অধ্যায় ৩: বিশ্বজগৎ ও পৃথিবী মানুষের জন্য অনন্যসৃষ্ট
ওদের মেসটাতে ঢুকতে হলে একটা ড্রেন পার হতে হয়, পুরোনো কাঁঠাল গাছটার নিচে দিয়ে। মুনির লক্ষ্য করল গাছটার নিচে ছোট-খাট একটা জটলা, সিগারেট দেখা যাচ্ছে কয়েকজনের হাতে। এসময় এই জায়গাটা খালিই থাকে। হয়তো কোন নতুন গ্রূপ এখানে আড্ডা দিচ্ছে, কিছুক্ষন পর এমনিই সরে যাবে – মুনির ভাবল।
কিন্তু আরেকটু এগিয়ে যেতেই মুনিরকে থেমে যেতে হল, কারণ সে ওই জটলার কাল রঙের একটা পাঞ্জাবি দেখতে পেয়েছে। মুনির দাঁড়িয়ে যেতেই পাঞ্জাবিওয়ালা তার দিকে ফিরে তাকাল, আর মুনিরও তাকে সাথে সাথেই চিনতে পেল। এটা সেই লোকটাই, যাকে সে গত সপ্তাহে বাসে দেখেছিল।
মুনির তড়িৎ লক্ষ্য করল, জটলার লোকগুলোর কয়েকজনের মুখে দাড়ি, টুপি আছে কয়েকজনের, একজনের হাতে একটা কাপড়ের ব্যাগে লাঠি জাতীয় কোনোকিছুর হাতলগুলো দেখা যাচ্ছে। লোকটা তার সঙ্গীদের কি যেন বলতেই সবগুলো মাথা একসাথে তার দিকে ফিরে তাকাল।
এক মুহূর্তের মধ্যে মুনির মনস্থির করে ফেলল কি করতে হবে। সে ঘুরে উল্টাদিকে দৌড়াতে শুরু করল। ছুটতে ছুটতেই সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল লোকগুলোও দৌড়াতে শুরু করেছে।
মুনির জানত না সে কোনদিকে যাবে। কিন্তু তার অবচেতন তাকে বলছিল যে কোন খোলা জায়গায় যাওয়া যাবে না, কারণ ওদের সাথে দৌড়ে সে পারবে না। আর ওরা যদি ওকে কোনোভাবে ধরে ফেলতে পারে – রাস্তায় যত ভীড়ই থাকুক না কেন – কেউ জীবন নিজের বাজি রেখে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে না। মুনির পত্রিকায় এসব ঘটনা শত শত বার পড়েছে, এসব ক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে বাঁচাতে হয়।
দৌড়ে মোড়টা ঘুরে আরেকটু সামনে আসতেই হাজি সাহেবের চিপা গলিটা মুনিরের চোখে পড়ল। লোকগুলো এখনো মোড় পর্যন্ত আসে নি, সে আস্তে করে ছোট গলিটার মধ্যে ঢুকে পড়ল – আশা, হয়ত ওরা ওকে হারিয়ে ফেলবে। গলিতে ঢুকে সে হাজি সাহেবের বাসার দিকে ছুটতে শুরু করল – যত তাড়াতাড়ি দূরে সরে যাওয়া যায়, ততই ভালো।
মুনির দৌড়াদৌড়ি করে অভ্যস্ত না, ফলে তার গতি একটু কমে এসেছিল, আর ঠিক তখনি সে পেছনে শুনতে পেল কে যেন বলছে ‘ওই যে’। লোকগুলো তখন চিপাগলির মুখে, কোনোভাবে বুঝে ফেলেছে ও এখানে ঢুকেছে।
মুনির আর ঝুঁকি নিল না – সে নিচু পাঁচিলটা টপকে হাজি সাহেবের বাসার পেছন দিকটায় ঢুকে গেল, তারপর মাথাটা নিচু করে ফেলল। এই এলাকা সে খুব ভালো করে চেনে – মেসের লোকজন শর্টকাটে বড়বাজারের রাস্তায় যেতে অনেকসময়ই হাজি সাহেবের বিল্ডিঙের এই পেছন দিকটা ব্যবহার করে। বাসার পেছনে এখানে-সেখানে পুটলি করা পলিথিন ব্যাগে বাসা আর রান্নাঘরের ময়লা পড়া থাকে, কিন্তু তাড়াহুড়ার মধ্যে কেউ সেগুলো তেমন একটা গ্রাহ্য করে না।
