প্রায় সকল রোগের মহা ওষুধ ফাইবার বা খাদ্য আঁশ… (প্রমান সহ ব্যাখ্যা, ৩)…….”পাইলস, কোলন ক্যান্সার, কোষ্ঠ কাঠিন্য, এসিডিটি, এই বি এস সহ পেটের নানাবিধ সমস্যায়, শাক সবজি ও ফলমূলের পাশাপাশি ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। “…..

কোলন ক্যান্সার বা মলাশয়ের ক্যান্সার সারা বিশ্ববাসীর মৃত্যুর তৃতীয়তম কারণ বলে ধরা হয়ে থাকে। আর কোলন ক্যান্সারের অন্যতম কারন হল কোষ্ঠকাঠিন্য। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পাইলসের সৃষ্টি হয়। পাইলস অনেক সময় ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতেও রূপান্তরিত হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আঁশ যুক্ত খাদ্যের অভাবকে। আঁশ জাতীয় খাদ্যের অভাবেই ঘনঘন কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেখা যায়। আঁশ জাতীয় খাবার গুলো পানি শোষণ করে ও পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে করে মলের ওজন ও পরিমাণ বাড়ে। এসব ফাইবার বা আঁশ, মলকে নরম ও পিচ্ছিল করে। ফলে মল সহজে খাদ্যনালীর ভেতর দিয়ে মলদ্বারে বের হয়ে যেতে পারে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়।

কিছু কিছু ভালো ব্যাক্টেরিয়া আছে, যারা আমাদের খাদ্যনালীতে বাস করে এবং যাদের কাজ হচ্ছে, আমাদের খাদ্যনালীকে সুস্থ ও সচল রাখা। যদি কোন কারনে এই ভালো ব্যাক্টেরিয়া গুলো দুর্বল হয়ে পরে, তখনই দেখা দেয়, পেটের নানান অসুখ, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা, বদ হজম, এই বি এস, ক্রোনস ডিজিজ, আলসার, ইত্যাদি। আমরা যদি একটু সচেতন হই, তাহলে খুব সহজেই এই ভালো ব্যাক্টেরিয়া গুলোকে সুস্থ রাখা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ আপনাকে দিতে পারে সেই সুবিধা।

যে কোন জীবের মত ব্যাক্টেরিয়ারও বেঁচে থাকতে এবং কার্যক্ষমতার জন্য প্রয়োজন খাদ্য। সমস্যা হচ্ছে, বেশীরভাগ কার্বো, প্রোটিন এবং ফ্যাট বৃহদান্ত্রে পৌঁছানোর আগেই রক্তে মিশে যায়, ফলে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার জন্য কিছুই থাকে না। এখানেই আসে ফাইবারের প্রয়োজনীয়তা। আমাদের শরীরে ফাইবার হজম করার জন্য কোন এনজাইম নেই, তাই ফাইবার সহজেই বৃহদান্ত্রে পৌঁছাতে পারে। খাদ্যনালীর ব্যাক্টেরিয়ার আছে ফাইবার হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম। এসব ফাইবার খাদ্যনালীর ভাল ব্যাক্টেরিয়ার খাদ্য, যা প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এভাবেই ফাইবার আমাদের খাদ্যনালীর ভাল ব্যাক্টেরিয়ার উৎপাদন বৃদ্ধি করে, ফলে বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

শাক সবজী ও ফলমূলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে খাদ্য আঁশ বা ফাইবার। ফলমূল ও শাক সবজীর পাশাপাশি, ইসবগুলের ভুষিতেও প্রচুর ফাইবার বিদ্যমান। আমাদের উচিত হবে, ফলমূল ও শাক সবজির পাশাপাশি ইসবগুলের ভুষিও নিয়মিত খাওয়া। ইসবগুল পাকস্থলীতে গিয়ে, ফুলে ভেতরের সব বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। খাদ্যেনালীর ভেতরে থাকাকালীন ইসবগুলের ভুসি প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে, খাদ্যনালীর দেয়াল পিচ্ছিল করে দেয়। যেহেতু এটা কার্যকারিতার জন্য খাদ্যনালী থেকে পানি শোষণ করে, তাই দুই চা-চামচ ভুষি, পানিতে গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলা ভালো। দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে এটা বাইরে থেকেই পানি শোষণ করে নেবে, অতএব কার্যকারিতাও কমে যাবে।

ভুষিতে উপস্থিত ফাইবার পাকস্থলীতে একটি স্তর তৈরি করে। যা আমাদের অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং আইবিএস এর সমস্যা সমাধানেও ভালো ফল দেয় ভুষি।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র ।

Leave a comment