আমাদের বাঙ্গালীদের ঈদ মানেই নানা ধরনের মজাদার খাবার। এর মধ্যে মিষ্টি খাবারের স্থান সবার উপরে। সেমাই ছাড়া আমাদের ঈদ যেন সম্পূর্ণ হয় না। শুধু কি তাই, ফিরনী, পায়েস, জর্দা, দই-মিষ্টি, সন্দেশ আর কত কি। আর ঈদের দিনে খেতে কোন বাড়নই মন মানতে চায় না। আবার মিষ্টি খাবারের ভয়ে, আমরা মিষ্টি জাতীয় খাবার মন ভরে খেতেও পারি না। তবে হতাশ হবার বা মন খারাপ করার কোন কারন নেই। আজ আমরা চিনির বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়া নিয়ে কথা বলবো। ইতিমধ্যেই আমরা অনেকে চিনির বিকল্প হিসেবে, নানা আর্টিফিশিয়াল সুইটনার্স ব্যাবহার করেছি। এদের সবারই রয়েছে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কেননা এরা কৃত্রিম ভাবে তৈরি হয়, যা ক্যান্সারের অন্যতম একটি কারন।
স্টেভিয়া পৃথিবীর এক অত্যাশ্চর্য মিষ্টি গুল্ম জাতীয় ভেষজ গাছ। এ গাছ শত শত বছর ধরে প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চল রিওমন্ডে এলাকায় চাষাবাদ হতো। ১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এমএস বার্টনি স্টেভিয়াকে প্রথম বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন।
স্টেভিয়ার অতি গুরুত্বপূর্ণ গুণ বৈশিষ্ট্য হলো এর মিষ্টতায় কোনো ক্যালোরি কিংবা কার্বোহাইড্রেট নেই। ফলে দেহে কখনো শোষিত হয় না কিংবা কোনো তাপ উৎপাদন করে না। এই মিষ্টি ডায়াবেটিক রোগী সেবন করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণের কোন পরিবর্তন হয়না। এর ভেষজ উপাদান মানুষের দেহে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। এ যেন সৃষ্টিকর্তার এক অলৌকিক নিদর্শন। কারণ এটি অকল্পনীয়ভাবে মানুষের দেহে প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে স্টেভিয়া ডায়াবেটিক, হাই প্রেসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, শরীরের সুস্থতা ও সচেতনতাবোধ উদ্দীপক ও কান্তিনাশক হিসেবে স্টেভিয়ার ব্যবহার অদ্বিতীয়। এ ছাড়াও দাঁতে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ প্রতিরোধ রোধে স্টেভিয়া যেমন অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে তেমনি পাকস্থলিতে হজমে সহায়তা করে। লিভার, প্যানক্রিয়াস ও স্প্লিনের পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ত্বকের নিরাময় করে।
হয়তো ভাবছেন, কেন এই স্টেভিয়া বিশ্ব জুড়ে ব্যাবহৃত হচ্ছে না??
স্টেভিয়ার এতো এতো গুন থাকা স্বত্বেও কেন এটা পুর বিশ্বে ব্যাবহৃত হচ্চে না? এই প্রশ্নের সাথে জড়িত রয়েছে নানান কন্সপিরেসি…
WHO-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন৷ বিশ্বে চিনির ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১৫০ টন৷ বাজারে স্টেভিয়ার অবাধ বিচরণ হলে ইউরোপীয় চিনি উৎপাদনকারীদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে৷ গবেষকরা বলছেন, অনেকটা তামাক ব্যাবসার মত, চিনি ব্যাবসার এক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে৷ চিনির বাজারে ভাল কোনো দ্রব্যের অনুপ্রবেশ তারা মেনে নিতে পারছে না। শুধু চিনির লবিই যে স্টেভিয়ার অগ্রযাত্রায় অসুবিধায় পড়বে তাই নয়, ক্ষতির সম্মুখীন হবে রাসায়নিক সুইটনার্স-এর উৎপাদকরাও৷ কারন ভোক্তারা চান প্রাকৃতিক সুইটনার্স, তারা কখনোই আর্টিফিশিয়াল সুইটনার্স চান না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে একজন আইসক্রিম উৎপাদনকারী আগে ১০ কেজি চিনি ব্যবহারের স্থলে, এখন শুধু ১০ গ্রাম স্টেভিয়ার শুকনো প্রক্রিয়াকৃত সাদা পাতা ব্যবহার করে অনেক বেশি সফল হবেন। এতে চিনির চেয়ে অনেক গুণ খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বিভিন্ন সময় চিনি রফতানিকারক দেশসমূহ ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো স্টেভিয়াতে বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে বলে প্রচারণা করলেও সাম্প্রতিক সময়ে USFDA (United State Food and Drug Administration) এর গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এর মধ্যে কোনো বিষাক্ত পদার্থ নেই।
যারা প্রথম প্রথম স্টেভিয়া ব্যাবহার করবেন, তাদের কাছে এর স্বাদ একটু হালকা তিতা লাগতে পারে। কিন্ত ব্যাবহার করতে করতে আপনি স্টেভিয়ার স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।
যারা স্টেভিয়ার স্বাদ নিয়ে খুশি নন, তারা চাইলে যেকোনো মিষ্টি খাবার তৈরির সময়, ৮০ ভাগ স্টেভিয়া আর ২০ ভাগ সাধারন চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে মিষ্টি খাবারের স্বাদও অনেকটা ন্যাচারাল হবে এবং চিনির ব্যাবহারও কমানো যাবে।
কোথায় পাওয়া যাবেঃ
অাপনার নিকটতম যেকোন ফার্মেসি বা সুপার স্টোরে পাওয়া যাবে। কেনার অাগে ভালোমতো দেখে নিন।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
