বর্তমান সময়ে, রান্নায় বিভিন্ন রকমের তেল ব্যাবহার যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, রাইস ব্রান অয়েল, ফ্লাক্স সিড অয়েল, কোকোনাট অয়েল, সিসেমি অয়েল, গ্রাপ সিড অয়েল, কর্ণ অয়েল, পিনাট অয়েল আর আর কত কি যে বাজারে আছে। সত্যি বলতে, উপরের এই তেলগুলো খুবই স্বাস্থ্যকর। প্রায় সবারই উচিত এগুলো নিয়মিত ব্যাবহার করা।
তারপরও একটা কিন্তু থেকেই যায়। যেটা হল দাম, এই তেলগুলোর দাম অনেক বেশি, যা সাধারন মানুষের ক্রয় সীমার পুরোপুরি বাইরে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তেল এমনই একটা খাবার, যেটা সবকিছুতেই সবসময় ব্যাবহার হয়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকই কম আয়ের। তারাই বা কি করবে, ধনীরা সবাই ভালো ভালো তেল খাবে আর সাধারণরা বাজে তেল খেয়েই জীবন পার করে দিবে?
ব্যাপারটা আসলেই একটা বিরাট ইস্যু। আসুন আজ সাধারন মানুষের ভোজ্য তেল নিয়ে আলোচনা করি।
প্রথমেই একটা কথা বলি, সুস্থ থাকার জন্য, আমরা লো ফ্যাট বা কম তেল খাওয়াকেই বেশি পছন্দ করি। কারন লো ফ্যাট ডায়েটকে সুসাস্থের মূলমন্ত্র বলা হয়। তেল আপনি খাবেন তবে তা অবশ্যই বুঝে শুনে। যে তেল আপনার দরকার বা যা খেলে আপনার জন্যে ভালো তাই খাবেন। আমাদের বডি মাসল এবং ব্রেইন ফাংশন এর এনার্জির উৎস এই তেল। তাই তেল একেবারে বাদ করা যেমন যাবে না, আবার একেবারে বেশিও খাওয়া যাবেনা। আমদের ক্রয় সীমার মধ্যে সাধারণত সয়াবিন তেল, ক্যানোলা তেল, সান ফ্লাওয়ার তেল, সরিষা তেল ইত্যাদি রয়েছে। এই তেলগুলো কিন্তু আপনার জন্য বিষাক্ত বা অনুপযুক্ত, তা নয়। এই তেলগুলোরও কিছু উপকারি দিক রয়েছে। হতে পারে এগুলো বর্তমান তেলগুলোর মতো অতো উচ্চ উপকারী নয়, তাই বলে এরা বাতিলের মধ্যেও পরে না। শুধু স্বাস্থ্যকর তেল বাছাই করলেই হবেনা এর সঠিক ব্যবহারের নিয়ম জানতে হবে। যেমন,
১। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তেলের স্মোক পয়েন্ট। যে তাপমাত্রায় তেল পুড়ে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি করে তা হল তেলের স্মোক পয়েন্ট, যেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই রান্নার পদ্ধতির ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন, অলিভ অয়েল একটি আদর্শ তেল হলেও এর স্মোক পয়েন্ট অনেক কম হওয়ায় ভাজাপোড়ার জন্য এই তেল ঠিক নয়। তবে সালাদ ড্রেসিং এবং অল্প আঁচের রান্নার জন্য ভালো। আর আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে খাবার রান্না করা হয় তাতে বেশি স্মোক পয়েন্ট (১৭৭ থেকে ২৩২ ডিগ্রি) সম্পন্ন তেল কেনাই উপযুক্ত। এক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের স্মোক পয়েন্টও অনেক বেশি (২৫৬ ডিগ্রি)। বেশি তাপমাত্রার রান্না, ভাজাপোড়া ইত্যাদি খাবার তৈরির জন্য সয়াবিন তেল বেশি উপযোগী। একই ভাবে সানফ্লাওয়ার তেল, ক্যানোলা তেলেও ব্যাবহার করা যেতে পারে। আর এদের চেয়ে সরিষার তেলও আরো বেশি ভালো।
২। খাবারকে যথাসম্ভব কম ভাজতে চেষ্টা করুন। উচ্চ তাপমাত্রা রান্না পুরোপুরি নিষিদ্ধ। যদি ভাজতেই হয়, তবে যথাসাধ্য কম তেল ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে টিস্যু দিয়ে ভাজা খাবারের বাইরে সেঁটে থাকা তেল মুছে নিন। অথবা গ্রিল করে খেতে পারেন।
৩। ভাজাভুজির পর বেঁচে যাওয়া তেল পরে আর ব্যবহার করবেন না৷ এতে প্রচুর ক্ষতিকারক উপাদান শরীরে প্রবেশ করে৷ যার মধ্যে অন্যতম হল ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান। কাজেই রাস্তার তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।
রান্নায় যে তেলই ব্যাবহার করুন কিংবা তেল যতই ভালো হোক না কেন, খাবারে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং মাত্রাতিরিক্ত ভাজাপোড়া সবার জন্যই ক্ষতিকর।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…তিনা শুভ্র ।
