আমাদের যাদের ওজন বেশি, তাদের জন্য চিনি যেন একটা বেদনাদায়ক স্মৃতি। এতো পছন্দের একটা খাবার, অথচ খাদ্যতালিকায় সবসময় রাখতে পারেন না। আবার চিনির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আজ আর কারও অজানা নেই। অনেকে আবার সাদা চিনিকে স্লো পয়োজন হিসেবেও মনে করেন। অতিমাত্রায় চিনি খেলে, এটা চর্বি আকারে লিভারের চারপাশে জমা হয়, ওজন বাড়াতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে এটা ডায়াবেটিসের দু’টি ধরনকে বাড়িয়েও দিতে পারে। সাথে হাই ব্লাড প্রেসার, স্ট্রোক, কিডনি ড্যামেজ তো আছেই।
মনে করা হয়, চিনি মানুষের মস্তিষ্কে কোকেনের মতো প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে চিনির প্রতি একধরনের নেশা তৈরি হয়। আর এই নেশা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র সমাধানই হলো চিনির বিকল্প কিছু খুঁজে বের করা। আর এ বিকল্প চিনির নাম হচ্ছে ‘স্টেভিয়া’, যা চিনির চেয়ে প্রায় ২৫০-৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি এবং খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহার করা হয়।
ক্ষতিকর চিনির বিকল্প হিসেবে ডায়াবেটিক রোগীসহ সকলে খেতে পারবেন। আর তাই স্টেভিয়া নিয়ে আরো প্রচু্র গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষকরা এই প্রাকৃতিক চিনিকে সাধারণ চিনির চেয়ে ভালো বলে মনে করছেন।
আজ আমরা স্টেভিয়া নিয়ে কথা বলবোঃ
. স্টেভিয়া হল এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ। স্টেভিয়ার পাতা চিনির চেয়ে কমপক্ষে ৪০গুণ বেশি মিষ্টি হয়ে থাকে।
. এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান।
. এতে ক্যালোরির পরিমান জিরো, কার্বোহাইড্রেটও জিরো এবং রক্তে চিনির বা কার্বো এর পরিমান বাড়ায় না।
. স্টেভিয়াতে কোনো ক্যালরি না থাকায় স্থূলতা রোধ করে, শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। চিনি থেকে কেউ যদি স্টেভিয়াতে নিজের অভ্যাসটা ঘুরিয়ে নিতে পারেন তবে তার ওজন কমতে বাধ্য। প্রতি সপ্তাহে অন্তত গড়ে ২০ গ্রাম ওজন কমানো সম্ভব।
. মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়, খাবারে গুণাগুণ বৃদ্ধি করে ও সুগন্ধ আনে, শরীরের সুস্থতা ও সতেজতাবোধ সৃষ্টি করে।
. এতে অ্যাসপার্টেম, সেকারিন, সুক্রলস বা কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় কোনো জিনিস নেই। ফলে ক্যান্সার হবার ভয় থাকে না।
. স্টেভিয়া ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
. ত্বকের ক্ষত নিরাময় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমন করে, খাদ্য হজমে সহায়তা করে।
এখন পর্যন্ত স্টেভিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা এর কোনো খারাপ দিক চিহ্নিত করা যায়নি, তবে বিজ্ঞানীরা এখনও পরিক্ষা নিরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্টেভিয়ার একটা খারাপ দিক হলো, এটা খাওয়ার পর, এক ধরনের হালকা তিক্ত ভাব মুখে লেগে থাকে, যেটা খাবারের সুস্বাদকেও অনেকটা মাটি করে দেয়। আর এই জায়গাটিতেই রয়েছে স্টিভিয়া সমর্থকদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যারা চিনি ভালবাসেন, তাদের কাছে স্টেভিয়ার এই স্বাদ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই বিজ্ঞানিরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিভাবে স্টেভিয়ার স্বাদ পুরোপুরি চিনির কাছাকাছি নেয়া যায়।
তবে সবচাইতে ভাল হয়, যদি আপনি মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি নেশাটা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনেন। এতে একটা সুন্দর অভ্যাসও তৈরি হবে আপনার।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
