ঈদের দিনে বা যেকোন ভারী খাবারের পর, অবশ্যই অবশ্যই বোরহানি রাখুন আর চাঙ্গা থাকুন সারাদিন…।

ঈদ মানেই মজার মজার নানাধরনের খাবার খাওয়া। ইচ্ছা থাকলে বা চেষ্টা করেও মুখরোচক খাবারের আয়োজন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। কোরবানির ঈদে যার মাত্রা বেড়ে যায় আরও বেশ অনেকখানি। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি মাংস খাওয়া হয় বাধ্যতামুলকভাবেই। এসময় অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার পর অনেকেই নানান সমস্যায় পড়েন, যেমন, বুক জ্বলা, পেট ফাঁপা, বদ হজম, পাতলা পায়খানা, বমি, এসিডিটি ও গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। আর এ সমস্যাগুলো যেন না হয়, সেজন্য আপনার উচিত হবে, আপনার খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কোল্ড ড্রিঙ্কস পান না করে, আপনি বেছে নিতে পারেন, সুস্বাদু বোরহানি।

বোরহানি হল, টক দই দিয়ে তৈরি একধরনের পানীয়। এর উৎপত্তিস্থল হল বাংলাদেশে। বিশেষ করে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের যেকোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে বোরহানি একটি অপরিহার্য পানীয়।

এই বরহানির রয়েছে নানান উপকারী দিক, যা আমাদের অনেকেরই অজানা। আজ আমরা এই বোরহানি নিয়েই কথা বলবো…

বরহানির উপকারিতাঃ

১। বোরহানির প্রধান উপকরণ হল টকদই, পুদিনা পাতা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, লবঙ্গ, যেগুলো আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে কাজ করে।

অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ার পর বোরহানি খেলে, দেহে অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে পারেনা ফলে খাদ্য সহজপাচ্য হয়ে হজমে সাহায্য করে।

২। বোরহানির টক দইয়ে আছে, উচ্চমানের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, নানান খনিজ লবন, যা আপনার হাড় গঠন ও ক্ষয়পূরণে সাহয্য করবে।

৩। বোরহানি বমি বমি ভাব,ক্ষুদামন্দা ও অরুচি ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে উপযোগী ।

৪। পেটের জন্য এটা খুবই স্বাস্হ্যকর। বিশেষ করে হজমে খুবই উপকারী।

কোরবানি ঈদে বোরহানির তুলনা হয়না। টক দই, বিট লবণ ইত্যাদি নানা এসিড বিরোধী উপাদান দিয়ে তৈরি বলে এটি হজমে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৫। বোরহানি বুকের জালা পোড়া, এসিডিটি ও গ্যাস্টিকের কষ্ট কমায়, শরীর ঠান্ডা রাখে।

৬। বোরহানি খাবারের রুচি বাড়ায়, অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার খেলে শরীরে যে ফ্যাট জমে, বোরহানির টই দই তা জমতে দেয় না।

৭। বোরহানির টক দইতে উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে যা, শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলে এবং আমাদের খাদ্যনালীর হজম ক্ষমতা বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।

৮। বোরহানির দইয়ে আছে ল্যাকটিক এসিড যা ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৯। এটি মানুষের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়ক। বোরহানি, অতিরিক্ত খাবার চাহিদা কমিয়ে, ওজন কমাতে বেশ কার্যকর। ভারী খাবারের পর বোরহানি পান করা হয় বলে, বোরহানি দ্রুত হজম হয়ে যায়।

১০। এটি আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার দরুন আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, এছাড়াও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কিভাবে বোরহানি বানাতে হবেঃ

টক দই, সরিষা গুঁড়া, লবণ, বিট লবণ, পুদিনাপাতা বাটা, কাঁচামরিচ বাটা, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, তেঁতুলের রস বা লেবুর রস, চিনি, এগুলো পরিমান মতো ব্লেন্ডারে মিক্স করলেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর বোরহানি। (চাইলে ইউ টিউবে দেখে নিতে পারেন)

ঈদের বা দাওয়াতের সময় ভারি ও ফ্যাটযুক্ত খাবারের সাথে পানীয় হিসেবে সকলে কোমল পানীয় রাখতেই পছন্দ করেন। এটা নিশ্চয় অজানা নয়, কোমল পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য কোন উপকারই করে না। সেক্ষেত্রে কোমল পানীয়ের পরিবর্তে রাখা চাই টক দইয়ে তৈরি বোরহানি। তাই চলুন ঈদে বা যেকোনো দাওয়াত বা ভারি খাবারের পর, ঘরে বানানো বোরহানি পান করি আর মুহূর্তেই সতেজটা ফিরে পাই।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র ।

Leave a comment