ভুঁড়ি নিয়ে কোন সমস্যায় নাই, এরকম লোক খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কেন এই ভুঁড়ি হয়, তা নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলে থাকেন। কেউ বলেন, ভাত খেলে ভুঁড়ি হয়, কেউ বা বলেন, দুপুরে ভাত খেয়ে ঘুমালে ভুঁড়ি হয়, কিংবা অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে ভুঁড়ি হয়। আসলেই কি তাই, চলুন দেখে নেই, কেন ভুঁড়ি হয় আমাদের। কেননা, যদি আমরা কারণটা জানতে পারি, তাহলে হয়তবা ভুঁড়ি কমাতেও পারবো…
প্রতিদিন আমরা নানা ধরনের খাবার খাই। সেই খাদ্যগুলো খাদ্যনালীতে ভেঙ্গে, রক্তে চিনি সহ আর আনেক কিছু চলে আসে। আবার রক্তের এই চিনিকে দেহের বিভিন্ন কোষ ব্যাবহার করে এবং শক্তি উৎপন্ন হয়। তবে শরীর কিন্তু সবটুকু শক্তি ব্যাবহার করে না। ঠিক যতটুকু তার দরকার ঠিক ততটুকুই শরীর ব্যাবহার করে। বাকিটুকু জমা থাকে লিভারে, মাংপেশিতে এবং চর্বি হিসেবে শরিরের বিভিন্ন জায়গায়।
এই চিনিকে রক্ত থেকে দেহের বিভিন্ন কোষে নিয়ে যায় ইন্সুলিন। শরীরে যদি ইন্সুলিনের পরিমান কম হয়, তাহলে রক্তের চিনি আর কোষে যেতে পারবে না। তখন কোষ কোন চিনি না পাওয়ায়, কোন শক্তি তৈরি করতে পারবে না। শরীর তখন দুর্বল অনুভব করবে। এজন্য আপনি বারে বারে খাবার খাবেন ঠিকই কিন্তু দুর্বলতা কাটবেনা কিছুতেই। আর ঠিক এই অবস্থাকেই বলে ডায়াবেটিস।
শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে তা চর্বি হিসেবে শরীরে জমতে থাকবে। কিন্তু চর্বি যখন পেটে জমতে থাকে, তখনই ঘটে অঘটন। কারন পেটের এই জমা চর্বি আবার ইন্সুলিনকে কাজ করতে বাঁধা দেয়। আর ইন্সুলিনের কাজে বাঁধা মানেই হল, চিনি কোষে ঢুকতে পারবে না। অতিরিক্ত চিনি রক্তে থেকে যাবে। এই ইন্সুলিন তখন চর্বি গলতে দিবে না এবং খুধা কমানোর যে হরমোন লেপটিন, তাকেও ইন্সুলিন বাঁধা দিবে। ফলে সবসময় আপনার খুধা লাগবে।
আপনি যদি প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে জোরে জোরে হাঁটেন, তাহলে খুব সহজেই ইন্সুলিনের সাহায্য ছাড়াই, রক্তের চিনি পৌঁছে যাবে কোষে। এবং পরবর্তীতে আপনি কার্বো খেলেও পরবর্তী বেশ কয়েক ঘণ্টা, ইন্সুলিনের সাহায্য ছাড়াই চিনি শরিরের কোষে পৌঁছে যাবে। যেহেতু ইন্সুলিন রক্তে আসছে না, তাই লেপটিনের কাজেও বাঁধা পরছে না। খিধাও কম লাগবে। খিধা কম মানেই খাওয়াও কম। ফলে ওজন কমতে থাকবে। আর ইন্সুলিন যেহেতু নাই, তখন চর্বি গলতেও কেউ বাঁধা দিবে না।
আমাদের এমন খাবার খেতে হবে, যেন পেট ভরবে, রক্তে চিনি আসবে না। ফলে ইনসুলিনও আসবে না। খাদ্যতালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার থেকে সবচেয়ে বেশি চিনি আসে। আর শর্করা জাতীয় খাবার হল, ভাত, রুটি, বিস্কুট, পাস্তা, আটা ময়দা সুজির তৈরি খাবার, মিষ্টি জাতীয় যেকোনো খাবার। তাই এজাতীয় খাবার যথাসম্ভব কম করে খেতে হবে। যাকে বলা হয় লো কার্বো ডায়েট।
খাদ্যতালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার হল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি। এগুলোতেও চিনি বা শর্করা থাকে, তবে এগুলো প্রতিদিন ভালো পরিমানে খেতে পারবেন। যাকে বলা হয় হাই প্রোটিন ডায়েট।
খাদ্যতালিকায় চর্বি জাতীয় খাবার নিয়ে আমাদের নানা মত রয়েছে, রয়েছে নানা বিতর্ক। এক্ষেত্রে আমাদের জানতে হবে কোন চর্বি খাবো আর কোন চর্বি খাবো না। মাখন, ঘি, মাছের তেল, বাদাম, অলিভ তেল, বাদামের তেল এগুলো খেতে কোন বাঁধা নেই।
তবে, গরু বা খাসির চর্বি, মুরগির চামড়া, মগজ, হাড়ের মজ্জা এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
মুল কথাঃ
প্রতিদিন ৪৫/৬০ মিনিট করে জোরে জোরে হাঁটুন এবং লো কার্বো, হাই প্রোটিন ডায়েট খান, সুস্থ থাকুন।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…… তিনা শুভ্র ।

খুব কাজের তথ্য
LikeLike