ঈদে বা বিয়ের অনুষ্ঠানে বা একটানা কয়েকদিন অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার পর, আমরা নিজেরাই নিজেদের উপর বিরক্ত হয়ে উঠি, তৈরি হতে থাকে, নিজেদের মধ্যে অপরাধবোধ। তবে এক্ষেত্রে, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে বরং বিশ্রাম করুন। নিজেকে আরাম দিন। যা হবার তা তো হয়েই গেছে। বরং দুশ্চিন্তা করে উল্টো আরও নানান হজমের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কারন, পেটের নানান সমস্যার একটি বিরাট কারন হল মানসিক অশান্তি। এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে, খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনা, যাতে করে আপনি যে বাড়তি গুরুপাক খাবার খেয়ে ফেলেছেন, তা যেন শরিরের কোন ক্ষতির কারন না হতে পারে। ইসবগুলের ভুষি, এক্ষেত্রে হতে পারে আপনার পরম বন্ধু। আজ আমরা এই ইসবগুলের ভুসি নিয়েই আলোচনা করবো।
ইসবগুল একধরনের ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ, যার কিছু পানিতে দ্রবীভূত হয়, কিছু হয় না। খাদ্যনালীর ভেতরে থাকাকালীন অবস্থায়, ইসবগুলের ভুষি প্রচুর পরিমাণ পানি শুঁষে নেয় এবং খাদ্যনালীর দেয়াল পিচ্ছিল করে দেয়। এটি পাকস্থলীর দেয়ালে যেসব বর্জ্য পদার্থ থাকে, তা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, যা অন্যান্য হজমজনিত সমস্যাও দূর করে। ইসবগুল এক ধরনের প্রিবায়োটিক, যা আমাদের খাদ্যনালীতে থাকা ভালো ব্যাক্টেরিয়াকে সাহায্য করে। এই ব্যাক্টেরিয়া আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সহজ এবং মলকে নরম করে। মল ত্যাগের সময় অনেকের ব্যাথা হয় তাও কমিয়ে দেয় ইসবগুল।
এ ভুষি খেলে আমাদের খাদ্যনালীতে একধরনের স্তর তৈরি হয়। যা কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দান করে। ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাই হৃদরোগীদের জন্য দারুণ একটি খাবার এটি। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দেয়, যা থাকলে রক্তনালীতে ব্লকের সৃষ্টি হতে পারে। ইসবগুলের ভুষি একটি হাইপোকোলেস্টেরলেমিক ফুড, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় ও ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। এ ছাড়া এটি রক্তে ট্রাই-গিস্নসারাইডের পরিমাণ কমায়। ফলে হৃদরোগ ঝুঁকি কমে। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ভাবে খাবারের ঠিক পরে ইসবগুল খান।
ইসবগুল খাবারের পর, পাকস্থলীর গায়ে এটি একটি আবারণ সৃষ্টি করে। ফলে এসিড থেকে শরীরে ক্ষতি কম হয়। আর পাকস্থলীর ওই আবরনের জন্য, গ্লুকোজের ভাঙন ও শোষণের গতি ধীর হয়। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে। খাবার পর নিয়মিতভাবে পানির সাথে ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে পান করুন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে।
ইসবগুলের ভুষি আমাদের দেশে সব জায়গাতেই বেশ সহজলভ্য। তবে কেনার আগে কিছু ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত,
. প্যাকেটজাত ইসবগুল কিনুন।
. কখনোই খোলা ইসবগুল কেনা উচিত নয়।
. বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম স্বাদের, ইসবগুলের ভুষি কেনা থেকে বিরত থাকুন।
কতটুকু খাবেন?
প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ করে, দিনে ২/৩ বার খাওয়া যায় এবং অবশ্যই তা পানিতে গুলিয়ে, সাথে সাথেই খেতে হবে, ভিজিয়ে রেখে, পরে খাওয়া যাবে না। এছাড়া সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
কখন খাবেনঃ
ওজন কমানোর জন্য, প্রতিদিন ২/৩ বার, খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে খাওয়া উচিত। এটি খেলে বেশ লম্বা সময় পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয় এবং ফ্যাটি খাবার খাওয়ার ইচ্ছাকে কমায়। ভুষিতে ফাইবার উপস্থিত থাকায়, হজম প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতিতে হয়। তাই ক্ষুধা লাগে অনেক কম। তাই এটি খেলে ওজন কমানো অনেক সহজ হয়ে যায়।
হৃদরোগ ও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য, প্রতিদিন, ২/৩ বেলা, খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই খেতে হবে।
তবে কারো কোন বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো ভুষি খাওয়া উচিত।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
