শাক সবজি ও ফলমূল খেলে তো ওজন কমে, তবে যদি ফল মিষ্টি হয়, তাহলে????

আমরা অনেকেই মনে করি বেশি মিষ্টি ফল খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যাবে, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগ দেখা দিবে। কিন্তু ব্যাপারটা সত্য নয়। ফলে প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা কেমিক্যাল ও কৃত্রিম চিনিমুক্ত। তবে মাত্রাতিরিক্ত মিষ্টি ফল খাওয়াও উচিত নয়। খাদ্যতালিকায় কার্বো বা শর্করার পরিমান কমানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই বলে সব কার্বো বা শর্করাও কিন্তু খারাপ নয়। চলুন জেনে নেই কোনগুলো খারাপ আর কোনগুলো ভালো…

কার্বো বা শর্করা ৩ ধরনের হয়ে থাকে,

১। অচিনি বা মিষ্টি ছাড়া কার্বো, যেমন, ভাত, রুটি, পাস্তা ইত্যাদি।

২। চিনি বা মিষ্টি জাতীয়, যেমন, যেকোনো মিষ্টি খাবার।

৩। ফাইবার বা আঁশ, যেমন, সকল শাকসবজি ও ফলমূল।

দেখা যায় যে, শুধুমাত্র ফাইবার বা আঁশ ছাড়া বাকি সকল কার্বো বা শর্করা শরীরের ভেতর গিয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয় আর শক্তি উৎপাদন করে অথবা চর্বিতে পরিণত হয়। আর অতিরিক্ত চর্বি ডেকে আনে নানান দুর্ভোগ বা জটিলতা। তাই এরা খারাপ শর্করা বা খারাপ কার্বো নামে পরিচিত। অপরদিকে আঁশ বা ফাইবার ভালো শর্করা বা কার্বো নামে পরিচিত। গবেষণা বলছে, খারাপ শর্করা দূর করতে পারলে রক্তে গ্লুকোজের গড় পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

চলুন জেনে নেই, ভালো শর্করা বা ভালো কার্বো কিঃ

উদ্ভিদ দেহে উপস্হিত সেলুলোজই হল ফুড ফাইবার বা খাদ্য আঁশ। মানুষ সেলুলোজ হজম করতে পারে না বলে খাদ্যনালীতে এই আঁশ প্রায় অপরিবর্তিত অবস্হায় থেকে যায় এবং মলের সাথে বেরিয়ে যায়। যা শরীরে মেদ জমতে বাঁধা দেয়, ফলে আপনি খুব সহজেই মোটা হবেন না। এরই সাথে আঁশ কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
সব ধরণের সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ফলের খোসা, শস্য দানার বহিরাবণ হল সেলুলোজের ভাল উত্সো। তাছাড়া বাজারে প্রাপ্ত ইসবগুলের ভূষি খুব ভাল ফাইবার বা আঁশ। মনে রাখবেন ফুড ফাইবার কেবলমাত্র উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া যায়। প্রাণীজ উৎস থেকে আঁশ পাওয়া যায় না। আর এজন্যই ডাক্তাররা বেশি বেশি শাক সবজি ও ফলমূল খেতে বলে থাকেন।

ফল ও শাকসবজির আঁশ কি করে;

১। খাদ্যের আঁশ পানি ধরে রেখে মলের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

২। খাবারে উপস্হিত বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ শুষে নিয়ে খাদ্যনালি পরিষ্কার রাখে এবং মলের সাথে বের করে দেয়।

৩। এ ধরণের শর্করা আস্তে আস্তে শক্তি নির্গত করে, যা রক্তের গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিস রোগীদের বেশ উপকারে আসে।

৪। এই আঁশগুলো শেষপর্যন্ত শরীরের ভেতর গিয়ে চর্বিতে পরিণত হয় না।

৫। আঁশ জাতীয় খাবার অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, তাই ঘন ঘন খিধা লাগে না, ফলে খাওয়াও কমানো যায়। এতে ওজন কমাতে সাহায্য হয়।

৬। শাক সবজি ও ফলমূল থেকে আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেতে খোসাসহ ফল খাওয়া উচিত।

তাই খাদ্যতালিকায় অবশ্যই প্রতিবেলা শাক সবজি ও ফল রাখুন। আর ফল যদি মিষ্টিও হয়, তাহলে বাদ না দিয়ে পরিমানে কমিয়ে দিন। আপনার খাবার বাছাই করার সাধারণ নিয়ম হলো, প্লেটের খাবারের রঙের দিকে খেয়াল করা। সাদা খাবার কমিয়ে, সবুজ ও রঙ্গিন খাবার বাড়িয়ে দেয়া।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র ।

Leave a comment