মুনির বিল্ডিঙের চিপা দিয়ে দ্রুতই সামনের গেটটার কাছে চলে এল, খোলা উঠানটা পার হয়ে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে বড় রাস্তায় এসে নামল মুহূর্তের ব্যবধানে। লোকগুলোকে এখন আর পিছনে দেখা যাচ্ছে না, তবু সে প্রথম সুযোগেই চলন্ত একটা রিক্সায় উঠে পড়ল, তারপর হুডটা টেনে দিল। রিকশাওয়ালাকে বলল ডানে মোড় নিয়ে বড় বাজারের দিকে চলে যেতে।
মুনির জানত, এ শহরে আপাতত তার যাওয়ার জায়গা একটাই। বড় বাজার ঘুরে সে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইশাদের বাসায় গিয়ে হাজির হল। রিক্সা থেকে নেমে এক দৌড়ে বারান্দায় উঠে পাগলের মতো করা নাড়তে লাগল।
কেউ একজন তালা খুলে দিয়েছিল, মুনির জানে না কে। দরজা একটু ফাঁকা দেখামাত্র মুনির প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল, তারপর জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল।
কতক্ষন সে অচেতন ছিল তা মুনির জানে না। চোখ খুলে সে দেখল নজরুল সাহেব আর ইশা তার দিকে ঝুকে আছে আর কি যেন দেখছে। সিলিং ফ্যানটা ফুলস্পিডে ঘুরছে। সে বুঝতে পারল তাকে ইশাদের ড্রইংরুমে লম্বা সোফাটাতে শুইয়ে দেয়া হয়েছে। ওর চোখ-গাল ভেজা ভেজা, সম্ভবত কেউ জ্ঞান ফেরানোর জন্য মুখে পানি ছিটিয়েছে।
নজরুল সাহেব একগ্লাস লেবুর শরবত এগিয়ে দিলেন।
‘মুনির, একটু কষ্ট করে এটা খেয়ে নাও। তোমার মনে হয় সুগার কমে গেছে, তাই মাথা ঘুরে পরে গেছো।’
মুনির এক ঢোঁকে শরবতটা খেয়ে ফেলল, তারপর একটু সোজা হয়ে বসতে চেষ্টা করল। নজরুল তাকে উঠে বসতে সাহায্য করলেন।
‘তোমার যদি একটু ভালো লাগে তাহলে বলতে পারো তোমার কোন সমস্যা হয়েছে কিনা।’
মুনির বিকেলে তার মেসের সামনে থেকে ধাওয়া খাবার ঘটনা পুরো খুলে বলল। নজরুল সাহেব গম্ভীর মুখে সব শুনলেন। আর ইশার মুখ হা হয়ে গেল, সে চোখ বড় বড় করে ফেলল।
‘ভাইয়া, আমি কিন্তু আপনাকে বলেছিলাম কালো পাঞ্জাবি থেকে সাবধান থাকতে। আপনি তো ঈশ্বর, জীন, স্বপ্ন, কিছুই বিশ্বাস করেন না। এখন বলেন আমার স্বপ্ন কিভাবে বাস্তব হল?’
নজরুল সাহেব প্রশ্ন নিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মুনির ইশার কথা শুনে দুর্বলভাবে হাসল।
‘এটা একটা কোইন্সিডেন্স। কাকতালীয় ঘটনা।’
‘আপনার আসলে অনেক অহংকার, এজন্য শিকার করতে পারছেন না যে আমার স্বপ্নটাই আপনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আচ্ছা বলেন তো, আমি যদি না বলতাম যে কালো পাঞ্জাবির সাথে আপনার বিপদের সম্পর্ক আছে, তাহলে কি আপনি লোকটাকে দেখে আজকে দৌড়ে পালাতেন?
