আই বি এস, এক বিরক্তিকর পেটের সমস্যা…..

আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সমস্যাটা আছে। এই রোগে, অনেকগুল লক্ষণ একসাথে দেখা যায়। এ রোগে যদিও খাদ্যনালীর কোন গঠনগত ক্রটি থাকে না, কিন্তু কার্যকারিতায় নানান ক্রটি দেখা যায়।

আই.বি.এস এমন একটি রোগ যা শুধুমাত্র ঔষধ দ্বারা ভালো করা যায়না। জীবন যাত্রার পরিবর্তন এবং তার সাথে মানিয়ে চলার অভ্যাস রপ্ত করাই আইবিএস এর চিকিৎসার মূলমন্ত্র।

লক্ষণ সমূহ:
. পেটে ব্যাথা
. খাবার পর অস্বস্থি বোধ
. পেট ফেঁপে যাওয়া
. ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য
. দূর্বলতা
. মাথাব্যাথা
. বমি বমি ভাব ইত্যাদি
কারো কারো স্বল্প লক্ষণ থাকে, কারো কারে তীব্র লক্ষণ দেখা দেয়।

যা খেতে হবেঃ

যেহেতু এই রোগে পেটে গ্যাস হয়, সেহেতু এমন খাবার খেতে হবে, যাতে পেটে গ্যাস কম তৈরি হয়। যেমন,

. প্রোটিন, যেমন, মাছ, চামড়া ছাড়া মুরগী, ডিম ।

. তবে সকল চর্বিদার গরু বা খাসি কম খেতে হবে।

. অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড (বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বিচি, সামুদ্রিক মাছে থাকে)

. কম FODMAP যুক্ত খাবার খাওয়া— এরা পেটে কম গ্যাস তৈরি করে বলে আই বি এস রোগীদের জন্য আরাম দায়ক। যেমন,
. গাজর
. আলু
. টমেটো
. কলা
. আঙ্গুর
. বেরি বা জাম
. আর বাদ দিতে হবে, আপেল, তরমুজ, শুকনা ফল।

যা খাওয়া বাদ দিতে হবেঃ

উচ্চ FODMAP যুক্ত খাবার, সাধারণত পেটে গ্যাস তৈরি করে থাকে, তাই এদের বাদ দেয়া বা কম খাওয়া উচিৎ। যেমন,

. রুটি
. পাস্তা
. গ্লুটেন যুক্ত খাবার (বাজারে গ্লুটেন ফ্রি খাবার পাওয়া যায়)

. লো ফ্যাট বা ফ্যাট ছাড়া দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার। . অথবা ল্যাকটজ ফ্রি দুধ খাওয়া।

. ডুবো তেলে অনেকক্ষণ ভাঁজা খাবার বাদ দিতে হবে। চাইলে বেক বা গ্রিল করা খাবার খাওয়া যাবে। কারন তেল অনেকক্ষণ ভাজলে এর ক্যামিকেল চেঞ্জ হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে পেটে গ্যাস তৈরি করে।

. ধূমপান ও মদ্যপান।

. বিভিন্ন ধরনের ডাল খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। কারন এতে পেটে গ্যাস, ব্যাথা ও কোষ্ঠ কাঠিন্য হতে পারে।

. যেকনো ধরনের ফ্রোযেন এবং ক্যান জাত খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে।

যা যা অবশ্যই করতে হবেঃ

১। প্রথমেই একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন যে, কোন কোন খাবার খেলে আপনার কষ্ট হয়।

২। প্রতি ৩/৪ ঘণ্টা পরপর অল্প কিছু খাওয়া, বেশিক্ষন খালিপেটে না থাকা।

৩। প্রচুর পানি পান করা।

৪। নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করা, এতে খাদ্যনালীর গতি স্বাভাবিক থাকে।

৫। অবশ্যই অবশ্যই মানসিক চাপ কমানো, দরকারমত মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া। আই বি এস, যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় সাথে সাথে বহুগুন বেড়ে যায়।

৬। প্রবায়োটিক খাওয়া, বিভিন্ন দই বা বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রবায়োটিক পাওয়া যায়। এই প্রবায়োটিক খাদ্যনালীর উপকারি ব্যাকটেরিয়াকে সক্রিয় করে তোলে, ফলে, পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের প্রবণতা কমে যায়।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র

Leave a comment