খাবারের ট্রান্সফ্যাট হলো ক্ষতিকর চর্বিজাতীয় খাবার। WHO’র ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ এই ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই ট্রান্স ফ্যাট রক্তের ‘ভালো’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ‘খারাপ’ কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনি যত বেশি ট্রান্সফ্যাট খাবেন, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, রক্তনালির অসুখ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও তত বাড়বে।
বেশির ভাগ ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয় শিল্পপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ভেজিটেবল অয়েল বা উদ্ভিজ্জ তেল (পাম, সয়াবিন ইত্যাদি) যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেনেশন করা হলে, তেল তরল অবস্থা থেকে কঠিন আকার ধারণ করে, অর্থাৎ জমে যায়। এই প্রক্রিয়ায় ট্রান্স ফ্যাটও উৎপন্ন হয়। ইন্ডাস্ট্রি তেলকে সুন্দর, ঘন এবং বহুদিন স্বাদ গন্ধ অপরিবর্তীত রাখার উদ্দেশ্যে এর সাথে হাইড্রোজেন গ্যাস মিশায়। কারণ এই প্রসেসে ব্যাপক লাভ হয়, মানুষ কিনেও বেশি। ঘানী ভাঙ্গা তেল মাত্রাতিরিক্ত তরল হয়, বেশী দিন থাকেনা, তাই ইন্ডাস্ট্রী সেটা পছন্দ করেনা। ইন্ডাস্ট্রী বাহির থেকে এক্সট্রা হাইড্রোজেন মিশায়। তারা কিন্তু হাইড্রোজেন মিশিয়ে এটাকে বিষাক্ত করে। এখানে হাইড্রোজেন যেন তেলের বিষাক্ত ফমালিনের মতোই কাজ করে।
ট্রান্সফ্যাট আরও এক ভাবে হয়, সেটা হল বাহিরে দোকানে যখন একই তেলে দিনের পর দিন সিঙ্গারা-সামুচা সহ সব কিছু ভাজা হয়। যেটাকে আমরা পোড়া তেল বলি। তেল বেশী পুড়লে, বাতাসের হাইড্রোজেন এর সাথে বিক্রিয়া করে তা ট্রান্সফ্যাট হয়ে যায়। এ ধরণের তেল দিয়ে কোনো কিছু ভাজলে সেটি মচমচে হয়। জিলাপি, সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, পিয়াজি, বেগুনি, আলুচপ, নানা পদের বিস্কুট, চানাচুর ও চিপসের মতো বেকারি পণ্যে বা পিৎজা, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও ফাস্ট ফুড তৈরিতে এ ধরণের তেল বেশি ব্যবহার করা হয় মচমচে করার জন্য। আমাদের দেশে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই ট্রান্সফ্যাট।
কাজেই বাহিরের ভাজা-পোড়া খাবার খাওয়া যাবেনা। না পারলে, বাসায় বানিয়ে খান।
এক্ষেত্রে তেল কেনার আগে লেবেল চেক করে নিন। কোন কিছু কেনার আগে, আপনি নিজেই খাবারের লেবেল চেক করতে পারেন। খাবারের উপাদান তালিকায় দেখুন, সেখানে ট্রান্সফ্যাট আছে কি না। থাকলে তা যেন ০.৫ গ্রামের চেয়ে কম হয়। কোনো খাবারের লেবেলে যদি ০.৫ গ্রামের চেয়ে কম ট্রান্সফ্যাট থাকে তবে, তাকে শূন্য গ্রাম ট্রান্সফ্যাট হিসেবে ধরা হয়।
ট্রান্স ফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অতিসম্প্রতি WHO প্রকাশিত WHO Report on lobal Trans Fat Elimination ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদরোগে যত মানুষ মারা যায়, তার চার দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্স ফ্যাট।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
………তিনা শুভ্র ।