আপনাকে কিন্তু আপনার অন্ধবিশ্বাসই আজকে মারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল। আপনি সেটা স্বীকার করেন বা না করেন।’
মুনির কিছু বলল না। কিন্তু ইশা নাছোড়বান্দা।
‘বাবা, তুমি উনাকে টেলিপ্যাথির কথাটা বলে দাও না। ওই যে কোনরকম সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াই একজন আরেকজন মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে।’
(যুক্তি: দক্ষ নকশাকার)
নজরুল মাথা নাড়লেন।
‘টেলিপ্যাথি তো পুরো বিজ্ঞান না, তুমি মেডিকেল সায়েন্সের কথাই ধরো না কেন?
বিজ্ঞান তো মানুষের শরীরের অনেক কিছুই এখনো পুরো বুঝে উঠতে পারে নি। এই যে চোখ দিয়ে আমরা দেখি, এটা যে কি ভীষণ জটিল পদ্ধতিতে কাজ করে তা চিন্তা করা যায় না।
এই যে আমাদের শরীর এতো সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করে বানানো, এটা কেউ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে বলতে বাধ্য হবে এটার পেছনে একজন অত্যন্ত দক্ষ ডিজাইনার বা নকশাকার আছেন।’
(প্রতিযুক্তি: বিবর্তনবাদ)
‘আপনি যে চোখের উদাহরণ দিলেন, বিবর্তনবাদ এই চোখের বর্তমান চোখ হয়ে ওঠা খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছে। বিবর্তনই চোখকে এখনকার এই অবস্থায় এনেছে, এখানে ঈশ্বরকে টেনে আনার আর কোন প্রয়োজন নেই।’
মুনির আস্তে করে বলল পাশ থেকে।
‘বুঝলাম, চোখ বিবর্তন প্রক্রিয়ায় এসেছে, মানুষও বিবর্তন প্রক্রিয়াতেই হোমো-সেপিয়েন্স হয়েছে। কিন্তু বিবর্তন তো একটা প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়াটা চালাচ্ছে কে?’
‘প্রকৃতি।’
‘মুনির তুমি বল, এই প্রকৃতিকে চালাচ্ছে কে?’
‘প্রকৃতি নিজে নিজে চলতে থাকা একটা মেশিন।’
‘মুনির, প্রকৃতির এই মেশিনটা চালু করল কে?’
‘আংকেল, ঈশ্বরকে যদি কারো চালু করার প্রয়োজন না পড়ে, তাহলে প্রকৃতিকে কেন চালু করার প্রয়োজন পড়বে?’
‘কারণ ঈশ্বর স্রষ্টা, প্রকৃতি সৃষ্টি।’
‘হতে পারে আংকেল, কিন্তু সেটা আপনার বিশ্বাস, যেমন করে কারো কারো বিশ্বাস যে প্রকৃতিই ঈশ্বর।’
(যুক্তি: বিশ্বজগৎ নিখুঁত এক সৃষ্টি)
ইশা কথাগুলো শুনছিল আর জোরে মাথা নাড়ছিল।
‘কেন বাবা, তুমি ফাইন টিউনিং-এর আইডিয়াটা বলে দাও। আচ্ছা আমিই বলি। আমি তো স্পেস নিয়ে পড়তে পছন্দ করি, আমার খালা কানাডা থেকে আমাকে একটা বই এনে দিয়েছিল। বইটার নাম ‘ইম্প্রোবাবল প্ল্যানেট’, লিখেছেন কানাডিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিউ রস। এই বই থেকেই আমি শিখেছি – আমাদের এই পৃথিবীটা মানুষের বসবাসের জন্য এতটা স্পেশাল, যে এরকম দাবি করে যায় যে পৃথিবীটাকে কেউ পরিকল্পনা করেই এরকম বানিয়েছে।’
‘কয়েকটা উদাহরণ দিতে পারবে?’ মুনিরের কণ্ঠ তখনো দুর্বল।
