এক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষ হার্টের অসুখে বা হৃদ রোগে মারা যান। তাই হৃদরোগকে বিশ্বের একনম্বর ঘাতক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই হৃদরোগের প্রধান কারণই হল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকা।
সাধারণত, চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খেলে, অতিরিক্ত চর্বি বা কোলেস্টেরল রক্তনালীর দেওয়ালে জমাট বেঁধে প্লাক তৈরি করে এবং রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দেয়, ওজনকে নিয়ে যায় অস্বাস্থ্যকর মাত্রায়। কমিয়ে দেয় শরীরের স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনের গতি। ফলে, দেখা দেয় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। যেমন হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের নানা রোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, বুক ব্যথা, পেট ব্যথা, ‘গলব্লাডার’এ পাথর সৃষ্টি, ইত্যাদি ।
আমাদের দেহে, সাধারণত দুধরনের কোলেস্টেরল আছে। একটি হল খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL এবং অন্যটি হল ভালো কোলেস্টেরল বা HDL। LDL রক্তনালীর দেওয়ালে ক্ষতিকর প্লাক তৈরিতে সাহায্য করে, তাই একে খারাপ কোলেস্টেরল বলে আর HDL রক্তনালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময়, LDL কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, এজন্য এটা ভালো কোলেস্টেরল নামে পরিচিত। তাই রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কীভাবে কমানো যাবে এই ঝুঁকি?
শাক সবজি এবং ফলমূলে প্রচুর ফাইবার থাকে যা কোলেস্টেরল ও পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে । খাদ্য নালীতে গিয়ে এই আঁশ বা ফাইবার, চর্বিকণাকে বেঁধে ফেলে এবং মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। মানে হল, খাবারের আঁশ পরিপাকনালী থেকে, আমাদের খাবারের কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়, এর ফলে রক্তে কোলেস্টেরলসহ চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। ফাইবার বা আঁশ পরিপাক নালি থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। শুধু তাই নয়, এসব ফাইবার বা আঁশ শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সাহায্য হয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া।
ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালীর রোগ বা অ্যাথেরোসক্লেরোসিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
ফাইবার বা আঁশ হল খারাপ কোলেস্টেরলের যম। তাই খাবারে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ বাড়া মানে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকা। আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণের পর শরীরের কোলেস্টরেল, সেই আঁশের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে আঁশের সঙ্গেই কোলেস্টেরল শরীর থেকে মলের সাথে বেরিয়ে আসে। তাই আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া হলে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
ফলমূল ও শাক সবজীর পাশাপাশি, ইসবগুলের ভুষিতেও প্রচুর ফাইবার বিদ্যমান। আমাদের উচিত হবে, ফলমূল ও শাক সবজির পাশাপাশি ইসবগুলের ভুষিও নিয়মিত খাওয়া। এ ভুষির ফাইবার, আমাদের খাদ্যনালীতে একধরনের স্তর তৈরি করে। যা কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দান করে। ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাই হৃদরোগীদের জন্য দারুণ একটি খাবার এটি। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দেয়, যা থাকলে রক্তনালীতে ব্লকের সৃষ্টি হতে পারে। ইসবগুলের ভুষি একটি হাইপোকোলেস্টেরলেমিক ফুড, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় ও ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। এ ছাড়া এটি রক্তে ট্রাই-গ্লিসারাইডের পরিমাণ কমায়। ফলে হৃদরোগ ঝুঁকি কমে। তাই কোলেস্টেরল কমাতে এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ভাবে ইসবগুল খান।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
