খাবারে আঁশ বা ফাইবার, কথাটা শুনলে আমরা অনেকেই অবাক হই যে, খাবারে আবার আঁশ বা সুতা আবার কি জিনিস! আসলেই তাই, সুতা বা আঁশ ছাড়া যেমন কোন কাপড় তৈরি হতে পারে না, ঠিক তেমনিভাবে, খাদ্য আঁশ ছাড়া সুস্থ জীবন হতে পারে না। শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমরা কত দামি দামি খাবার, ভিটামিন আরও কত কি খেয়ে থাকি, অথচ আমরা একেবারেই জানি না যে, আঁশযুক্ত খাবারই হতে পারে যেকোনো রোগেরই মহা ওষুধ। চলুন জেনে নেই…।।
কিছু উদ্ভিদজাত খাবার শরীর সরাসরি হজম হয়ে যায়, কিছু আবার শরীর হজম করতে পারে না বা হজম করা সত্ত্বেও শরীরে তা শোষিত হয় না। এরা অপরিপাককৃত অবস্থায় থাকে এবং মল তৈরি করে। এই হজম না হওয়া খাবারগুলিকেই ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার বলা হয়।
এখন হয়তো ভাবছেন যে, হজম যদি না ই হয়, তাহলে এই ফাইবার বা খাদ্য আঁশ কেন খাবো? এই খাদ্যআঁশ পরিপাক না হলেও স্বাস্থ্যরক্ষায় এদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
আঁশ সাধারণত দুই রকমের হয়ে থাকে, যেমন,
১. সল্যুবল ডায়েটারি ফাইবারঃ
এই ধরনের ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার জলে দ্রবণীয়। তা খাদ্যনালীতে দ্রবীভূত হয়ে জেলি জাতীয় জিনিস তৈরি করে, যা মল ত্যাগে সাহায্য করে। ওটস, ওটমিল, বিনস, বার্লি, ইসবগুলের ভুষি, ফল ও সব্জিতে (বিশেষ করে কমলা লেবু, আপেল ও গাজর) প্রচুর পরিমাণ সলিউবল ফাইবার থাকে।
কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে সলিউবল ফাইবার। পেট পরিষ্কার রেখে ওজন কমাতেও সাহায্য করে সলিউবল ফাইবার।
২. ইনসল্যুবল ডায়টারি ফাইবারঃ
এ জাতীয় ফাইবার জলে দ্রবণীয় নয়। আলু, ফুলকপি, বিনস, বাদাম, ফলের বীজ ও খোসায়, হোল হুইট ব্রেড ও ব্রাউন রাইসেও এই ধরনের ফাইবার থাকে। এরা পেট পরিষ্কার রাখে, পাইলস ও কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমায়। ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়াও এই জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল থাকে।
এই ফাইবার বা খাদ্য আঁশ কি করে শরীরে?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের খাদ্যে ডায়টারি ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকে তাদের
. উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
. হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
. ব্লাড সুগার কমে, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে।
. স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
. ব্লাড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ থাকে।
. পিত্তথলির রোগ অনেকাংশে কমায়।
. অ্যাপেন্ডিসাইটিস হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
. স্থূলতা বা ওজন কমায়।
. পেটের যাবতীয় সমস্যা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, এসিডিটি, পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
. এই ধরনের খাবার খাদ্যনালি ও মলাশয়ের ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কোন কোন শারীরিক লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন দেহের ফাইবার বা খাদ্য আঁশ দরকার?
নিচের লক্ষণগুলির যেকোনো একটিও যদি আপনার থেকে থাকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে, আপনার খাদ্যে আঁশের অভাব রয়েছে। এবং আপনি যদি তাৎখনিকভাবে খাদ্য আঁশের পরিমান না বাড়ান, তাহলে অতি শীঘ্রই আপনি কোন জটিল রোগের স্বীকার হতে যাচ্ছেন।
লক্ষণ ১, কোষ্ঠ কাঠিন্যঃ
দেহে ফাইবারের অভাব হয়েছে কিনা দেহ তা সর্ব প্রথম জানান দেয় কোষ্ঠ কাঠিন্যের মাধ্যমে।
লক্ষণ ২- ওজন বৃদ্ধিঃ
খাদ্য তালিকায় সঠিক পরিমাণে ফাইবার না থাকলে ওজন বেড়ে যেতে থাকে।
লক্ষণ ৩- রক্তে সুগার বৃদ্ধি বা ডায়াবেটিস।
লক্ষণ ৪-রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বি বেড়ে যাওয়া।
লক্ষণ ৫- খাওয়ার পর পরই ঘুম পাওয়া।
লক্ষণ ৬- পেটে গ্যাস/ হজম সমস্যা।
ফাইবার বা খাদ্য আঁশ যে আসলেই প্রায় সকল রোগের মহা ওষুধ, তা প্রমান সহ বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
