ওজন কমানোর জন্য শুরুতেই আমরা ভাতটাকে বাদ দিয়ে দিই। আমরা মনে করি যে, ভাত খাওয়া বাদ দিলেই বোধ হয় ওজন কমানো সম্ভব। কিন্তু ভাত খাওয়া তো আমাদের অনেক দিনের অভ্যাস, যেটা ছেড়ে দেয়া প্রায় অসম্ভব। দেখা যায়, আমরা ভাত না খেয়ে, এটা-ওটা নানা জিনিস খেয়ে পেট ভরাই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সেই খাবারগুলোতে অতিরিক্ত তেল, চিনি, মসলা থাকে। তাই ওজন কমার বিপরীতে বেড়ে যেতে পারে। আবার ভাত না খেয়ে খেয়ে এক ধরনের বিরক্তিও কাজ করে, ফলে আর ডায়েটিং ধরে রাখা যায় না। ওজন আবারো বাড়তে শুরু করে। আপনি কি জানেন, পরিমাণমতো ভাত দুপুরে ও রাতে খেয়ে নিলে পেটের সঙ্গে সঙ্গে মনও ভরবে। ভাজাপোড়া-জাতীয় খাবারের দিকে আকর্ষণ থাকবে না। থাকবে না ওজন বাড়ার আশঙ্কাও। তবে এক্ষেত্রে ভাত খাওয়ার কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে খেতে হবে।
ভাত খেয়েও কিভাবে ওজন কমানো যায়, আজ আমরা তা নিয়ে আলোচনা করবোঃ
. ভাত খাওয়া শুরু করার আগে ১/২ গ্লাস পানি পান করে নিন।
. ভাতের পরিমাণ কমিয়ে ফেলুন। দুপুরে অথবা রাতে একবেলাই ভাত রাখুন, তবে তা হতে হবে মাপ মতো, ১ কাপ ভাত। আর ১ কাপ ভাত মানেই শুধুমাত্র ১ কাপ ভাত।
. প্লেটের এক–চতুর্থাংশ ভাত নিন। প্লেটের অর্ধেকটা জুড়ে থাকবে শাকসবজি আর সালাদ। বাকি এক–চতুর্থাংশ থাকবে প্রোটিন বা মাছ/মাংস/ডিম ও ডাল। মাথায় রাখতে হবে, আমরা ভাত দিয়ে তরকারি খাব না, তরকারি দিয়ে ভাত খাব। দেখবেন, সবজি, সালাদ, ডাল ইত্যাদি আপনার ভাত খাওয়ার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেবে।
. চালের ধরন বদলে ফেলুন। সাদা চালের পরিবর্তে লাল চালে ফাইবার বেশি, ক্যালরি কম। তাই লাল চালের ভাত খাওয়ার চেষ্টা করুন।
. যে চালের ভাত ঝরঝরে হয়, তাতে শর্করা কম তাড়াতাড়ি বাড়ে। আর যেসব চালের ভাত আঠালো, এতে শর্করা দ্রুত বাড়ে। এক্ষেত্রে কম আঠালো বা ঝরঝরে চালের ভাত বেছে নিন।
. ভাত খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে যাওয়া ঠিক নয়। খাওয়ার পর ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট নানা ধরনের কাজ ও হাঁটাহাঁটি করুন, যাতে তা হজম হওয়ার সময় পায়। ৩০/৪৫ মিনিট পর চাইলে ১০/১৫ মিনিটের জন্য একটি ছোট ন্যাপ নিতে পারেন।
. খাবারের পদ বেশি থাকলে ভাত বেশি খাওয়া হয়ে যায়। কাজেই খাবারের পদ কম রাখার চেষ্টা করতে হবে।
. ফ্রাইড রাইস, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদিতে ক্যালরি বেশি। এগুলো রেগুলার না খেয়ে মাঝে মাঝে খেতে পারেন।
ভাত যে শুধু ক্ষতি করে থাকে তাও কিন্তু নয়। ভাতেরও অনেক উপকারি দিক আছে, চলুন জেনে নেই সেগুলো…
. ভাতকে বলে ‘ফ্রি ফুড’৷ কারণ এতে সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, গ্লুটেন ইত্যাদি ক্ষতিকর উপাদান থাকে না। চর্বি থাকেই না প্রায়।
. ভাতে থাকে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা স্টার্চ, শরীরকে শক্তি জোগাতে যার বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
. ভাতে থাকে অনেক ফাইবার, যা পেটের সমস্যা কমাতে, সুগার ও ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলে রাখতে সাহায্য করে।
. ভাত সহজে হজম হয়। ফলে অসুখবিসুখের মধ্যেও খাওয়া যায়।
. ভাত হজম হয় ধীরে। ফলে পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে।
. ভাত খেলে ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে বলে অল্প খেলেও শরীর–মন তৃপ্ত থাকে।
. ভাতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস। বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে খেলে সে উপকার আরও বহুগুন বেড়ে যায়।
তাই ওজন কমানোর জন্য ভাতকে পুরোপুরি বাদ না দিয়ে, নিয়ম মতো খান, এতে যেমন আপনার ওজনও বাড়বে না, তেমনি মনও খুশি থাকবে।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
