কঠিন কোন দর্শন তত্ত্ব লেখার জন্য আজ বসিনি। বরং জীবনে উন্নতি করা বিষয়ে খুব সহজ আর গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তুলে ধরতে চাই, যা বিশেষত আমার সমগোত্রীয় উৎসের যারা তাদের জন্য মাথায় রাখাটা জরুরী। তবে মূল বিষয় শুরুর আগে বলে নেয়া দরকার ঠিক কোন ধরণের উন্নতিকে আমি শ্রেয় বলে বেছে নিয়েছি। যার যার ব্যক্তিগত মত অনুসারে উন্নতি নানা ধরণের হতে পারে। আমার মতে, উন্নতি সেটাই যা ব্যক্তিগত শান্তিকে অটুট রেখে উপযোগিতা বৃদ্ধি করে। অন্য যে কোন ধরণের উন্নতি চিন্তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এ লেখায় তাদের এড়িয়ে যাব।
আলোচনা সহজ করতে আমি দুটো বাস্তব উদাহরণ ব্যবহার করবো। দুটোই আমার নিজের জীবনে দেখে চেখে শিখেছি। আশাকরি পাঠকও এদের সাথে কম বেশি পরিচিত।
জীবনে উন্নতি শিখতে গিয়ে প্রথম শিখেছিলাম, আমি অপ্রতুল, অর্থাৎ আমি প্রাকৃতিক বা জন্ম সূত্রে যা তা একমাত্র উন্নতি করা ছাড়া আর অন্য কোন কিছুর জন্য যথেষ্ট বা পর্যাপ্ত নয়। অবাক হচ্ছেন, ভাবছেন এটা কিভাবে সম্ভব? ভেবে দেখুন, প্রতি ধাপ উন্নতির পর নিজেকে মনে করিয়ে দিয়েছি, এটা যথেষ্ট নয়, আরও লাগবে। কখনো নিজের ভেতরে যথেষ্ট অনুভবের পরিতৃপ্তি প্রকাশ পেলে সমাজকে সাথে নিয়ে নিজকে কড়া শাসন করে দিয়েছি যেন এমনটা আর না হয়। কোনদিন এ প্রশ্ন মাথায়ই আসেনি যে ঠিক কতটুকু উন্নতি করার পর সন্তুষ্ট থাকাটা স্বাভাবিক। অলিখিত ভাবে বুঝে নিয়েছি, উন্নতির ক্ষেত্রে সন্তুষ্টি অবুঝের কাজ, অনেকটা অপরাধের মতো। ফলে উন্নতি করতে করতে যদি উন্নতির চিলে কোঠায়ও পৌঁছে গেছি, শান্তি পাইনি; আবার চিলে কোঠার পর ঠিক কোথায় উঠবো তাও বুঝে উঠতে পারিনি। শুরুর সেই অপ্রতুলতার অনুভূতিটা কিন্তু সাথে রয়েই গেছে। অবশ্য প্রতিবার উন্নতির পর সাময়িকভাবে নিজেকে প্রতুল মনে হত, কারণ গরম গরম স্বীকৃতি রয়েছে হাতের কাছেই। কিন্তু কিছু সময় পর আবার যেই লাউ সেই কদু !
সৌভাগ্যবশত, জীবনের কোন এক পর্যায়ে আমার তথাকথিত উন্নতির দালান দুর্যোগের মুখে পড়ল। প্রাণ বাচাতে শুধু দালান ছেড়ে লাভ হলনা, দালান থেকে বহু দূরে সরে যেতে হল। বেঁচে থাকার আনন্দে উন্নতির মরিচিকার কথা ভুলেই গেলাম কিছু দিনের জন্য। মানুষের মতো বেঁচে থাকাতে যে শান্তি আর সন্তুষ্টি তা প্রথম বারের মতো অনুভব করলাম। ফলে, এর পর উন্নতির জন্য যা কিছুই করিনা কেন, নিজেকে অপ্রতুল ভেবে নয়, বরং যা আছি তাতে প্রতুলতার প্রশান্তি নিশ্চিত হলেই কেবল উন্নতির চিন্তাকে প্রশ্রয় দিয়েছি, নচেত নয়। ফলে, শান্তি এখন জীবনের মূল ধারা, যা উন্নতির উপস্থিতি বা অনুপস্থির উপর নির্ভর করে না।
জীবনে উন্নতি সাধন বড় মধুর জিনিস, কোন সন্দেহ নেই। তবে এ মধুই যদি মূল খাবারে রূপ নেই, তাহলে বাঁচা মুশকিল। উন্নতির শুরুটা হতে হবে ” আমি অপরজাপ্ত নই” এ ধারণা থেকে। তাহলেই স্বাভাবিক জীবনে শান্তিতে থেকে সময়ে সময়ে উন্নতির আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হবে। আর উন্নতির শুরুটা যদি হয় “আমি অপরজাপ্ত” – এ ধারণা থেকে, তাহলে উন্নতির শিখরে পৌঁছে হয়তো বোঝা যাবে – পথ শেষ, কিন্তু শান্তি মিলেনি।