‘অবশ্যই। প্রথমে বিগ ব্যাং থেকেই শুরু করি। বিগ ব্যাং-এর পর পর পদার্থের ঘনত্ব যদি একটু এদিক-ওদিক হত, তাহলে মহাবিশ্বে প্রাণের বিকাশের পরিবেশই থাকত না – কারণ মহাবিশ্ব হয় তৈরী হয়েই আবার নিজের মধ্যে নিজেই ধ্বসে যেত, না হয় এতো দ্রুত বাড়তে থাকত যে মহাবিশ্ব হয়ে পড়তো শীতল আর শূন্যতায় ভরা।
তারপর আসি আমাদের সৌরজগতে। পৃথিবীটা সূর্য থেকে একদম নিখুঁত একটা দূরত্বে আছে। এই দূরত্বটা যদি একটু কম হত, তাহলে আমাদের গ্রহটা হত শনিগ্রহের মতো গরম, কোন প্রাণ বাঁচতে পারতো না এখানে। আবার এই দূরত্বটা যদি সামান্য একটু বেশি হত, তাহলে আমাদের অবস্থা হত মঙ্গোল গ্রহের মতো, ঠান্ডা আর শুষ্ক, সেখানেও প্রাণ তৈরী হত না।
আপনি পৃথিবী তৈরির প্রাথমিক অবস্থাটা দেখেন। গ্রহ হিসেবে পৃথিবী তৈরির পর পর এর ওপর বিশাল এক গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল। সেটা যদি না হত, তাহলে আমাদের পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড এতো শক্তিশালী হত না, আর আমরা সৌর ঝড় থেকেও বেঁচে থাকতে পারতাম না।
পৃথিবীর প্রাথমিক অবস্থায় এর ওপর অনেকগুলো ধূমকেতু আছড়ে পড়েছিল। ধূমকেতুগুলো সাথে এতো বরফ নিয়ে এসেছিল যে সেগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠে সমুদ্র তৈরির মতো পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। আর আমরা সবাই জানি সমুদ্র প্রাণের জন্য কতটা জরুরি।
তারপর পৃথিবী ঠান্ডা হল, এতে প্রাণের উদ্ভব হল, তারপর একসময় ডাইনোসরের যুগ এলো। ডাইনোসররা মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবী শাসন করল। তারপর পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ল এক বিশাল গ্রহাণু, যার ফলে ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে গেল। যদি ওই গ্রহাণুটা পৃথিবীর ওপর না পড়তো, ডাইনোসররা যদি এভাবে বিলুপ্ত না হত, তাহলে পৃথিবীতে স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিকাশ হত না, মানুষেরও বিকাশের সুযোগ তৈরি হত না।
সৌরজগতে আমাদের প্রতিবেশীদের আপনি দেখেন। মঙ্গল আমাদের প্রতিবেশী, তার পরেই বিশাল এক গ্রহ বৃহস্পতি। আপনি কি জানেন, বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতো বেশি যে সে আশে-পাশের সব ছোটোখাটো গ্রহাণুকে নিজের দিকে টেনে নেয়। বৃহস্পতি যদি এ জায়গাটায় না থাকত তাহলে এই পৃথিবীর ওপর উল্কাবৃষ্টি আর গ্রহাণুবৃষ্টি অনেক বেশি হত, আমরা ধ্বংস হয়ে যেতাম। বৃহস্পতি যেন এই সৌরজগতে আমাদের জন্য আল্লাহর দেয়া এক মহাজাগতিক ছাতা।
তারপর এই মহাবিশ্বের বিভিন্ন ধ্রুবকের কথা চিন্তা করেন। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো যদি একটু এদিক ওদিক হত, তাহলে এই বিশ্বে নক্ষত্রই তৈরী হত না, প্রাণ তো দূরের কথা।
সুতরাং আপনি দেখতে পাচ্ছেন, আমাদের মানুষকে এই পৃথিবীতে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়ার জন্য একের পর এক কতগুলো কোইন্সিডেন্স হয়েছে। এতগুলো কোইন্সিডেন্সের একসাথে ঘটবার সম্ভাবনা কত দুর্বল, সেটা কি আপনি জানেন?
বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী সব টেলিস্কোপ দিয়ে কত মহাকাশ গবেষণা করল। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব তো দূরের কথা, প্রাণের উপযোগী পরিবেশ পর্যন্ত কোন গ্রহে খুঁজে পেল না। সেটা কেন জানেন? সেটার কারণ হচ্ছে এই পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের জন্য বিশেষ পরিকল্পনায় বিলিওন বছর ধরে যত্ন করে তৈরী করা হয়েছে। এটা আপনা-আপনি এরকম হতেই পারে না।’
(প্রতিযুক্তি: বহু-বিশ্বজগৎ তত্ত্ব)
মুনির হাসল। শরবত খাবার ফলেই হয়তো, সে এখন বেশ ভালো বোধ করছে।
‘তোমার কথা শেষ হয়েছে, ইশা?
শোনো, তোমার কথায় বেশি হলে প্রমান হয় যে পৃথিবী বিরল একটা গ্রহ, মহাবিশ্বে প্রাণ হয়তো এসব কারণেই বিরল। কিন্তু এর দ্বারা কোনোভাবেই প্রমান হয় না যে ঈশ্বর এই বিশ্ব শুধু মানুষকে বসবাসের সুবিধা করে দেয়ার জন্যই তৈরী করেছেন।
তোমাকে মনে রাখতে হবে – এগুলো ঘটেছে বলেই এই পৃথিবীতে, এই মহাবিশ্বে প্রাণের জন্ম হয়েছিল। যদি এরকম না হত, তাহলে অন্য ইউনিভার্সের আরেকটা গ্রহে যেখানে এরকম উপযুক্ত পরিবেশ আছে, সেখানে গিয়ে এই প্রাণের উদ্ভবটা হত।
মাল্টিভার্স যদি সত্যি হয়, তাহলে কোন না কোন ইউনিভার্সে প্রাণের উদ্ভব হতোই। আমাদের ইউনিভার্সে এরকম বলেই আমরা এখানে জন্মেছি, তা না হলে আমরা অন্য কোন ইউনিভার্সেই জন্মাতাম।
আর মাল্টিভার্স এতো বড় আর সেখানে ইউনিভার্সের সংখ্যা এত বেশি যে এতগুলো কোইন্সিডেন্সের পরও কোন না কোন জায়গায় প্রাণের উদ্ভব হওয়া সম্ভব ছিল।’
নজরুল এতক্ষন চুপ করে ছিলেন, এইবার মেয়েকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন।
‘একটা জিনিস বলে রাখা ভালো, মাল্টিভার্স কিন্তু একটা ধারণা মাত্র। ঈশ্বরের ধারণার যেমন প্রমান নেই, এরও কোন প্রমান নেই। এক অর্থে এটাও ঈশ্বরে বিশ্বাসের মতোই আরেকটা বিশ্বাস।’
মুনির কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু দেখল নজরুল সাহেব তার মোবাইলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কি যেন পড়ছেন। মিনিট খানেক পর তিনি মুখ তুললেন, তার কপালে গভীর ভাঁজ পড়েছে।
‘মুনির, তুমি মনে হয় আজকে কোনমতে প্রাণে বেঁচে গেছো।’
নজরুল সাহেব তার মোবাইলে অনলাইন নিউস ফিডটা দেখালেন – আজ বিকেল তিনটার দিকে কে বা কারা ময়মনসিংহ মিশনারির ব্রাদার কেভিন বেনেডিক্টকে কুপিয়ে জখম করে রেখে পালিয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ব্রাথার বেনেডিক্টকে মিশনারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেভিনের শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক।
মুনির গম্ভীর হয়ে গেল।
‘ব্রাদার বেনেডিক্টকে আমি চিনি। তার সাথে কয়েক সপ্তাহ আগেও কথা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিনা কি বলব।’
‘তোমার আর এ বাসা থেকে আপাতত বের হওয়ার দরকার নেই। তুমি এখানে কয়টা দিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকো। পরিস্থিতি বুঝে পরে দেখা যাবে কি করা যায়।’ নজরুল যোগ করলেন।
রাত নয়টার দিকে মাহমুদ ভাইয়ের মায়ের ফোন থেকে মুনিরের কাছে একটা কল আসলো। মাহমুদকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা, ফোনও বন্ধ। সে বিকেল চারটার দিকে দোকানে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিল পাঁচ মিনিটের কথা বলে, এখন পাঁচ ঘন্টা হয়ে গেছে সে ফেরে নি। মুনির ফোনটা কেটে দিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় নিশ্চল বসে রইল।
(চলবে)
