জীবনের সফলতা নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই। কেউ ভাবে, সফলতা সেটাই যা সবাই স্বীকৃতি দেবে; আবার কেউ ভাবে সফলতা সেটাই যেটা মানুষ নিজে চায়। হোক সফল বা অসফল, জীবন মানেই অন্যের চাওয়া আর নিজের চাওয়ার সহাবস্থান। একে বদলানোর চেষ্টা বৃথা। তাই সফল জীবনের ক্ষেত্রেও দুটো অংশই থাকবে – একটা নিজের ইচ্ছা মতো আর আরেকটা তা নয়। যারা জীবনের অভিজ্ঞতায় নবীন, তারা অনেক সময়ই ভাবে, নিজের ইচ্ছা মতো অংশটাই তো জীবন। যারা খুব অলস, তারা হয়তো বলতে পারে নিজের ইচ্ছের বাইরের অংশটাই আসল জীবন। প্রচণ্ড আশাবাদীর দৃষ্টিতে জীবনের সবটাই হতে পারে ইচ্ছে মত, অন্য দিকে হতাশ জনের কাছে কোন কিছুই মানুষের ইচ্ছা মতো হয় না। ঠিক কতদুর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন চলে বা চলেনা বড় কঠিন সে হিসাব। তাই সে হিসাবকে উহ্য রেখে আসুন জেনে নেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য আর অনিয়ন্ত্রনযোগ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের করনীয়।
যে বিষয়গুলো আমাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রনের বাইরে তার উদাহরণ হতে পারে, অন্য আমাকে কি নজরে দেখে, অন্যেরা আমার সম্পর্কে কি কথা বলে, বহিঃ বিশ্বের অর্থনৈতিক, সামাজিক কিম্বা রাজনৈতিক অবস্থা কেমন, অন্যের ধর্ম বিশ্বাস কেমন, অন্যের যোগ্যতা বা অযোগ্যতা কি আছে বা নেই, আবহাওয়ার অবস্থা কেমন ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা জীবনের এই অংশগুলো নিয়ে এতটাই বেশি ব্যাস্ত আর অভিভূত হয়ে পড়ি যে জীবনের নিয়ন্ত্রণযোগ্য অংশগুলোর জন্য আর খুব একটা সময় বা মনোযোগ অবশিষ্ট থাকে না। একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, যখন নিজের বা অন্যের জন্মসূত্রে পাওয়া চেহারা, অন্যের ভালো বা মন্দ বৈশিষ্ট্যকে ঘিরে আপনি সময় পার করছেন কিম্বা অন্য লোকে আপনাকে কি নজরে দেখে এই চিন্তায় মগ্ন থাকছেন অথবা সামান্য ফেইস বুকে অন্যের কমেন্ট বা লাইকের সংখ্যার ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন, তখন মুলতঃ নিয়ন্ত্রনের অযোগ্য বিষয় নিয়েই আপনি ব্যাস্ত থাকছেন। যেহেতু এই মূল ঘটনাগুলো আপনার শ্রমের সাহায্য ছাড়াই ঘটে চলেছে যা আপনি শুধুই আপনার চিন্তার মাধ্যমে স্পর্শ করছেন – এগুলোর চর্চা খুব সহজেই এক প্রকারের নেশায় রূপ নিতে পারে আপনার জীবনে।
অথচ কাকে আমি ভোট দেব, নিজের জন্য আমি কি করবো, আমার কাজ গুলো কিম্বা ব্যবহার কেমন হবে, আমি নিজেকে কতটুকু সম্মান বা শান্তি দেব, আমি কি কথা বলব ইত্যাদি অজস্র বিষয় আমাদের জীবনে রয়েছে যা শুধু নিয়ন্ত্রনযোগ্যই না, জীবনে উন্নতি আর শান্তির চাবিকাঠি। অনেক ক্ষেত্রেই নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অলস আমি এই কাজগুলোকে ভুলে থাকতে ভালবাসে, কারণ এগুলো থেকে সুবিধা পেতে শ্রম দিতে হয়। পরিশ্রম ছাড়া বা খুব সহজে হেসে খেলে এগুলো নিয়ে সময় পার করা সম্ভব নয়।
একবার ভাবুন, আপনার জীবনের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে যখন আপনি অনিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয়গুলোর চাষাবাদ করছেন আর নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয়গুলো আপনার জীবন থেকে ক্রমশই কমে চলেছে, তখন কেমন আছেন আপনি? হয়তো ভালো, হয়তো মন্দ – তবে কোনটার ওপরই আপনার কোন রকম সরাসরি নিয়ন্ত্রন নেই। প্রতিনিয়তই নিজেকে নির্ভরশীল রেখে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে চলেছেন, হারিয়ে চলেছেন নিজের জীবন তথা সুখ দুঃখের ওপর নিয়ন্ত্রন! এই কি চান আপনার জীবনে, এমনটাই কি ছিল আপনার প্রয়োজন ?
জীবনে এমন অংশ থাকবেই যা আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে। সেগুলোর স্বাভাবিক উপস্থিতি মেনে নিয়ে যা কিছুর ওপর আপনার সরাসরি নিয়ন্ত্রন আছে তা নিয়ে কাজে লেগে পড়ুন। দেখবেন কষ্টে থাকলেও জীবনটাকে অর্থহীন মনে হবে না, নিজেকে অসহায় মনে হবে না; সবচেয়ে বড় কথা – অন্যে আপনাকে যাই ভাবুক বা বলুক, নিজের প্রতি অন্তত আপনি নিজে শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। আর এটাই সম্ভবত সফল সুখি জীবনের প্রাথমিক ভিত্তি।
আমাদের জীবনকে পৃথিবীর মতো একটা গোলকের সাথে তুলনা করলে, এর বাইরেরে স্তরটাকে ভাবুন নিয়ন্ত্রনের অযোগ্য অংশ, আর ভেতরের বাকিটুকু হল আপনার নিয়ন্ত্রনের অধীন অংশ। বাইরের স্তরটাকে যতটাই বাড়তে দেবেন, ভেতরের অংশটা ততই কমতে থাকবে। গোলকের আকার একই থাকার পরও তা রুপান্তরিত হতে থাকবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের এক জীবনে যেখানে আপানার নিয়ন্ত্রনের অংশ ক্রমশই কমে চলেছে। অথচ এর বিপরীতটা যদি হয়, তাহলে নিয়ন্ত্রনের বাইরের বিষয় থাকলেও আপনার জীবন হবে মুলতঃ আপনার নিয়ন্ত্রনের গোলক।
তাই আপনাকেই ভেবে দেখেতে হবে, জীবন নামের গোলকটার মূল পরিচয় আপনি কি রাখবেন? নিয়ন্ত্রিত অথবা অনিয়ন্ত্রিত গোলক ! হতে পারে এটাই আপনার জীবনের চেহারা পালতে দেবে।

চমৎকার আলোচনা। আমরা আসলেই অনিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয় নিয়ে সময় অপচয় করি। প্রোডাক্টিভ অনেক কিছু বাদ দিয়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিসটাই যেন জীবনের প্রধান অংশ হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুক।
LikeLiked by 2 people
Thanks
LikeLiked by 1 person