন্তু মূল সনাতন ধর্মের বাণী হয় তো এরকমটা ছিল না।
খ্রিস্টানদের বাইবেল মূলত যীশুর বাণীর সংকলন, অনেকটা মুসলমানদের হাদিসের মতো। এর যে সঠিক সংরক্ষণ হয় নি, সেটাতো ঐতিহাসিক সত্য। প্রখ্যাত বাইবেল বিশেষজ্ঞ ও খ্রিস্টান যাজক ডক্টর রিচার্ড বারিজ ‘জিসাস নাউ এন্ড দেন’ নামে একটা ইন্টারেস্টিং বই লিখেছেন, সময় পেলে পড়তে পারো। ওখানে তিনি আর তার সহ-লেখক ডক্টর গুল্ড দেখিয়েছেন প্রথম দিককার খ্রিস্টান ধর্মবেত্তারা কিভাবে ওল্ড টেস্টামেন্টের কিছু অস্পষ্ট ইঙ্গিতকে ভিত্তি করে ঈসা নবীর ওপর দেবত্ব আরোপ করেছিল, তাকে মানুষরূপী খোদা বানিয়েছিল। প্লেটোর পৌত্তলিক ধ্যান-ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ট্রিনিটির কথা লোকজন বলা শুরু করে ঈসা আলাইহিসসালাম চলে যাবার দুইশ বছর পর, এর আগে পর্যন্ত এটা কেউ জানতই না।
এমনকি ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষাও অনেকটাই হারিয়ে গেছে, আমি বলব। হাদিসের ওপর মৌলভীরা যুগ যুগ ধরে অতি নির্ভরশীল থেকেছে, অথচ ভুলে গেছে যে ভুল হাদিস মানে নবীজির মুখে মিথ্যা কথা তুলে দেয়া আর তাঁকে অপমান করা। ঈমাম আবু হানীফা কোরানকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তির চর্চা শুরু করেছিলেন, কিন্তু তার সেই চেষ্টা হারিয়ে যায় ঈমাম আহমদের হাদিসকেন্দ্রিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে। এই হাদিস আর তাফসীরের ব্যাখ্যা নিয়ে মতবিরোধ থেকে ওহাবী আর আশআরীরা আলাদা হয়ে গেছে। সুন্নি মুসলমানদের মধ্যেই এই বিভেদ, আর শিয়াদের কথা তো বাদই দিলাম।
হতেও পারে, ধর্ম আসলে একটাই। মানুষের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্যে মতবিরোধই আসলে বিভিন্ন ধর্মের জন্ম দিয়েছে। আমার ধারণা, প্রতিটা ধর্মের মূল কিতাব খুঁজলে বাণী গুলো একইরকম পাওয়া যাবে।’
মুনির যখন চিন্তা করছিলো কে বেশি কথা বলে – ইশা নাকি নজরুল সাহেব – ঠিক তখনি নজরুল সাহেবের ফোনটা বেজে উঠল। উনি ইশারায় ওদের দুজনকে চুপ থাকতে বলে পাশের ঘরে চলে গেলেন। প্রায় মিনিট দশেক পর তিনি ফিরে এলেন, মুখ গম্ভীর।
‘ইশা তুমি তোমার রুমে চলে যাও, আমি ওর সাথে একটু কথা বলি।’
ইশা চলে যেতেই নজরুল মুনিরের সামনে এসে বসলেন।
‘আমি পারভেজের সাথে কথা বলেছি। শোনো মুনির, তোমার হুমকির ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস, এটাকে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। তুমি কাল সকালেই থানায় চলে যাবে, গিয়ে পারভেজ মাহবুবের কথা বলবে, তাহলে ওরা তোমার জিডি নেবে। এই নাম্বারটা রাখো, ডাইরি করতে না চাইলে এই নাম্বারে ফোন করে পারভেজের সাথে অফিসারের কথা বলিয়ে দেবে। জিডি করার পর তুমি নিজে পারভেজকে ফোন করে সরাসরি কথা বলবে আর জিডির নাম্বারটা ওকে দেবে। ও দেখছে তোমার ব্যাপারটা কি করা যায়।’
মুনির গম্ভীর মুখে নাম্বারটা নিল, তারপর যাবার জন্য উঠে দাঁড়াল। নজরুল তার কাঁধে হাত রাখলেন।
‘রাস্তায় সাবধানে যাবে, ভিড় এড়িয়ে চলবে, আর ঘরে পৌঁছে আমাকে একটা ফোন দিবে, কেমন?
ও, আরেকটা কথা, মুনির। শোনো, তোমাকে আমি আমার নিজের ছেলের মতোই দেখি। সাব্বির বেঁচে থাকলে ওর বয়সও তোমার মতোই হত। মেসে যদি কোন সমস্যা হয়, যে কোন সময় আমার এখানে চলে আসবে। সাব্বিরের রুমটা খুলে দেব, তুমি এখানে নিশ্চিন্তে কয়টা দিন কাটাতে পারবে।’
মুনির মাথা নাড়ল। তারপর চিন্তিত মুখে ওখান থেকে বেরিয়ে এল।
(চলবে)
