খাওয়ার শেষে একটু মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে কে না ভালবাসে। আবার চিনি জাতীয় খাবার যে শরীরের জন্য চরম ক্ষতিকর, সেটাও সবাই জানি। তারপরও এক অদ্ভুত নেশা কাজ করে এই চিনির প্রতি।
যারা এই অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার নেশা কমাতে চান, তাদের বলবো, হুট করে একদিনে চিনি খাওয়া বন্ধ না করে, ধিরে ধিরে চিনির পরিমান কমাতে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা একদিনেই বিনা চিনিতে চা খাওয়া শুরু করি, এবং কয়েকদিন পর বিরক্ত হয়ে আবার চিনি দিয়ে চা খাওয়া শুরু করে দেই। তাই এ ক্ষেত্রে আপনার উচিৎ হবে, পুরোপুরি চিনি বাদ না দিয়ে, বরং চিনির পরিমান কমিয়ে দিতে। যেমন ধরুন, আপনি এক কাপ চায়ে তিন চা চামচ চিনি খান। সেক্ষেত্রে, আপনি চিনির পরিমান তিন চামচ থেকে আড়াই চামচে নিয়ে আসুন। আর এভাবে চলুক এক সাপ্তাহ। এক সাপ্তাহ পর আড়াই চামচ থেকে দুই চামচে কমিয়ে আনুন, এবং চলতে থাকুক আরও এক সপ্তাহ। এভাবে সময় নিয়ে আস্তে আস্তে চিনির পরিমান খাবারে কমিয়ে দিলে, তা শরীর সহজে মেনে নিতে পারে আর অভ্যাসটাও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এবং বিরক্তি আসবে না সহজেই।
এতো গেলো চায়ের কথা, অনেকেই আছেন, যাদের প্রায়ই মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য এক ধরনের ক্রেভিং হয় বা খুব খেতে ইচ্ছা করে। এক্ষেত্রে কিভাবে এই ক্রেভিং কমানো যায়, তা নিয়ে কিছু টিপস দিতে চাই।
১। মিষ্টি খেতে মন চাইলে সাথে সাথে এক/ দুই গ্লাস পানি পান করে নিন।
২। বেশি মিষ্টি খেতে মন চাইলে প্রচণ্ড টক ফল খেতে পারেন। যেমন, তেতুল, কমলা, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, জলপাই ইত্যাদি।
৩। চাইলে বিভিন্ন ধরনের আচার খেতে পারেন। প্রাচীন চায়নাতে বলা হয়ে থাকে, এই আচার বা ফারমেনটেড খাবার চিনির আসক্তি কমাতে পারে।
৪। বেশি মিষ্টি খেতে চাইলে, খুব ঝাল কিছু খেতে পারেন। যেমন, ঝালমুড়ি, ঝাল টমেটো সুপ (ঘরে বানানো)।
৫। চিনির বিকল্প হিসেবে হাতের কাছে রাখুন মিষ্টি ফল। যেমন, কলা, নারকেল, পাকা আঙুর, আপেল এমনকী আমও (তবে অতিরিক্ত নয়)।
৬। বাড়িতে মিষ্টি জাতীয় খাবার কেনা বা রান্না করা কমিয়ে দিন, দেখবেন, মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যাবে।
৭। যাদের ভাত খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়ার নেশা আছে, তারা ভাত খাওয়া শেষে একটি চিনিবিহিন চুইংগাম চাবাতে পারেন।
৮। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম আপনার চিনি খাওয়ার ইচ্ছাকে কমাবে। ব্যায়াম করলে শরীরে হ্যাপিনেস হরমোন (Happiness hormone) নিঃসরণ হয়, ফলে আপনার অতিরিক্ত চিনি খেতে ইচ্ছা করবে না।
৯। রাত জাগবেন না বা রাতের ঘুম নিশ্চিত করুন, নতুবা চিনি খাওয়ার নেশা বেড়ে যাবে।
১০। কারো যদি কোন মানসিক চাপ বা সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারন যেকোন স্ট্রেস বা অশান্তিতে চিনি খাওয়ার পরিমান বহুগুন বেড়ে যায়।
আশার কথাঃ
বিয়ে বাড়ি, জন্মদিন বা কোন দাওয়াতে দু’-চার চামচ পায়েস বা ছোট এক স্লাইস কেক খেলে তেমন কোনও ক্ষতি হয় না। মনে রাখবেন চিনি এমনই একটি উপাদান, যা খেতে খেতে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিলে কিছুদিন পর সেটাও অভ্যাস হয়ে যাবে, তখন আর আগের মতো ক্রেভিং তাড়া করে বেড়াবে না আপনাকে। কেবল খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রতিদিন অতিরিক্ত চিনি না খাওয়া হয়। কারণ চিনিতে তেমন কোন স্বাস্থ্যকর গুণাবলী নেই, আছে শুধু ক্যালরি যা ধীরে ধীরে চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। তাই চিনির নেশা ছাড়ার জন্য আপনার ইচ্ছাই যথেষ্ট।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
………তিনা শুভ্র।
